ট্র্যাফিক আইন মানছে না কেউ, কিন্তু বিশেষ সময় ও জায়গায় ঠিকই মানা হয়
বিশেষ প্রতিবেদক : পুরো সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্র্যাফিক কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশকে সহযোগিতা করছে রোভারস্কাউট, বিএনসিসি ও রেডক্রিসেন্টের সদস্যরা। কিন্তু সড়কের বিশৃঙ্খলা দূর করতে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে চেষ্টা করা হলেও রাজধানীবাসীকে ট্র্যাফিক আইন মানাতে সফলতা আসেনি। মানুষ বিশৃঙ্খলভাবে রাস্তা পার হয়েছে, উল্টোপথে গাড়ি চালিয়েছে। বিভিন্ন রকম দণ্ড-জরিমানা এবং অনেক গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানোসহ রেকারিং করেও এসব অনিয়ম থামানো যায়নি।
ট্র্যাফিক সপ্তাহ পালন শেষে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ‘সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশের প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতার কোনও ঘাটতি ছিল না। তারপরও আইন না মানার প্রবণতার ফলে সব চেষ্টা বিফলে যাচ্ছে।’
তবে যেই জনগণ বা গাড়িচালকরা ট্র্যাফিক আইন মানছেন না তারাই বলছেন- এই আইন মানার বিষয়ে অন্যরকম দৃশ্য দেখা গেছে কিছু বিশেষ সময় ও জায়গার ক্ষেত্রে। সেই সময়টায় এবং জায়গায় ঠিকই ট্র্যাফিক আইন মানা হয়।
সম্প্রতি খুব ব্যস্ত রাস্তার এক ট্র্যাফিক পুলিশ বিরক্ত হয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, শত বারণ করার পরও কিছু পথচারী গাড়িকে হাত দেখিয়েই রাস্তা পার হয়ে যাচ্ছে আর গাড়িগুলোও লাইন, ল্যান, ইশারা কিছুই মানছে না।
তাৎক্ষণিক এমন দুজন পথচারী ও গাড়িচালককে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলেন, আইন মানাতে হলে আরও কড়া হতে হবে। এমন বহু দেশ আছে যেখানে এই একই মানুষ ঠিকই আইন মানছে। তাছাড়া যখন কোনও ভিআইপি যাতায়াত করেন তখন ওই সময়টায় কেউই রাস্তার এক পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে পারেন না- কেন? কারণ তারা যেতে দেন না বলেই আমরা যেতে পারি না। চালকরাও বললেন একই কথা। আইন মানাতে বাধ্য করলে সবাই মানতে বাধ্য।
এ বিষয়ে আরও পথচারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা শহরের মধ্যে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় যখন সাধারণ মানুষ প্রবেশ করে তখন সেখানে তারা আইন মেনেই চলে। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে সবকিছু নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় চলে। সেখানে যে লেন দিয়ে রিকশা চালাতে বলা হয়েছে সেই লেনেই রিকশা চলে। নির্দিষ্ট যে গতিতে গাড়ি চালাতে বলা হয়েছে ঠিক সেই গতিতেই গাড়ি চলে। প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষেরা যখন অন্য রাস্তায় নিয়ম ভঙ্গ করে চলে, সেখানে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে কিভাবে নিয়ম মেনে চলে?
চাকরিজীবী জব্বার হোসেন প্রতিদিন মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট হয়ে ফার্মগেটে আসেন। তিনি বলেন, ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে আইন মানার কঠোরতা রয়েছে। আইন না মেনে কোনও লোক পার হতে পারবে না। প্রতিটা পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সেটা দিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়। সর্বপরি শুধু আইন থাকলেই হয় না, আইনের প্রয়োগ এবং কঠোরতা থাকলে সবাই আইন মানতে বাধ্য থাকবে। সেটা ক্যান্টনমেন্ট হোক বা তার বাইরের এলাকা হোক।
পথচারী প্রকৌশলী জামিল আহমেদ জানান, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় কোনও কিছু টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা যায় না। কিন্তু ক্যান্টনমেন্টের বাইরে পুলিশ, আনসার এবং ট্র্যাফিক সবাইকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা যায়। যে রাস্তায় রিকশা চালানো যায় না, সে রাস্তায় পাঁচ টাকা আনসারকে দিলে রিকশা দিয়ে যাওয়া যায়। এভাবে অন্য রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব না।
এই ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মীর রেজাউল আলম আরটিভি অনলাইনকে বলেন, অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা এবং যানবাহন এই নিয়মতান্ত্রিক পন্থার অন্তরায়। অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য যে পরিমাণ পুলিশ বাহিনী থাকা দরকার, সেই পরিমাণ পুলিশ ফোর্স নেই। তাছাড়া ক্যান্টনমেন্টে এলাকাটা নিয়ন্ত্রণ এলাকা।
তিনি আরও বলেন, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার সব রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায় না। অনেক পথ সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ রয়েছে। পাবলিক প্লেসের সঙ্গে বিশেষ জায়গার তুলনা করা যায় না। ক্যান্টনমেন্ট এলাকা একটি বিশেষ জায়গা। শত বছরের অভ্যাস বা অনিয়ম এক মাসে পরিবর্তন হবে- এটা আশা করা যায় না। তবে আমরা আশাবাদী সবাই সচেতন হয়ে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। আরটিভি অনলাইন