‘আমার স্ত্রী সুমিকে বাচাঁনো যেতো না ২০১১ বিশ্বকাপ খেললে’
স্পোর্টস ডেস্ক।। আজ বাংলাদেশের ক্রিকেটের উজ্জল নক্ষত্র ও সর্বকালের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার ৩৬তম জন্মদিন। জীবনের ৩৫টি বসন্ত তিনি অতিক্রম করেছেন ইতিমধ্যেই।
নিজের জন্মদিনে এক অনলাইন পোর্টালে দেয়া সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকের করা,’সবচেয়ে কষ্টের সময়?’ এমন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন মাশরাফি বিশদভাবে। মাশরাফি জানালেন তার সবচেয়ে কষ্টের সময় ২০১১ সাল।
তিনি বলেন, ‘দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলতে না পারা। অনেকবার বলেছি এটা নিয়ে। তাছাড়া আনন্দের স্মৃতি যেটি বললাম, মেয়ের জন্ম, সেসময় বড় একটি ট্র্যাজেডিও হতে পারত। আমার স্ত্রী ক্লিনিক্যালি ডেড ছিল প্রায়। সেই কারণেও ওই সময়টা ভোলার নয়।’
তিনি বলেন, ‘তবে ২০১১ সাল আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে শিখেছি। এরপর স্ত্রীর অসুস্থতা। আমার মন ভীষণ খারাপ থাকত বিশ্বকাপ খেলতে না পেরে। বাসায় চুপচাপ বসে থাকতাম। মেজাজ খিটখিটে হয়ে গিয়েছিল বলে কেউ আমার সঙ্গে কথা বলতেও সাহস পেত না সেভাবে। সুমি তখন আবার ভীষণ অসুস্থ। রোদ সহ্য করতে পারত না। প্রায় দেড় মাস এরকম ছিল, বাসায় সবসময় পর্দা টানা থাকত। দিনের বেলাও রাতের মতো করে রাখা হতো।’
ক্যাপ্টেন বলেন, ‘একদিন আম্মা বলল, এত গুমোট পরিবেশে থাকলে এমনিতেই শরীর-মন খারাপ থাকবে। পর্দা সরিয়ে দিলেন। খানিক পরই সুমির শরীর, চোখ, মুখ সব হলুদ হয়ে গেল। ভয়ঙ্কর অবস্থা। আমি তখন বাইরে। আম্মা ফোন করে বললেন, শিগগির সুমিকে হাসপাতালে নিতে হবে। নিয়ে গেলাম সিটি হাসপাতালে। আমার এক দাদি ডাক্তার, ফাতেমা আশরাফ। উনিই দেখতেন সুমিকে।’
মাশরাফি বলেন, ‘সুমির কষ্ট হচ্ছিল অনেক দিন থেকেই। কিন্তু আমার মন এত খারাপ ছিল বিশ্বকাপ খেলতে না পেরে, ওর কষ্টের কথা জানিয়ে আমাকে আরও চাপ দিতে চায়নি। যখন হাসপাতালে নিলাম, তখন অবস্থা অনেক খারাপ। দাদি বলছিলেন, এখন খুব ভালো হাসপাতাল বা দেশের বাইরে নিয়ে গিয়েও খুব লাভ হবে না। বাকিটা আমার ওপর ছেড়ে দিলেন। চারপাশের সবাই পরামর্শ দিচ্ছিলেন অন্য কোথাও নিতে। কিন্তু আমার হুট করে মনে হলো, এখানেই রাখব। দাদি সুমিকে আগে দেখেছেন, ওর শরীরটা খুব ভালো করে জানেন। পারলে তিনিই পারবেন। আর অদ্ভুত একটা ব্যাপার কাজ করছিল আমার ভেতরে, কেবলই মনে হচ্ছিল, এত দ্রুত সুমি চলে যেতে পারে না। ওর এখনও অনেক কিছু পাওয়ার আছে আমার কাছ থেকে, জীবনের কাছ থেকে।’
‘৬ মাস ২৯ দিন বয়সে হুমায়রা পৃথিবীতে এলো। যুদ্ধ করে টিকে গেল। সুমির যমে-মানুষে টানাটানি ছিল ১১ দিন। একসময় ঝুঁকিমুক্ত হলো।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারপর থেকে আমার বদ্ধমূল বিশ্বাস, আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন। আমি যদি বিশ্বকাপ থেকে বাদ না পড়তাম, তাহলে হয়তো সুমি বাঁচত না। খেলা থাকলে ওরা নিশ্চিতভাবেই আমাকে জানাত না, সুমিকে হাসপাতালে নিতে বা অপারেশন করতে দেরি হতো। আর কয়েক ঘণ্টা দেরি হলেই সর্বনাশ হয়ে যেত। ২০১১ সাল তাই আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। সব বাস্তবতা মেনে নিতে শিখেছি।’