“ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললেন, গর্ভস্থীত সন্তান অত্যন্ত বিভৎস, দেখতে অনেকটা অক্টোপাশের মতো”
এক নব-দম্পতি শহরে একটি ফ্ল্যাট কিনে বসবাস শুরু করলো। তাদের মাঝে ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলো না। ইচ্ছে হলেই দু’জন মিলে বেড়াতে যাওয়া। চাঁদনি রাতে একে অন্যের কোলে মাথা রেখে ব্যালকনিতে বসে জোৎস্নার আলো গায়ে মাখা। ফুল- পাখিদের সাথে গল্প করা। সব হতো ওদের মাঝে। সুখের কোনো অন্ত ছিলো না ওদের।
কিন্তু কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও ওদের কোনো সন্তান হলো না। স্ত্রী বেচারি প্রতি রাতেই তাহাজ্জুদের জায়নামাযে বসে সন্তানের প্রত্যাশায় বুক ভাসাতো। কয়েক বছর পর মহান প্রভূ তাদের প্রতি করুণার দৃষ্টি দিলেন। তার গর্ভে সন্তান এলো। তাদের মনে খুশি আর ধরে না। চতুর্থ মাসে
স্বামী-স্ত্রী ইতমিনান হওয়ার আশায় আলট্রাস্নোগ্রাম করানোর জন্য ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হলো।
ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যা বললেন, তা শুনতে স্বামী-স্ত্রী কেহই রাজী ছিলো না। তাদের মাথায় যেনো আসমান ভেঙ্গে পড়লো। ডাক্তার বললেন, গর্ভস্থীত সন্তান অত্যন্ত কুৎসিত ও বিভৎস। দেখতে অনেকটা অক্টোপাশের মতো। সুতরাং যদি স্ত্রীকে বাঁচাতে চান তাহলে জরুরি ভিত্তিতে এই ভ্রুনকে নষ্ট করে দিতে হবে। না হলে তা আরো ভয়ানক পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে। তারা আরো কয়েকজন বড়ো বড়ো ডাক্তারের দরবারে ছুটোছুটি করলেন। ফলাফল বরাবর।
কিন্তু স্ত্রী নিজের সিদ্ধান্তে অটল। সে কোনো ক্রমেই তার গর্ভস্থীত সন্তানকে নষ্ট করতে রাজী নয়। স্বামীর পুনঃপুনঃ চাপাচাপিতে তার অস্বীকৃতি জোড়ালো থেকে জোড়ালো হতে লাগলো।
স্বামী তাকে বোঝালো, দেখো!! যদি তোমার কোনো ক্ষতি নাও হয় তবুও এই বিভৎস ও কদাকার সন্তান দিয়ে আমাদের কী বা উপকার হবে? তাছাড়া তোমার মৃত্যূর আশংকাওতো ফেলে দেয়ার মতো নয়। স্ত্রীর এক কথা। আল্লাহ এই সন্তানকে আমার জন্য পছন্দ করেছেন। সুতরাং আমিও আল্লাহর পছন্দের উপর সন্তুষ্ট। আমার কোনো আক্ষেপ নেই। তাঁর প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। যদি আমার সন্তান কুৎসিত ও হয় আমি তাকে দেখবো। আমি আমার ভ্রুনকে হত্যা করবো না। স্বামী বিরক্ত হয়ে স্ত্রীকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিলো। একেক করে প্রসবের সময়
ঘনিয়ে এলো। নির্দিষ্ট সময়ে ঘটলো এক অদ্ভুত ঘটনা । ডাক্তাররা যে কথা বলেছিলো বাস্তবতা তার সম্পূর্ণ বিপরিত। সন্তানের পিতা সংবাদ পেয়ে খালিপায়ে ছুটতে ছুটতে হাজির হলো হাসপাতালে। শ্বশুর-শ্বাশুরি জামাই বাবুকে দেখে বলতে লাগলেন, মারহাবা!! মারহাবা বাবাজি!! আসুন! আপনার সন্তানদের দেখে যান।
ডাক্তাররা রিপোর্ট করেছিলো , সন্তান অত্যন্ত বিভৎস যা দেখতে অক্টোপাশের মতো, তা আসলে যথার্থ নয়। আপনার চারজন সন্তান হয়েছে।
দু’জন ছেলে দু’জন মেয়ে। কিন্তু তারা মাতৃগর্ভে এমন ভাবে জুড়ে ছিলো যে, তাদেরকে দেখতে একটি শরীরের মতো মনে হয়েছে। যার বহু অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গ। এ সূখ্য রহস্যটি উদ্ঘাটন করতে আল্ট্রাস্নোগ্রাম-মেশিন অক্ষম হয়ে পড়েছে। (সুবহানআল্লাহ)
আপুরা!! আপনারা নিশ্চয় খেয়াল করেছেন যে, ডাক্তারগন যখন এই দুঃসংবাদ তাদের শোনাচ্ছিলো তখনো স্ত্রী ছিলো আল্লাহর ফায়সালার ব্যাপারে পূর্ণ সন্তুষ্ট ও স্থির। আল্লাহর ফায়সালার কাছেই সে নিজেকে ছেড়ে দিয়েছে। খুশি মনে মেনে নিয়েছে নিজের তাকদীরকে। হয়তো একারণেই আল্লাহ তার জন্য খায়েরের ফায়সালা করেছেন। আপুরা! আমরা তো সামান্য হেরফের দেখলেই ভেঙ্গেপড়ি। অধৈর্য্য হয়ে যাই। যাচ্ছে তাই মন্তব্য করতে শুরু করি। আমরা কখনো অজান্তে এমন মন্তব্যও করে বসি যা আমাদের ঈমানের পারদকে নিঃশেষ করে দেয়।
ও আপু! আল্লাহ কখনো তার বান্দাদের জন্য অমঙ্গলের ফায়সালা করেন না। যা করেন তা-ই মঙ্গল। একারণে আল্লাহর ফায়সালাকেই গ্রহণ করো খুশি মনে। সন্তুষ্ট চিত্তে। তাছাড়া অধৈর্য্য হলেই কি আমরা পরিবর্তন করতে পারবো আল্লাহর ফায়সালাকে?? আল্লাহ আমাদের সকলকে আল্লাহর ফায়সালাকে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়ার তৌফিক দান করুন।। আমীন।