ইয়েমেনে শিশু হত্যা ও যুদ্ধ-অপরাধে ইঙ্গ-মার্কিন ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর দায়
মানবাধিকারের দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও ইয়েমেনে আগ্রাসনে জড়িত সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের কাছে অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা সরকার।
ইয়েমেনের ওপর সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের নির্বিচার বিমান হামলাসহ সর্বাত্মক আগ্রাসন শুরু হয় ২০১৫ সালের মার্চ মাসে। মার্কিন সরকারসহ বহু পশ্চিমা দেশ এবং ইহুদিবাদী ইসরাইল সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে আগ্রাসী সরকারগুলোকে।
তাই বিশ্ব-জনমতের নিন্দা ও প্রতিবাদ সত্ত্বেও ইয়েমেনের ওপর আগ্রাসন অব্যাহত রাখতে পেরেছে পশ্চিমা মদদপুষ্ট সৌদি জোট।
আসলে ইয়েমেনের ওপর এই আগ্রাসন হয়ে উঠেছে সৌদি ও আরব আমিরাত সরকারের কাছে পশ্চিমা সরকারগুলোর অস্ত্র বিক্রি এবং অর্থনীতি ও বাণিজ্য চাঙ্গা করার এক মস্ত বড় লোভনীয় মাধ্যম।
তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইয়েমেনের দরিদ্র জনগণ ও বিপ্লবী সরকার প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তবে আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য সৌদি জোটের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) এমনই একটি উদ্যোগ নিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। ওই পার্লামেন্ট এক প্রস্তাবে ইয়েমেনে যুদ্ধ অব্যাহত থাকার এবং সেখানে বেসামরিক জনগণ সম্পর্কিত আইন লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর নিন্দা জানিয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ইয়েমেনের ওপর অবরোধ বা নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেয়ার এবং সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের কাছে অস্ত্র বিক্রিও বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে। ইউরোপের এই সংস্থা শিগগিরই ইয়েমেনে যুদ্ধ বন্ধ করার দাবি জানানোর পাশাপাশি আরব আমিরাতের কাছে অস্ত্র ও গোলা-বারুদ এবং ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত প্রযুক্তি বিক্রি বন্ধ করারও ডাক দিয়েছে।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি সরকারকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র দিচ্ছে ব্রিটেন। ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন শুরুর প্রথম দুই বছরে লন্ডন রিয়াদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করেছে চার হাজার ৬০ কোটি পাউন্ড মূল্যের। সৌদি সরকার ইয়েমেনে যুদ্ধ অপরাধে জড়িত বলে বহু অকাট্য প্রমাণ দেখার পরও লন্ডন রিয়াদের কাছে অস্ত্র বিক্রি কমায়নি বরং বাড়িয়ে দিয়েছে।
ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি কোরবিন বলেছেন, ইয়েমেনের জনগণের দুর্ভোগ ও কষ্ট কমানোর জন্য সৌদি আরবকে অস্ত্রে সজ্জিত করার কাজ লন্ডনকে বন্ধ করতে হবে।
সম্প্রতি জার্মানিও সৌদি আরবের কাছে কিছু অত্যাধুনিক কামান বিক্রি করেছে। স্পেনও ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালে সৌদি আরবের কাছে বিক্রি করেছে প্রায় একশ কোটি ইউরো মূল্যের অস্ত্র। এ ছাড়াও রিয়াদের কাছে আরও ১২৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরো মূল্যের অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্পেন। ইতালিও সৌদি আরবের কাছে বোমা বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। আর সৌদি বিমান এসব বোমা নিক্ষেপ করছে ইয়েমেনের বেসামরিক ও মজলুম জনগণের ওপর।
ইয়েমেনে নানা ধরনের ক্রমবর্ধমান মানবিক বিপর্যয় এবং এসব বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হুঁশিয়ারির পরও পশ্চিমা সরকারগুলো আগ্রাসী সৌদি জোটকে অস্ত্রসহ সব ধরনের সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে।এর কারণ সৌদি সরকার পাশ্চাত্যকে আর্থিক সুবিধা ছাড়াও নানা ধরনের রাজনৈতিক সেবাও দিয়ে যাচ্ছে। তাই বারবার ভ্যালিসহ অনেক পশ্চিমা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞও মনে করেন ইয়েমেনে যুদ্ধ-অপরাধসহ নানা ধরনের মানবতা-বিরোধী অপরাধের জন্য মূলত ব্রিটেন ও মার্কিন সরকারই দায়ী।
ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনে নিহত হয়েছে বিশ হাজারেরও বেশি মানুষ।দেশটিতে প্রতি সপ্তাহে কলেরায় আক্রান্ত হচ্ছে দশ হাজার মানুষ।