বৃহস্পতিবার, ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ১২ই আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

চাকরিরত অবস্থায় মারা গেলে পরিশোধ করতে হবে না ঋণ

চাকরিরত অবস্থায় কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মৃত্যু হলে, গৃহনির্মাণ ও মেরামত ঋণ পরিশোধ করতে হবে না। পাশাপাশি অক্ষম (মানসিক প্রতিবন্ধী বা পঙ্গু) অবস্থায় ঋণ গ্রহীতা অবসরে গেলে তাকেও ঋণ ও সুদের টাকা দিতে হবে না। এমন কি তাদের পরিবারের কাছ থেকেও এ টাকা আদায় করা হবে না। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করে সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম ও গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা। ইতোমধ্যে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ির সুদমুক্ত ঋণের ক্ষেত্রে চাকরিরত অবস্থায় মারা হলে সেই টাকা পরিশোধ করতে হবে না। এ সুবিধা দিয়ে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে। এখন গৃহনির্মাণ ও মেরামত ঋণের ক্ষেত্রে একই সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

বিধান অনুযায়ী, মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেনশন বা গ্র্যাচুয়িটি থেকে ঋণ ও সুদ কেটে রাখার শর্ত রয়েছে। এ শর্তের পাশাপাশি এখন মওকুফ করার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

গৃহনির্মাণ ও মেরামত, মোটরসাইকেল ও কম্পিউটার কেনার ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সংশোধিত (প্রস্তাবিত) নীতিমালায় বলা হয়, উপরোক্ত (ক) ও (খ) এ যা কিছুই থাকুক না কেন, মৃত কর্মকর্তার উত্তরাধিকারী অথবা অক্ষম হয়ে অবসরগ্রহণকারী দুর্দশাগ্রস্ত কর্মকর্তা বা তার প্রতিনিধি যৌক্তিক অর্থনৈতিক কারণে সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিমের অপরিশোধিত অর্থ (আসল ও সুদ) মওকুফের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন এবং তার আবেদনটি অর্থ বিভাগ কর্তৃক গঠিত ‘অগ্রিমের আসল ও সুদ মওকুফ’ সংক্রান্ত কমিটিতে প্রেরণ করা হবে এবং ওই কমিটি মওকুফের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

বিদ্যমান নীতিমালায় বলা আছে, কোনো চাকরিজীবী কর্মকর্তা অবসর নেয়ার আগে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার গ্র্যাচুয়িটি থেকে এককালীন আদায় করা হবে। এভাবে আদায়ের পর ঋণের অর্থ পাওনা থাকলে ওই কর্মকর্তার পেনশন থেকে কাটা হবে।

আবার পেনশন থেকেও কাটার পর ঋণের অর্থ বকেয়া থাকলে বন্ধকী গাড়ি বিক্রি করে ঋণ সমন্বয় করা হবে। সেখানে আরো বলা হয়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তার নিজস্ব সঞ্চয় থেকে পাওনা ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন। সর্বশেষ বলা হয়, দফা (ক) (খ) ও (গ)-এর মাধ্যমে আদায়ের পরও অগ্রিম অপরিশোধিত থাকলে অগ্রিম গ্রহীতার উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে সরকারি দাবি আদায় আইনের বিধান অনুযায়ী সরকারি পাওনা হিসাবে আদায়যোগ্য হবে।

সূত্র মতে, সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘অগ্রিমের আসল ও সুদ মওকুফ’ সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক। ওই বৈঠকে এ সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

গাড়ির ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সম্প্রতি নীতিমালা সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়, সুদ ও আসল মওকুফের জন্য অর্থ বিভাগ কর্তৃক গঠিত ‘অগ্রিমের আসল ও সুদ মওকুফ’সংক্রান্ত কমিটিতে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। ওই কমিটি মওকুফের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক রনজিদ চন্দ্র সরকার গাড়ির সুদমুক্ত ঋণ ২৫ লাখ টাকা নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সরকার তার কাছে ঋণের বকেয়া পায় ২৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বকেয়া মওকুফের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করে। বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ওই নির্দেশ বলে অর্থ মন্ত্রণালয় গঠিত অগ্রিমের আসল ও সুদ মওকুফ কমিটির বৈঠকে তা মওকুফের প্রস্তাব করা হয়।

পাশাপাশি গৃহনির্মাণ ও সংস্কার বা মেরামত, মোটরসাইকেল ও কম্পিউটার ঋণের ক্ষেত্রে একই মওকুফ সুবিধা দেয়ার জন্য কমিটি প্রস্তাব করেছে। অর্থমন্ত্রী এ প্রস্তাব অনুমোদন করলে নীতিমালা সংশোধন করে এ সুবিধা দেয়া হবে।