শুক্রবার, ১৯শে অক্টোবর, ২০১৮ ইং ৪ঠা কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

‘বিএনপি কি ভোটে যাবে’?

প্রতিষ্ঠার চল্লিশ বছরের মধ্যে রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিকভাবে বর্তমানে সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ সময় অতিক্রম করছে বিএনপি। দলটি এখন কি করবে ঠিক করে উঠতে পারছে না। দলীয় চেয়ারপারসন কারাগারে, ‘ভবিষ্যৎ কান্ডারি’ তারেক রহমান দেশান্তরে। দলের অন্য শীর্ষ নেতাদের মধ্য আছে আস্থা-বিশ্বাসের সংকট। আন্দোলন, না নির্বাচন – তা নিয়ে দলের মধ্যে আছে মতপার্থক্য। কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে দুপায়ে খাড়া। কেউ আবার খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করে নির্বাচনে যেতে নারাজ। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান হচ্ছেন বিএনপির শক্তি ও ঐক্যের প্রতীক। অথচ বিএনপির এই খুঁটি দুটি এখন নড়বড়ে অবস্থায় আছে। বেগম জিয়ার কারামুক্তি অনিশ্চিত। শরীরও খুব সচল নেই। বিএনপি নেতারাই বলছেন তিনি হাটাচলা করতে পারছেন না স্বভাবিকভাবে। তারেক রহমান কবে দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবেন, সেটা আল্লাহ ছাড়া বান্দাদের পক্ষে বলা মুশকিল। ডিসেম্বর মাসের শেষে দেশে নির্বাচন হলে বিএনপির পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালাবেন কারা?

বিষয়টি কি এমন হবে যে ঐশী শক্তিবলে রাজনীতির গতিপ্রকৃতি বিএনপির নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে?

আমাদের দেশে একটি কৃত্রিম রাজনৈতিক প্রচারণা চালানো হয় যে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি জিতবে। এই প্রচারণার কোনো বিশ্বাসযোগ্য ভিত্তি নেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিএনপি আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারেনি। সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগই আধিপত্য দেখালো। বলা হতে পারে, এসব নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম-কারচুপি করে সরকারি দলের প্রার্থীদের জেতানো হয়েছে। এই অভিযোগ সত্য হলে তার বিরুদ্ধে বিএনপি আন্দোলনের ডাক দিল না কেন?  মানুষই বা এমন নির্বাচন মেনে নিল কেন? সরকারের ভয়ে? জুলুম-নির্যাতনের ভয়ে? তাহলে প্রশ্ন আসে, সংসদ নির্বাচনে ভিন্নচিত্র দেখা যাবে কোন জাদুবলে? এখন রাজনীতিতে মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হলো, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা আগামী দুতিন মাসে বদলানোর কোনো আশা বা আশঙ্কা আছে কি? সরকার কি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিএনপির দাবি মেনে নেবে?

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য সরকার বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেবে না বা কোনো ধরনের ছাড় দেবে না। বিএনপি নির্বাচনে না এলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে যে প্রচারণা চালানো হয় তাও এক ধরনের চাতুরি ছাড়া কিছু নয়। দুনিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িকতা এখন দুনিয়াব্যাপী রাজনীতির প্রাইম ইস্যু। বিএনপি এই ইস্যুতে অনেকের কাছেই অনির্ভরযোগ্য মিত্র। জামায়াতের মতো সন্ত্রাসী দলকে সঙ্গে নিয়ে সুশাসনের বুলি কপচিয়ে ভবি ভোলানো যাবে না। নির্বাচনী গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা বা কৌমার্য নিয়ে এখন কোনো দেশ তেমন মাথা ঘামায় না। পৃথিবী এখন আদর্শ নিয়ন্ত্রিত নয়, স্বার্থ নিয়ন্ত্রিত। ফলে গণতন্ত্র এখন কোনো দেশে ফুলের বাগান নয়, বারান্দার  টবমাত্র।
অথচ বিএনপি এখন বিদেশিদের কাছে ঘন ঘন ধরনা দিচ্ছে, নালিশ জানাচ্ছে। বিদেশিরা যে বাংলাদেশের নির্বাচন বা সরকার ব্যবস্থায় বড় কোনো বদল ঘটাতে পারবে না, বাংলাদেশ যে এখন কোনো দেশের হুকুমবরদার নয়, এটা বিএনপি বুঝতে পারছে না। বিএনপি এক সময় ভারতবিরোধিতাকে রাজনীতির প্রধান উপজীব্য করেছিল, সুফলও পেয়েছিল। এখন তারা বুঝেছে ভারতবিরোধিতা বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতির ভরকেন্দ্র নেই। তারা এখন ভারতমুখি। কিন্তু ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য বিএনপিকে অপেক্ষা করতে হবে। তারা যে সত্যি বদলেছে তার প্রমাণ দিতে হবে।

বিদেশিরা বিএনপির কাছে স্পষ্ট করে যেটা জানতে চায় সেটা হলো তারা নির্বাচনে যাবে কি না?

এই প্রশ্নের এক কথায় জবাব দিতে বিএনপি যতদিন গড়িমসি করবে, ততদিন বিএনপিকে বিদেশিদের কাছে হাজিরা অব্যাহত রেখে আমরা তো নির্বাচনে যেতে চাই, তবে –, কিন্তু –,পরিবেশ ইত্যাদি ধরনের প্রভৃতি বলতে হবে আর ততদিনে নির্বাচনী ট্রেন স্টেশন ছাড়ার শেষ হুইশেল বাজিয়ে দেবে।

এটা ঠিক যে দেশে বিএনপির সমর্থক গোষ্ঠী হয়তো কম নয়। তবে এই সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসার মতো সাংগঠনিক সক্ষমতা বিএনপি নামক দলটির নেই। সেক্ষত্রে এগিয়ে আছে সরকার তথা আওয়ামী লীগ। ভোটযুদ্ধ আওয়ামী লীগ এগিয়ে আছে, সেটা যারা বুঝতে চান না তারা বাংলাদেশের রাজনীতির পরিবর্তনের হাওয়াই বুঝতে পারছেন না।

বিএনপি ক্ষমতার বাইরে আছে দশ বছর ধরে। আগামী নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায়  যেতে তারা আগ্রহী হলে কোনো রকমের তবে কিন্তু না করে নির্বাচনী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এখনই। সময় বিএনপিকে পেছনে ফেলে সামনে এগুতে শুরু করেছে।

লেখক: গ্রুপ যুগ্ন-সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়