মানুষের অধঃপতন হয় যেভাবে
শয়তান মানুষের আজন্ম শত্রু। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে তাকে চিনে এবং তার স্বীকৃতি দেয়। শয়তানকে সবাই শয়তান হিসেবে মানে। আজ পর্যন্ত এমন কোনো লোক পাওয়া যায়নি; যে শয়তানকে ভাল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তদুপরি মানব সম্প্রদায় জেনে বা না জেনে শয়তানের বসংবদে পরিণত হয়।
শয়তানের উপস্থিতি মেনে নিলেও শয়তানের অবয়ব, আয়তন-আকার-আকৃতি আর বর্ণিল রূপ মানুষের অধরাই থেকে যায়। সকল ধর্ম শয়তান এবং তার শয়তানি সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করেছে। সর্বশেষ, দ্বীন-ইসলাম মানুষকে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ, বাস্তব ও সর্বক্ষণের জন্য গাইড লাইন উপহার দিয়েছে। মানুষের জন্য এক মহা অনুগ্রহ যে, মানুষেরই ¯্রষ্টা আল্লাহ শয়তানের শয়তানি থেকে বেঁচে থাকার যাবতীয় মন্ত্র দান করেছেন।
আল্লাহর রাসুল সা. যা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। সুতরাং তাবৎ কল্যাণের স্বার্থে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শয়তানি হতে মুক্ত থাকা অপরিহার্য এবং ইসলামই তার জন্য একমাত্র বাস্তবসম্মত জীবন বিধান। যুগে-যুগে মনীষীগণ সে ব্যাপারে বিস্তর আলোচনা করেছেন। চেষ্ঠা করেছেন শয়তানকে মানুষের বোধগম্যের মধ্যে নিয়ে আসতে। বিভিন্ন ঘটনা-উদাহরণের সাহায্যে শয়তানকে মূর্তিমান করার চেষ্টা করেছেন। সকল ধর্ম শয়তানকে মানুষের প্রধান এবং মূল শত্রু হিসেবে বর্ণনা করেছে। শয়তানের উদাহরণ শয়তানই। তাকে চিনে নেয়ার জন্য দ্বিতীয় কোনো উদাহরণ নেই।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় শয়তান তোমাদের দুশমন সুতরাং তাকে দুশমন হিসেবেই গ্রহণ কর।’ (সুরা ফাতির : ৬)
শয়তান পূর্বে সবচেয়ে বড় আবেদ ছিল। উর্ধাকাশে ফেরেস্তাদের মাঝে আবেদ হিসেবে তার পরিচিতি ছিল ব্যাপক। মহান আল্লাহ আলিমুল গাইব (অদৃশ্যের যাবতীয় খবর সম্পর্কে অবগত)। তিনি এই আজাজিলের পরীক্ষার আয়োজন করেন এবং বড় এক পরিকল্পণার আওতায় মাটির আদমকে নির্মাণ শুরু করেন। ফেরেস্তাগণের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। শয়তান তার ইবাদতের ঘোরে অহংকারের পথে পা বাড়ায়; যা তার পদস্খলনের প্রধান ও মূল কারণ। অহংকার তার অতীতের সমস্ত নেক আমলকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। তাকে আজীবনের ফেরারি করে ছাড়ে। ‘মহা আবেদ’ আজাজিল চিরদিনের জন্য অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হয়।
আশরাফুল মাখলুকাত মানুষও বুঝে উঠতে পারে না, কখন সে অহংকারী হয়ে যায় আর এটাই শয়তানের বড় সুযোগ। বড়-বড় জ্ঞানী, ইসলামি চিন্তাবিদ, পীর-বুজুর্গ, ওলামা-মাশায়েখ এবং সর্বনিম্ন পর্যায়ে শয়তান তার এই কৌশল প্রয়োগ করে।
ইসলামি চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরাম মনে করেন, আমরা তো তাকে চিনি এবং তাকে বয়কট করার মন্ত্রও আমাদের জানা আছে। সুক্ষ্ম অথচ মহা এই ছিদ্র দিয়েই শয়তান তাদের বন্দি করে। তখন মনে হতে থাকে, আমিই সঠিক এবং একমাত্র আমিই হক পথে আছি। এভাবেই অহংকারের চাদরে মুড়িয়ে ফেলা হয় ইলমকে। অহংকারের চশমায় সবকিছু রঙ্গিন দেখায়। আল্লাহর রহমত ছাড়া এ থেকে পরিত্রাণ কিছুতেই সম্ভব নয় এবং খুব কম লোকই তা পায়। ওলামা হজরতের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের পরও বলা যায়; এটাই হয়তো যাবতীয় সমস্যার মূল কারণ।