রবিবার, ৭ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২২শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যেসব মুসলিম

ইসলাম ডেস্ক : নোবেল পুরস্কার হচ্ছে আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। নোবেল পুরস্কার সর্বপ্রথম প্র্রবর্তিত হয় ১৯০১ সালে। পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে সফল ও অনন্যসাধারণ গবেষণা, উদ্ভাবন এবং মানবকল্যাণে দৃষ্টান্তমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ওই বছর থেকে ধারাবাহিক এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। সর্বোচ্চ এ পুরস্কারের সুদীর্ঘ ইতিহাসে মোট ১২ জন মুসলিম ব্যক্তিত্ব নোবেলের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের ব্যাপারে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

মুহাম্মদ আনওয়ার সাদাত (১৯৭৮ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন)
মিশরের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি আনওয়ার সাদাত ছিলেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রথম মুসলমান। ১৯৭৩ সালে মিশরের সিনাই উপদ্বীপ উদ্ধারের জন্য ইয়ম কিপুর যুদ্ধে তিনি মিশরের নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৭ সালে ছয়দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল তা দখল করে নিয়েছিল। এরপর তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় বসেন এবং মিশর-ইসরায়েল শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির কারণে আনোয়ার সাদাত ও ইজরাইলের প্রধানমন্ত্রী মেনাখেম বেগিম ১৯৭৮ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।

মুহাম্মদ আবদুস সালাম (১৯৭৯ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন)
প্রফেসর মুহাম্মদ আবদুস সালাম। তিনি পাকিস্তানী তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী। ১৯৭৯ সালে স্টিভেন ওয়াইনবার্গ ও শেল্ডন লি গ্ল্যাশোর সঙ্গে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। দুর্বল তড়িৎ তত্ত্ব আবিষ্কারের জন্য তারা এ পুরস্কার পেয়েছিলেন। এ তত্ত্বের মাধ্যমে তড়িৎ চৌম্বক বল এবং দুর্বল নিউক্লীয় বলকে একীভূত করা সম্ভব হয়েছিল।

নাজিব মাহফুজ (১৯৮৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন)
নাজিব মাহফুজ নোবেল বিজয়ী মিশরীয় সাহিত্যিক। ১৭ বছর বয়স থেকে নাজিব মাহফুজ লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘আবাসুল আকদার’ প্রকাশিত হয়। জীবনে মোট ৩০টি উপন্যাস লিখেলও ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে প্রকাশিত ‘কায়রো ট্রিলজি’ তাকে আরবি সাহিত্যের অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরে। এতে তিনি ইংরেজ শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার সময়কালীন মিশরের ঐতিহ্যবাহী শহুরে জীবনধারা নিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলেন। উচ্চ মার্গীয় এ উপন্যাসের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৮৮ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। উপন্যাসের পাশাপাশি ১০০ টিরও বেশি ছোটগল্প রচনা করেছেন। অধিকাংশগুলো ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে।

ইয়াসির আরাফাত (১৯৯৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন)
তার পুরো নাম মুহাম্মদ আবদেল রহমান আব্দেল রউফ আরাফাত আল-কুদওয়া আল-হুসাইনি। প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ নাম ইয়াসির আরাফাত। তিনি ছিলেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী একজন নেতা।

১৯৯৪ সালে ঐতিহাসিক অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের পর আইজাক রবিন, শিমন পেরেজ ও ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার লাভকারী প্রথম ফিলিস্তিনি মুসলমান তিনি।

আহমদ জুয়েল হাসান (১৯৯৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন)
ফেমটোসেকেন্ড স্পেকট্রোস্কোপি ব্যবহার করে মাইক্রোস্কোপি আবিষ্কারের জন্য রাসায়নিক ক্ষেত্রে গবেষণা করে ১৯৯৯ সালে তিনি রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি প্রথম মুসলিম রসায়নবিদ ও দ্বিতীয় মুসলিম বিজ্ঞানি হিসেবে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করেন।

শিরিন এবাদি (২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন)
তিনি প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে শান্তিতে নোবেল লাভ করেন। এছাড়াও তিনি প্রথম ও একমাত্র ইরানী যাকে শান্তির জন্য এ সম্মান দেওয়া হয়।

শিরিন এবাদি ব্যক্তিগতভাবে আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় অবদান রাখার জন্য তিনি এ পুরস্কার লাভ করেন।

মুহাম্মদ আল-বারাদেয়ি (২০০৫ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন)
মুহাম্মদ আল-বারাদেয়ি মিশরের উপরাষ্ট্রপতি এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এর ডিরেক্টর জেনারেল ছিলেন। তিনি দ্বিতীয় মিশরীয়, যাকে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।

পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারে প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৫ সালে তিনি ও আইএইএ শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনুস (২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন)
ড. মুহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি একমাত্র ও প্রথম বাঙালি মুসলিম, যাকে শান্তির জন্য এ সম্মান দেওয়া হয়। আরেকটু ফারাক করে বললে, তিনি একমাত্র ও প্রথম বাংলাদেশি এবং নোবেল পুরস্কার বিজয়ী তৃতীয় বাঙালি।

ওরহান পামুক (২০০৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন)
ওরহান পামুক একজন তুর্কি ঔপন্যাসিক, চিত্রনাট্য সম্পাদক ও শিক্ষক। ২০০৬ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হন। তুরস্কের অন্যতম প্রধান লেখক ওরহানের বই বিশ্বের ৬০টিরও অধিক ভাষায় ও ১০০টিরও বেশি দেশে এবং ১৪ মিলিয়নের বেশি বিক্রি হয়েছে। ফলশ্রুতিতে তিনি তুরস্কের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ কথাসাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতি ও স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার সর্বাধিক প্রসিদ্ধ উপন্যাস হচ্ছে ‘নিউ লাইফ’।

তাওয়াক্কুল কারমান (২০১১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন)
তাওয়াক্কুল কারমান একজন ইয়েমেনি সাংবাদিক ও ইয়েমেনের আল-ইসলাহ রাজনৈতিক দলের প্রবীণ সদস্য। একজন মানবাধিকারকর্মী হিসেবেও কারমান দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তিনি ‘উইমেন জার্নালিস্ট উইথআউট চেইন্স’ নামক নারী সাংবাদিকদের একটি দলকে নেতৃত্ব দেন। ২০০৫ সালে তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি ২০১১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেন। তিনিই প্রথম ইয়েমেনীয় ও প্রথম আরবি নারী হিসেবে এ পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি দ্বিতীয় মুসলিম নারী ও দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে নোবেল শান্তি পদক লাভ করেন।

মালালা ইউসুফ জাই (২০১৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন)
মালালা একজন পাকিস্তানি শিক্ষা আন্দোলনকর্মী। তিনি সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সোয়াত উপত্যকা অঞ্চলে শিক্ষা এবং নারী অধিকারের ওপর আন্দোলনের জন্য তিনি পরিচিত।

আজিজ সানজার (২০১৫ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন)
আজিজ সানজার তুরষ্ক বংশোদ্ভুত একজন আমেরিকান প্রাণরসায়নবিদ এবং কোষ বৈজ্ঞানিক। ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ পুনর্রুৎপাদন সংক্রান্ত গবেষনার জন্য ২০১৫ সালে থমাস লিন্ডাল ও পল মড্রিকের সঙ্গে যৌথভাবে রসায়নে তিনি নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।

তিনি প্রথম তুর্কী রসায়নবিদ এবং দ্বিতীয় তুর্কি ও তৃতীয় মুসলিম বিজ্ঞানি হিসেবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।বাংলানিউজ