দুপুরে চীন থেকে ফিরে রাতে কাটলেন স্বামীর গলা
দীর্ঘদিন প্রেমের পর চার বছর আগে গোপনে বিয়ে করেন মো. মাঈনুদ্দিন ওরফে শাহরিয়ার শুভ (২৯) ও রোকসানা আক্তার পপি (২৩)। পরে ডাক্তারি পড়তে চীনে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) দেশে ফেরেন পপি। বিকেলে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে ওঠেন ফয়স লেকের লেকভিউ আবাসিক মোটেলে। মধ্যরাতে মোটেলের ২০৩ নম্বর কক্ষে মেলে স্বামী শুভর গলাকাটা মরদেহ।
পুলিশ বলছে, তারা প্রায় নিশ্চিত চীন ফেরত নিহতের স্ত্রী পপিই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। শুক্রবার (১৭ আগস্ট) ভোরে খুলশী থানা পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন স্ত্রী রোকসানা আক্তার (পপি)।
নিহত মাঈনুদ্দিন ওরফে শুভ ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর বালিরচর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। অন্যদিকে, আটক রোকসানা মিরসরাই উপজেলার বারৈয়ারহাট মেহেদী নগর গ্রামের আবু আহম্মদের মেয়ে। চীনের একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টার্ন চিকিৎসক তিনি।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বায়েজিদ বোস্তামি জোন) সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘পপির সাথে চার বছর আগে মাঈনুদ্দিনের গোপনে বিয়ে হয়। পরে মেয়েটি ডাক্তারি পড়ার জন্য চীনে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে পপি জানিয়েছেন, দুই বছর ধরে তাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। চীনে যাওয়ার পর থেকে তার নানা অশ্লীল ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন মাঈনুদ্দিন। এর জের ধরে পপি দেশে ফিরে একাই মাঈনুদ্দিনকে জবাই করে হত্যা করেছেন।’
খুলশী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নোমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মোটেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খবর পেয়ে ‘লেক ভিউ মোটেল’-এর দ্বিতীয় তলার ২০৩ নম্বর কক্ষ থেকে এক যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের মাথা শরীর থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবার ও মোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি, গত ১৬ আগস্ট বিকেলে নিহত মাঈনুদ্দিন তার স্ত্রী রোকসানা আক্তার পপিকে নিয়ে মোটেলে ওঠেন। গতকাল মধ্যরাতে মোটেল কর্তৃপক্ষ ওই রুমে কেউ আছে কি না, তা যাচাই করতে গিয়ে মাঈনুদ্দিনের গলাকাটা মরদেহ দেখতে পায়। ’
নিহত শুভর বড় ভাই মো. জাফর সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটি মেয়ের সঙ্গে আমার ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটি গতকাল বিকেলে চীন থেকে দেশে এসেছে এবং আমার ভাই তাকে ঢাকা বিমানবন্দরে রিসিভ করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে। ওই মেয়ে আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে গলা কেটে হত্যা করেছে। তার শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে।’
এদিকে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কের পর গত চার বছর আগে শুভ ও পপি গোপনে বিয়ে করেন। বিয়ের পরপরই পপি ডাক্তারি পড়তে চীন চলে যান। চীনে অবস্থানের সময় বিভিন্ন কারণে পপির সঙ্গে শুভর সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। আবার এরই মধ্যে মিরসরাই এলাকায় অপর এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন পপি। এ নিয়ে পপির সঙ্গে শুভর বিরোধ চূড়ান্ত রূপ নেয়। এ নিয়ে শুভ বেশ কয়েকবার পপির ওই ‘কথিত’ প্রেমিককে খুঁজে বের করতে মিরসরাইতে যান। পরে তার চাপে পপি বৃহস্পতিবার দেশে আসতে বাধ্য হন।
সূত্রটি আরও জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে পপি ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে শাহরিয়ার তার এক বন্ধুকে নিয়ে প্রাইভেটকারযোগে ঢাকায় যান। পরে বন্ধুকে প্রাইভেটকারসহ ছেড়ে দিয়ে শুভ পপিকে নিয়ে আলাদাভাবে বাসে করে চট্টগ্রাম ফেরেন। পরে বিকেলে তারা ফয়স লেকের লেকভিউ মোটেলে ওঠেন।