বৃষ্টি বাধা হতে পারেনি রাজশাহীতে নির্বাচনী প্রচারনায়
পাপন সরকার শুভ্র, রাজশাহী : শেষ মুহুর্তে বৃষ্টি বাধা হতে পারেনি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী প্রচারনায়। গতরাত থেকে শুরু হওয়া গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি বিকেল পর্যন্ত অব্যহত রয়েছে। এরই মধ্যে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। শনিবার প্রচারনা হবে এ কারণে শেষ মুহুর্তে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজেদের পক্ষে আনতে ব্যস্ত প্রার্থীরা। আর এ ব্যস্ততায় কোন কিছুই বাধ সাধতে পারছেনা।
জানা যায়, সকালে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নগরীর লক্ষিপুর এলাকায় প্রচারণা চালান। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, ৯০ শতাংশ প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার আওয়ামী লীগ ‘ঘরানার’ লোক থেকে বাছাই করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তারা করবেই। তারা চেষ্টা করছে ভোটের আগের দিন প্রিজাইডিং অফিসারদের দিয়ে ভোট কেটে বিভিন্ন জায়গায় সেটা লুকিয়ে রাখা হবে, (স্কুলের) হেডমাস্টারের রুমে বা এসিট্যান্ট হেডমাস্টারের রুমে, আমি বলব, এসব জায়গায় সার্চলাইট দেওয়া হোক। “এখানে এইচটি ইমাম নামে এক ভদ্রলোক আছেন, মাননীয় উপদেষ্টা বর্তমান সরকারের, তিনি বেছে বেছে… ৯০ পার্সেন্ট আওয়ামী লীগ ঘরানার লোকদের পোলিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসার রাখা হয়েছে। আমরা আজকে দুপুরের মধ্যে এর গেজেট চাই।” ‘নিরপেক্ষ লোকদের’ প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার করার দাবি জানানোর পাশাপাশি আগের দিনের মতো শুক্রবার থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন বুলবুল।
আওয়ামী লীগ প্রচারণা শুরু থেকে সন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছে অভিযোগ করে রাজশাহী মহানগর বিএনপির এ সভাপতি বলেন, “আওয়ামী লীগের পোস্টার সন্ত্রাস থেকে আরম্ভ করে এখন পর্যন্ত, যে সন্ত্রাসগুলি করেছে, সমস্ত কিছু আমরা আপনাদের মাধ্যমে বলেছি জনগণের কাছে এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।” নির্বাচন কমিশন থেকে ওইসবের কোনো প্রতিকার পাননি অভিযোগ করে বুলবুল বলেন, “নির্বাচন কমিশন এখন গৃহপালিত পশুর মতো, জন্তুর মতো আচরণ করছে। এখানে সরকারের যে ভূমিকা বা নির্বাচন কমিশনের যে ভূমিকা রাখা উচিত ছিল, অন্যান্য দেশে যেটা হয়, সে ভূমিকা এখানে নাই।”
তিনি বলেন, “আমরা গতকাল বলেছি, আমাদের নেতাকর্মীদেরকে সুষ্ঠুভাবে এবং রাজশাহীর জনগণ, যে সম্মানিত ভোটাররা ভোট দিতে যাবে নিশ্চিন্ত মনে… (ভোটিং) সেন্টারকে নিরাপদ রাখার জন্য, আমি চাই আজকেই সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হোক।
“প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, সেনাবাহিনী নিয়োগ করে রাজশাহী নিরপেক্ষ ভোটের অবস্থান সৃষ্টি করা হোক। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এটা জনগণের কাছে উপযুক্ত প্রমাণ থাকবে।” নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগ কোনো সন্ত্রাসের করলে ‘জনগণকে নিয়ে আমরা রুখে দেওয়ার চেষ্টা’ করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির প্রার্থী। “রাজশাহীর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ চাই শান্তি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাজশাহীর মানুষ চায় ধানের শীষ। রাজশাহীর মানুষ চায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি।”
এদিকে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর নগরীর তালাইমারি এলাকায় গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। রাজশাহী সিটি ভোটের আগের রাতে নৌকায় সিল মারা ব্যালট ‘লুকিয়ে রাখার’ যে অভিযোগ বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল করেছেন, সেটাকে ‘কাল্পনিক ও উর্বব মস্তিষ্কের’ হিসাবে অভিহিত করেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে নৌকা তিনি বলেন, “এটিও তাদের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্র বলে আমি মনে করি। প্রথম দিন থেকে তারা এই রকম নানা অভিযোগ দিয়ে
আসছিল, এর মধ্যে নানা নাটকীয় ঘটনাও তারা ঘটিয়েছে। তার মধ্যে ধরাও পড়েছে সেগুলি। “এটিও তাদের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে এনেছে। কাল্পনিক কোনো ঘটনা, হয়তো তারা স্বপ্নে দেখেতে পেয়েছে। আমরা এমন কোনো ঘটনা জানি না, শুনিওনি। মনেও করছি না।”
ভোটের প্রচারের সর্বশেষ পরিস্থিতি ‘উৎসবমুখর’ আছে মন্তব্য করে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি লিটন বলেন, “যথেষ্ট সাড়া আছে ভোটারদের মধ্যে, ভোট দেওয়ার আনন্দ যেটা বাংলাদেশের মানুষ এনজয় করে, সেই পরিবেশটা আছে। তারপরও আগামী ২৪টা ঘন্টা বা ৪৮টা ঘন্টা, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে পরিবেশ শান্ত রাখা আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, “আমরা যে বার্তাটি আমাদের কর্মীদের সবসময় দিয়েছি, বিভিন্ন কর্মীসভার মাধ্যমে দিয়েছি, সেটি হল তারা যেন কোনো অবস্থাতেই পরিবেশ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয় এমন কোনো আচরণ না করে। এবং প্রয়োজনে পরিবেশ শান্ত রাখার জন্য যদি কিছুটা নতজানুও হতে হয়, তাও যেন তারা পরিবেশকে শান্ত রাখে। “কারণ ভোটাররা আসবেন, ভোট দেবেন, এটি আমরা চাই। তারপর যে ফল আসে, আমরা মেনে নিব।” রাসিক নির্বাচনে মূলত এ দুই প্রার্থীর মধ্যেই প্রতিদ্বন্দিতা হবে। এদিকে প্রতিকুল আবাহাওয়াতে যেমন বসে নেই মেয়র প্রার্থীরা তেমনি কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নিজ নিজ এলাকাতে তারা নির্বাচনী প্রচারণা চালান।
প্রসঙ্গত রাজশাহীতে এবারে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৬০ এবং সংরক্ষিত ১০ টি আসনে ৫২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে ৩০ জুলাই।