আইনি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক : ‘আমরা আইন পড়ি, সংবিধান পড়ি। আমরা জানি, দেশে আইন ও সংবিধান রয়েছে। কিন্তু এর যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। নিপীড়করা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তবে কেন আইন ও সংবিধান? এ আইন ও সংবিধানের কিসের প্রয়োজন? কেন আমরা আইন পড়ি?’
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে তিন দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সম্মিলিত মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা এসব প্রশ্ন তুলেন। মানববন্ধনে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
তাদের তিন দফা দাবি হলো- সকল ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষকের উপর হামলাকারীদের শনাক্ত করে বিচার, গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের মুক্তি এবং ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
মাননবন্ধনে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। তাতে লিখা ছিল- ‘ছাত্রদের উপর দফায় দফায় হামলার বিচার চাই’, নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও ছাত্রসমাজ’, ‘র্শিক্ষা ও হাতুড়ি একসাথে চলতে পারে না’, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’, ‘ছাত্র-শিক্ষক, প্রক্টর-ভিসি সকলের নিরাপত্তা চাই’, ‘আমার ক্যাম্পাসে আর কত মার খাবো?’, ‘ছাত্রকে জেলে নয়, ক্লাসে ফেরত চাই’, ‘ছাত্রদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কার?’, ‘নিরাপত্তা আগে, ক্লাস পরে’, শিক্ষকগণ লাঞ্ছিত কেন?’, ‘আজকের নারী নিরাপত্তা চায়, কোটা নয়’, ‘রাশেদ ভাইয়ের নিঃশর্ত মুক্তি চাই’, ‘মশিউর-তারেক আদনানের মুক্তি চাই’ ইত্যাদি।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সকল আন্দোলনের সূতিকাগার। আমি দেখেছি অনেক ছোট ছোট বিষয় নিয়ে এখানে আন্দোলন হয়েছে।
বর্তমানে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছে। একটা ত্রাসের রাজত্ব এখানে কায়েম করা হয়েছে। তবে আমি খুশি যে, আমার শিক্ষার্থীরা এখানে প্রতিবাদ জানিয়ে সেই ত্রাসের রাজত্ব ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে। এই ভয় ভাঙাটা সহজ নয়।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩০ হাজার। এর এক শতাংশও যদি আসে তাহলে সব ভয় খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে। তাই তোমাদের ভয় পাওয়ার কারণ নেই। তোমাদের একসাথে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগের ছেলেদের সাথে কথা বলে আমি বুঝতে পেরেছি যে, ওরা একটি মতবাদে বিশ্বাসী। তারা ‘ব্রেইনওয়াশড’ অবস্থায় আছে। এর ‘মেকানিজম’ কীভাবে হয়েছে সেটা বুঝতে হবে। প্রথম বর্ষের একটি ছেলে যখন হলে এসে গণরুমে ছাত্রলীগের ‘টর্চারের’ মধ্য দিয়ে যায়, তখন তাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন হয়ে যায়। তারা তখন আর ‘স্বাভাবিক’ ছাত্র থাকে না।
দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের যে সকল শিক্ষক প্রশাসনে আছেন, তারাই এটা হতে দিচ্ছেন। দিনের পর দিন হলের মধ্যে একটি ‘ছায়া প্রশাসন’ তৈরি করে দিয়ে ছাত্রলীগকে ক্যাডার তৈরি করার সুযোগ দিচ্ছে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগকে আমরা পেটাতে দেখছি, মারতে দেখছি। কিন্তু তাদের পেছনে কে আছে?
প্রশ্ন রেখে আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, বাংলাদেশের মতো স্বাধীন দেশে কারো মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, আন্দোলন করার স্বাধীনতা নেই। তবে এই স্বাধীনতা কিসের জন্য?
সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক কেউই নিরাপদ নয়। নিরাপত্তা দিতে প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। প্রশাসন যদি নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে নিরাপত্তা দিবে কে?