ওজন স্কেল না সরালে ধর্মঘটের হুমকি ব্যবসায়ীদের
চট্টগ্রাম ব্যুরো : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে ওজন স্কেল সরিয়ে নেওয়া না হলে ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, আগামী সাত দিনের মধ্যে ওজন স্কেল না সরলে চট্টগ্রামে পাইকারি পণ্যের বাজার এবং পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করা হবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের সময় এ ঘোষণা দেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
একই দাবিতে দেশের ভোগ্যপণ্যের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার নগরের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী, পাহাড়তলী আড়তদার সমিতি, আছাদগঞ্জ সমিতি, চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতি, বাংলাদেশ সিমেন্ট, আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম ডাল মিল ব্যবসায়ী সমিতিসহ চট্টগ্রামের প্রায় ২০টি ব্যবসায় সমিতি একযোগে নানা কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন শ্রমিক-কর্মচারীরাও।
এদিকে বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সামনে এসে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে তারা চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে স্মারকলিপি দেন। এ সময় ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের সঙ্গে মেয়রও একাত্মতা প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় দারোগারহাট ও দাউদকান্দি এলাকায় গাড়ির ওজন পরিমাপক যন্ত্র বসিয়েছে। ব্যবসায়ীদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘এক দেশে দুই আইন থাকতে পারে না। পণ্য পরিবহনে ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ এবং পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন স্কেল স্থায়ীভাবে বন্ধের বিষয়ে সেতুমন্ত্রীসহ সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব। প্রয়োজনে সরকারের উচ্চ মহলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।’
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, ‘আগে যেখানে একেকটি গাড়িতে ২০ থেকে ৩০ টন পণ্য পরিবহন করা যেত, সেখানে এখন ১৩ টনের বেশি করা যাচ্ছে না। অথচ ভাড়া গুনতে হচ্ছে আগের নিয়মে। এর ফলে লোকসানে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে ব্যবসায়ীরা অনেক বড় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের তুলনায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা নানা রকম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।’
অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা অন্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায়ও পিছিয়ে পড়ছেন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মান নিয়ন্ত্রণে ওজন স্কেল বাস্তবায়ন করেছে। এর ফলে নির্ধারিত ওজনের বেশি পণ্য নিয়ে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে প্রতিনিয়ত বাড়তি জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এই বাড়তি খরচ পরিবহন করা পণ্যের দামের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, ‘ওজন স্কেল বসানোর কারণে ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। যে কারণে বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ রেখে রাস্তায় নেমেছেন।’
মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া আড়তদার সমিতির নেতারা বলেন, সড়কপথে ওজন স্কেল বসিয়ে কড়াকড়ি করায় ঢাকার অনেক ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভিড়াচ্ছেন না। তারা বহির্নোঙর থেকে লাইটারেজ জাহাজে করে পণ্য খালাস করে নৌপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে বন্দরও ক্ষতির মুখে পড়ছে। দুটি ওজন স্কেলের কারণে পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অন্য জেলার ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম থেকে মালপত্র কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।