রাজশাহীতে বিল চাষ নিয়ে গ্রামবাসী পুলিশ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৯
পাপন সরকার শুভ্র, রাজশাহী : রাজশাহীর বাগমারায় পুলিশ ও দুই গ্রামবাসীর মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের হাটমাধনগর ও বাসুদেবপাড়া
গ্রামের মধ্যে জোকা বিল নিয়ে বিবাদমান সংঘর্ষে দু’ গ্রামের স্থানীয় ১২ জন ও ৩ পুলিশ আহত হয়েছেন। ঘটনা সামাল দিতে পুলিশ ১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে।
এ ঘটনায় স্থানীয় গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। আহতদের স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে।
গুলিবিদ্ধরা হলেন, বাসুদেবপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীল আলম (৪২), রিমা বেগম (২৫), পিয়ারুল ইসলাম (৩৮) লতিফা বেগম (২৯), আব্দুল মজিদ (৬০), মজনুর রহমান (৩৮), মমেনা বেগম(৩০), ছামেনা বেগম (২৮) ও শহিদুল ইসলাম (২৮)। এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত পুলিশ ও
গ্রামবাসীর মধ্যে থেমে থেমে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, বাসুদেবপাড়া গ্রামের তাছের আলী (৫০), ইয়ার বক্স (৫৫) ও জাবের আলী (৪৮)।
জানা গেছে, নরদাশ ইউনিয়নের জোকাবিলা মাছচাষের ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন থেকে হাটমাধনগর ও বাসুদেবপাড়া গ্রামের লোকজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এঘটনায় গত ১৮ এপ্রিল ওই মাছচাষীর সমিতির ক্যাশিয়ার হাটমাধনগর গ্রামের আনিছুর রহমানকে
প্রতিপক্ষ কুপিয়ে খুন করে। এর জেরে উভয় গ্রামের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। দ্বন্দ্ব মিমাংসার পূর্বেই হাটমাধনগর গ্রামের লোকজন বাসুদেবপাড়া গ্রামের লোকজনকে বাদ দিয়ে জোরপূর্বক জোকাবিলায় মাছের পৌনা অবমুক্ত করে।
আবারো মাছ ছাড়াকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্বের তীব্রতর হয়। বিষয়টি জানার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জনিয়ার এনামুল হক স্থানীয় ভাবে নিস্পত্তির আশ্বাস দেন। সেই
মোতাবেক বাসুদেবপাড়ার লোকজন চুপচাপ থেকে যান। স্থানীয় সংসদ সদস্যের কথা কর্ণপাত না করে শুক্রবার হাটমাধনগর গ্রামের লোকজন জোকাবিলের বাসুদেবপাড়ার খালের
সুইচ গেটের মুখে লোহার খাঁচা তৈরী করে বন্ধ করার চেষ্টা করে। বাসুদেবপাড়া গ্রামের লোকজন বাঁধা দিলে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। গ্রামবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোঁড়তে থাকে। গ্রামবাসী পুলিশকে ঘিরে ধরলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোঁড়ে। এতে দুই গ্রামবাসী ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে গ্রামবাসীর
হামলায় থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ ও উপপরিদর্শক শাহীন দেওয়ানসহ ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য সংঘর্ষের পর পরই ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ
মোতায়েন করা হয়েছে। এবং জেলা শহর রাজশাহী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স আনা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহম্মেদ বলেন, উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের হাটমাধনগর ও বাসুদেবপাড়া গ্রামের মধ্যে জোকা বিল নিয়ে বিবাদমান সংঘর্ষের ঘটনা জানতে পেরে তিনি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলে গ্রামবাসী তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়। বেগতিক দেখে লাঠি চার্জ করতে গেলে গ্রামবাসী ইট ও লোহার বল্লম ছোঁড়ে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ ১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়তে বাধ্য হয়। ওই ঘটনায় পুলিশের কাজে বাঁধা দেয়ার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে।