বৃহস্পতিবার, ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ১২ই আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

আর ফুটপাতে থাকতে হবে না সেই মা ও সন্তানদের

নিউজ ডেস্ক: সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে একটি ছবি- ফুটপাতে থাকা অসুস্থ মাকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে দুই শিশু। সেই ছবি নাড়া দেয় সবাইকে। ওই মা থাকতেন রাজধানীর কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডের ওভারব্রিজের নিচের ফুটপাতের ঝুপড়িঘরে। পরে সেই মাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান কয়েকজন তরুণ। কয়েকদিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন সেই মা ফরিদা বেগম (৪০)।

এ সংক্রান্ত খবর দেখে গতকাল বুধবার সকালে ঢাকায় অফিশিয়াল কাজে এসে পরিবারটির সঙ্গে দেখা করেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীন। তিনি ফরিদা ও ফরিদার স্বামী আনছার আলীসহ (৬০) সন্তানদের তাদের নিজ জেলা কুড়িগ্রামে নিয়ে দেখভালের সব দায়িত্ব নেন।

জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন তাঁদের শিশু সন্তান ফরিদুল আলী ও আকলিমা খাতুনের সঙ্গেও কথা বলেন। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি সে সময় শিশুদের হাতে বিভিন্ন ধরনের খাবার সামগ্রী তুলে দেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের পোড়ারচর এলাকার বাসিন্দা আনছার আলী ২০১৬ সালের বন্যায় প্রায় তিন একর জমি, বসতবাড়ি হারিয়ে রাজধানীতে আশ্রয় নেন। রাজধানীর কলাবাগানের ওভারব্রিজের নিচের ফুটপাতে ঝুপড়িঘর বানিয়ে থাকতেন।

সুলতানা পারভীন আজ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, জেলা প্রশাসন কুড়িগ্রামের পক্ষ থেকে আমি ওই পরিবারটির সব ধরনের দায়িত্ব নিয়েছি যাতে তাদের আর কোনো সমস্যা না হয়। আজ রাতেই তারা একটি বাসে করে কুড়িগ্রামের পথে রওনা দেবে। সেখানে তাদের একটি ভাড়া বাড়িতে আমরা তুলে দেব। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান।

ফরিদার শিশুসন্তান প্রসঙ্গে সুলতানা পারভীন বলেন, আমি চাই তারা পড়াশুনামুখী হোক, লেখাপড়া করুক। তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে থেকেই পড়াশুনা করুক। এ ব্যাপারে যা সাহায্য-সহযোগিতা করা দরকার জেলা প্রশাসন করবে।

এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, কর্মসংস্থান বলতে তাঁরা যে পেশাতে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য পাবে, আমরা তাদের সেই পেশায় কাজ করার সুযোগ করে দেব। আমাদের জেলা প্রশাসনে অনেক কাজের লোক দরকার হয়। আনছার আলী চাইলে সেখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে পারবে, অথবা মুদির দোকানও করতে পারবে। তা ছাড়া হাঁস-মুরগির অথবা গরু পালনও করতে পারবে। মোট কথা তাঁরা নিজেদের স্বাবলম্বী করতে যে পদক্ষেপ নেবে জেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে সবসময়।

ছিন্নমূল পরিবারটির স্থায়ী বাড়ি প্রসঙ্গে সুলতানা পারভীন বলেন, যত দ্রুত সম্ভব তাদের বাড়ি করার মতো একটি জায়গার ব্যবস্থা করব আমরা। তবে তারা চায় তাদের নিজ এলাকা কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের পোড়ারচর এলাকায় থাকতে।

আনছার আলীর মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় জেলা প্রশাসক তার জন্য একটি ভাতার ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের একটি মাসিক কার্ড করে দেব, যাতে তারা প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পায়।’

যোগাযোগ করা হলে আনছার আলী বলেন, ‘মোই আর কোনো কিছু চাং না, খালি একটা থাকার ঘর আর চলিফিরি খাওয়ার মতো কোনো কামকাজ হলেই হবে। কাইল ওমরা (জেলা প্রশাসক) আসছিল। আল্লাহ ওমার ভালো করুক। তয় মোক একটা গরু কিনি দিলে ভালো হয়। মুই আবাদ-কিস্তি আর গরু দেখি চলনুং হয়।’

এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে ফরিদা বলেন, ‘না বাহে, দোকান ওটে চলবার নয়। হামাক গরু কিনে দিলে ভালো হইবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘হামার ওই বাড়ির ওটে স্কুল আছে। মোর ছওয়ারা ওটেই বাড়ির বগলত পড়া পড়বে।’

ঢাকাস্থ কুড়িগ্রাম সমিতির মহাসচিব সাইদুল আবেদীন ডলার টেলিফোনে বলেন, আমি নিজে আজকে আনছার আলী ও তাঁর পরিবারকে কুড়িগ্রামগামী একটি বাসে তুলে দেব। তারা কুড়িগ্রামে পৌঁছালে জেলা প্রশাসন তাদের একটি শেল্টার হাউজে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করবে বলে তিনি জানান।

গত শুক্রবার সোবহানবাগ মসজিদের কাছে প্রচণ্ড জ্বর আর শরীর ব্যথা নিয়ে ফুটপাতে পড়ে থাকতে দেখা যায় অসুস্থ মা ফরিদা বেগমকে। শনিবারও তিনি পড়েছিলেন ফুটপাতে। ওই দিন দেখা যায়, মাকে বাঁচাতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে ছোট্ট দুই শিশু। তারা প্লাস্টিকের বোতলে করে পানি এনে মায়ের মাথায় ঢালছিল। এ দৃশ্য দেখে তা মোবাইল ফোনে ধারণ করেন সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম জুয়েল। যা নাড়া দেয় সবাইকে। তা ছাড়া পারভেজ হাসান নামের আরেক পথচারী অসুস্থ মায়ের ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। পরে আরো পাঁচজনের সহযোগিতায় ফরিদাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন পারভেজ। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। খবর পেয়ে পরিবারটির সব ধরনের দায়িত্ব নেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন। সূত্র: এনটিভি অনলাইন