বৃহস্পতিবার, ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ১২ই আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দ্বন্দ দৃশ্যমান

জাতীয় ঐক্য নিয়ে অগ্রসরমান বিএনপিকে এবার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো শুরু করেছে দীর্ঘদিনের জোটবন্ধু জামায়াত ইসলামী। নির্বাচনে অংশ গ্রহণ ও সরকারের নির্বাচনকালীন মন্ত্রীসভায় যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেলে জোট ছেড়ে যাওয়ারও হুমকি দিচ্ছে জোটের শরীক কয়েকটি দল। আগামী নির্বাচনে এখনই আসন ভাগাভাগির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপির ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে তারা।

এছাড়া জোটে থাকা না থাকা নিয়ে এসব দলগুলোর নেতাদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য ২০দলীয় জোটের অবস্থানকে নড়বড়ে করে দিচ্ছে। ফলে খালেদা জিয়াবিহীন জোট কত সময় ঐক্যবদ্ধ থাকবে তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে আবার জোটে থাকা শরীকদলগুলোর একটা বড় অংশ জোট ঐক্যবদ্ধ থাকবে বলে আশাবাদি। জোটের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে এসব কথা জানা গেছে।

গত বেশ কিছু দিন ধরে চাওর হচ্ছে ২০ দলীয় জোট ছেড়ে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রীসভায় যোগ দিতে পারে এলডিপি ও কল্যাণ পার্টি। তবে দল দুটির শীর্ষ দুই নেতা জানান, তারা কোন অবস্থাতেই বিশ দলীয় জোট ছেড়ে আওয়ামী লীগের জাতীয় সরকারে যোগ দেবে না[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশ। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির বক্তব্য আরো স্পস্ট হওয়া উচিত বলে মনে করেন এলডিপির শীর্ষনেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ ও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক। তবে এলডিপি যুগ্ম মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিম একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেন, গতবারের প্রেক্ষাপট ও এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ন আলাদা। এবারে আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। এবং সেক্ষেত্রে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য নিবার্চনকালীন সরকারে যদি আমন্ত্রণ জানানো হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে এলডিপি সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করবে। তার বক্তব্যের পর দলটির মহাসচিব রেদওয়ান আহমেদ এই বক্তব্য দলের নয়, এটা সেলিমের ব্যক্তিগত বক্তব্য হতে পারে বলে মন্তব্য করেন।

নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মাদ ইবরাহিম বলেন, দেশ, জনগণ, ২০দলীয় জোট এবং শরীকদের স্বার্থ সবগুলোকে সমন্বয় করে সরকারও কিছু ছাড় দিক, সম্ভব হলে আমরাও কিছু ছাড় দেই। এবং সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে আমরা এগিয়ে যাই। জোট ভাঙার বিষয়টিকে তিনি গুরুত্ব দিতে চান না।

জোটের অপর শরীক বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি একক ভাবে নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কথা বলেছেন। তবে নিবার্চনে যাওয়ার বিষয়টি শেষ পর্যন্ত জোটের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন বলে জানান তিনি। সরকারের সমালোচনা করে ন্যাপ এই নেতা জানান, সরকারকে নির্বাচন বিষয়ে নমনীয় হতে হবে। সমঝোতার মধ্য দিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে যে জোট তাদেরকে অন্তর্ভূক্ত করে তারা একটি নির্বচনকালীন সরকার করতে পারে। তখন নির্বাচন হলে সবদল অংশ নিতে পারবে।

আর জোটের দীর্ঘদিনের শরীক জামায়াতকে নিয়ে নতুন করে বেকায়দার মুখে পড়তে হয়েছে বিএনপিকে। জামায়াত নেতারা জোটে থাকার কথা বললেও তারা এখন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার পক্ষে। ইতিমধ্যে তারা সারাদেশে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করেছে। সম্প্রতি গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের টানাপোড়েন শুরু হয়। আর তা প্রকাশ্যরূপ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপিকে ছাড় না দেওয়া প্রশ্নে। জামায়াতের দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, আমরা বারবার বিএনপিকে ছাড় দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের ছাড় দেয় না। সম্প্রতি টাঙ্গাইল পৌর নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মেয়র প্রার্থীকে নির্বাচনের শেষমূহূর্তে সর্মথন দিয়েছে। তবে সিলেট নিয়ে জোটের মধ্যে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন।

তবে এসব বিষয়কে খুব বেশী গুরুত্ব না দিয়ে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, সরকারের এজেন্টরা নানা ভাবে সক্রিয় রয়েছে। জোট ঐকবদ্ধ রয়েছে ভবিষ্যতেও থাকবে। কে কি বলেছে এটা কোনো বিষয় না। জোটের বৈঠকেও আমরা আমাদের ঐক্য ধরে রাখার বিষয়ে একমত পোষণ করেছি। খুটিনাটি কিছু বিষয়ে সমস্যা থাকতে পারে তবে এটাকে বড় করে দেখার কিছু নেই। তিনি বলেন, কিছু গণমাধ্যম তাদের নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। জোটের মধ্যে যেসব বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে তা দুর করে, জাতীয় নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামলে বিশ দলের বিজয় নিশ্চিত বলেও মনে করেন তিনি।