আবারও কাঁদতে হলো ফুটবল জাদুকরকে
প্রকৃতি যাকে অনেককিছু দেয়, তার কাছ থেকে সবচেয়ে দামি কিছু কেড়েও নেয়। এই নিষ্ঠুরতারই শিকার হলেন ফুটবল জাদুকর? আরও একটি শিরোপার সুযোগ, আরও একটি বিশ্বকাপ মঞ্চ বিদায় জানাল তাকে। অগ্নিগর্ভ ম্যাচ শেষে ৪-৩ গোলের দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়ে ফরাসিরা যখন বুনো উদযাপনে মত্ত; তখন মাঝমাঠে একাকী সৈনিক লিওনেল মেসি বিধ্বস্ত মলিন মুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ফুটবল জাদুকরের নিশ্চয়ই কষ্ট হচ্ছিল এই নির্মম সত্যটা বিশ্বাস করতে।
২০১৪ বিশ্বকাপে শিরোপার কাছে গিয়েও নিরাশ হতে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। ‘ভিলেন’ ছিল জার্মানি। বিশ্বকাপজয়ী সেই ‘ভিলেন’রা এবার বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকেই। এই পর্বে খোঁড়াতে খোঁড়াতে কোনোমতে দ্বিতীয় রাউন্ডে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। একটি ড্র এবং একটি হারের সঙ্গে একটি জয়। সেই জয় ছিটকে দেয় ‘সুপার ঈগলস’ নাইজেরিয়াকে। শেষ ষোলোর প্রথম লড়াইয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসা ফ্রান্সের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ভাগ্য বারবার দিক পাল্টালেও অসম্ভব দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে ফরাসিরা। যার উল্টোটাই দেখা গেছে আর্জেন্টাইন শিবিরে।
১-১ সমতার পর ২-২ সমতা। এরপর যেন আক্রমণের ধার বেড়ে যায় ফ্রান্সের। আর্জেন্টিনার স্বান্ত্বনা ছিল যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে করা আগুয়েরোর গোলটি। ফুটবল জাদুকর এদিন গোলের দেখা পেলেন না। শেষ হয়ে গেল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ মিশন। ৩১ বছর বয়সী মেসি আরও একটি শিরোপা জয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন। নাকি বঞ্চিত করা হলো? মেসিকে কি যোগ্য সঙ্গ দিতে পেরেছেন তার সতীর্থরা? এবারের বিশ্বকাপে যেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে, তাতে ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হয়ে কি শিরোপা জেতা সম্ভব?
সমর্থকেরা আর্জেন্টিনাকে ভালোবাসে আবেগ দিয়ে। ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির কাছে হেরে যখন অবসরে গিয়েছিলেন, এই সমর্থকেরাই তাকে ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। শিরোপা হারানোর হতাশার চেয়ে বড় হয়ে উঠেছিল এই ভিনগ্রহের ফুটবলারটির প্রতি ভালোবাসা। যে ফুটবলারটির ক্লাব ফুটবলে সবরকমের অর্জন আছে; শুধু জাতীয় দলের হয়ে কোনো শিরোপা নেই। আমি নিশ্চিত, ফুটবল মাঠের জাদুকর লিওনেল মেসিকে আজকের বিপর্যয়ের পরও একইভাবে ভালোবাসবে সবাই।
এবার শিরোপা জেতা না হোক, অন্য কোনো দিন হবে…। ভালোবাসার মেসি আর ভালোবাসার আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মনের মণিকোঠায় ঠিক আগের জায়গাতেই থাকবে।