একসময়ের মসৃণ রাস্তায় এখন চলাই দায়
অনলাইন ডেস্ক : এক যুগ আগে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছিল দেশের সবচেয়ে মসৃণ রাস্তা। যানবাহনের চালকরা বেশ জোর দিয়েই বলতেন কথাটি। বাস-মাইক্রোবাসে সামান্য ঝাঁকুনিও সৃষ্টি হতো না বলে তখন বাসে বসে প্রয়োজনীয় কিছু লেখা যেত অনায়াসে। এক যুগের ব্যবধানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এখন বাসে বসা দায়। বৃদ্ধ ও রোগীদের জন্য এ রাস্তা অতিক্রম করা ভয়ংকর কষ্টের নাম। জায়গায় জায়গায় কার্পেটিং উঠে যাওয়া, রাস্তা ভেঙে যাওয়া স্থানে স্থানে উঁচু-নিচু ঢেউয়ের সৃষ্টি, কোথাও দেবে যাওয়া এখন এই মহাসড়কের নিয়মিত দৃশ্য। এ ছাড়া মহাসড়কের হবিগঞ্জ জেলার ৮২ কিলোটিমার অংশে ১০টি বাজার, কয়েকটি গোল চত্বর, বাসস্টপেজ ও দুটি লেভেলক্রসিংয়ের প্রতিটি স্থান খানাখন্দ ও কাদা-পানিতে ভরা। রয়েছে অবৈধ স্থাপনা। ফলে অতিকষ্টে যান চলাচল করতে হয়। এর ফলে সৃষ্টি হয় যানজট।
তবে সড়ক বিভাগের লোকজনের কাছে জানতে চাইলে পাওয়া যায় সেই প্রথাগত উত্তর—চেষ্টা চলছে। তেমনটিই বললেন হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, চেষ্টা করা হচ্ছে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করার। সংস্কারের জন্য বাইরে তৈরি করে রেডিমেড উপকরণ ব্যবহার করা হবে, যাতে যোগাযোগ ব্যাহত না হয়। তিনি জানান, গত শুক্রবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত স্থান দ্রুত সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী মহোদয়। তিনি বলেন, সেই আদেশ অনুযায়ী ৮ জুনের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করতে হবে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জে এমএ রব চত্বর (নতুন ব্রিজ) এলাকায় অবৈধ গাড়ি পার্কিং, রাস্তার জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়া এবং বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এখানে যানজট লেগেই থাকে। ছোট ছোট যানবাহনগুলোর স্টেশন রয়েছে এখানে। গোল চত্বরের আশপাশে রাস্তা ভাঙা থাকায় চালকরা সতর্কতার সঙ্গে স্থানটি অতিক্রম করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, এখানে সব সময় গাড়ির জ্যাম লেগেই থাকে। রাস্তার অবস্থা করুণ। কোনো সময় সংস্কার হয় না। যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
একই অবস্থা নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি গোল চত্বরেও। সেখানে লেগে থাকে ভিড়। রাস্তাও ভাঙা। জেলার ৮২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রাস্তা ভাঙা ও খানাখন্দে ভরা।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অলিপুর ও লস্করপুর এলাকায় দুটি লেভেলক্রসিংয়ের অবস্থা করুণ। সেখানে রাস্তা সংস্কার করার জন্য স্থায়ী ঠিকাদার থাকলেও তারা যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছে না। সব সময় রাস্তা থাকে ভাঙা। মহাসড়কটি নির্মাণের সময় ওই দুটি লেভেলক্রসিংয়ে ওভারব্রিজ থাকার কথা থাকলেও পরবর্তী সময়ে তা বাতিল করা হয়। পরে অনেকবার স্থানীয় জনগণ দাবি জানালেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ওই দুটি স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছে শত শত লোক।
ঢাকা থেকে আসতে হবিগঞ্জ জেলার শুরুতে মাধবপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর, শাহপুর, নতুনবাজার, আন্দিউড়া বাসস্ট্যান্ড পয়েন্টের অধিকাংশ রাস্তাজুড়েই সৃষ্টি হয়েছে গর্ত ও খানাখন্দ। সামান্য বৃষ্টিতেই গর্তগুলোতে জমে যায় পানি। অনেক সময় পানিভর্তি গর্তে পড়ে দুর্ঘটনায় পড়ে ছোট যানবাহনগুলো। এ ছাড়া যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচলেও পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।
হবিগঞ্জ-সিলেট রুটের গাড়িচালক আজিজুর রহমান বলেন, এই সড়ক শুধু ভাঙা থাকে না। অতিরিক্ত গাড়িও চলাচল করে। রাস্তায় দোকানপাটও একটা সমস্যা। সব মিলিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সিলেটের শেরপুর যেতে যেখানে এক ঘণ্টা প্রয়োজন, সেখানে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে মাধবপুর পর্যন্ত ৩০ মিনিটের রাস্তয় সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। অর্থাৎ ঢাকা-সিলেট মহাড়কের শুধু হবিগঞ্জ জেলার ৮২ কিলোমিটার অংশেই সময় নষ্ট হয় প্রায় এক ঘণ্টা। এর বাইরে যানজটের কারণে অনেক সময় আরো বেশি সময় নষ্ট হচ্ছে
বাহুবল উপজেলার পুটিজুড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুদ্দত আলী জানান, বৃষ্টির পানি জমে থাকা এবং অতিরিক্ত ওজনের গাড়ি চলাচলের জন্য রাস্তার ক্ষতি হয়। রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।