বিশাল লিড বাংলাদেশের
তেন্দাই চাতারা বোলিং করার সময় যে ইনজুরিতে পড়েছিলেন, তাতে এই টেস্টে আর তার খেলার সম্ভাবনা নেই। সুতরাং, জিম্বাবুয়ের ৯ উইকেট পড়া মানেই অলআউট তারা। ২১৮ রানের বিশাল লিড বাংলাদেশের। কিন্তু দিনের খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে, বোঝা গেলো না জিম্বাবুয়েকে ফলো অন করাবে কি না বাংলাদেশ। তবে, খেলার গতি প্রকৃতি দেখে বোঝাই যাচ্ছে, বুধবার সকালে আবারও জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিংয়ে পাঠাতে পারেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
সিলেটে শোচনীয় পরাজয়ের পর ঢাকায় জিততে না পারলে সিরিজই হেরে যাবে বাংলাদেশ। সুতরাং, ঢাকায় জয় ছাড়া অন্য কিছু চিন্তায় নেই টাইগারদের। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রয়োজন জিম্বাবুয়েকে খুব দ্রুত অলআউট করে ফলো অনে ফেলা। কিন্তু ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে ব্রেন্ডন টেলর আর পিটার মুর মিলে বাংলাদেশের সেই আশাকে সুদুর পরাহত করে তুলেছিল প্রায়।৬ষ্ঠ উইকেটে ১৩৯ রানের বিশাল জুটি গড়ে তুলেছিলেন টেলর আর মুর। এ জুটিকে ভাঙ্গার আপ্রাণ চেষ্টা অবশেষে সফল হলো ৯২তম ওভারের শেষ বলে এসে। মিডিয়াম পেসার আরিফুল হকের বলে এলবির শিকার হন পিটার মুর। ১১৪ বলে ৮৩ রানের ইনিংস খেলে তবেই বিদায় নেন মুর।
এই উইকেটের মধ্য দিয়েই বলতে গেলে খেলায় ফিরে আসে বাংলাদেশ। এরপর দিনের বাকি কাজটা করে ফেলেন স্পিনাররা। মেহেদী হাসান মিরাজ আর তাইজুল ইসলাম। এক ওভারেই মিরাজ ফিরিয়ে দেন জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটসম্যানকে।তবে দিনের সবচেয়ে সেরা সাফল্য বলতে হবে ব্রেন্ডন টেলরের উইকেট। ১১০ রান করে ফেলা টেলরকে ফেরানোর ক্ষেত্রে বোলার মিরাজের যতটা না কৃতিত্ব, তার চেয়ে বেশি কৃতিত্ব ফিল্ডার তাইজুল ইসলামের।
৯৯তম ওভারের প্রথম বলটিতেই টেলরকে ফেরালে মিরাজ। তার বলে স্লগ সুইপ খেললেন টেলর। বল চলে গেলো লং লেগ অঞ্চলে। সেখানে ঠিক বলের নাগালের বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তাইজুল ইসলাম। নাগালের বাইরে ক্যাচ।কিন্তু তাইজুল ডান দিকে নিজেকে বাতাসে ভাসিয়ে দিলেন। এরপর বাজপাখির মত ঝাঁপ দিয়ে যে ক্যাচটি ধরলেন, সেটা চোখে না দেখলে কারও বিশ্বাস হওয়ার কথা নয়। রীতিমত অবিশ্বাস্য! সেই ক্যাচটি ধরেই জিম্বাবুয়ের আশার প্রতীক হয়ে ওঠা টেলরকে ফেরালেন তাইজুল। আশা ফিরলো তখন বাংলাদেশ শিবিরেও।
এক বল বিরতি দিয়ে আবারও উইকেট পেলেন মিরাজ। এবার ফেরালেন তিনি ব্রেন্ডন মাভুতাকে। মিরাজের বলকে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে ফাস্ট স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা আরিফুলের হাতে জমা দিতে বাধ্য করলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।এরপর বোলিংয়ে আসেন তাইজুল ইসলাম। তিনিও নিলেন ১ উইকেট। তবে আজই অলআউট হয়ে যেতে পারতো জিম্বাবুয়ে। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে দুটি ক্যাচ মিস না হলে। ১০৩ ওভারের ৬ষ্ঠ বলে প্রথম স্লিপে রেগিস চাকাভার ক্যাচ মিস হয়। এরপর ১০৫তম ওভারের শেষ বলে কাইল জার্ভিসের ক্যাচ শর্ট লেগে হাতে নিয়েও ধরে রাখতে পারেননি মুমিনুল হক।
এরপর ১০৬ ওভারে বোলিং করতে আসেন তাইজুল ইসলাম। তার করা তৃতীয় বলে শট লেগে ক্যাচ ধরেন চাকাভা। ১০ রান করা চাকাভার ক্যাচ এবার আর ফেললেন না মুমিনুল। তবুও থার্ড আম্পায়ার দেখতে হলো। এরপরই আউট ঘোষণা করা হলো চাকাভাকে। ৩০৪ রানে পড়লো ৯ম উইকেট। এরপরই দিনের খেলা শেষ করে দেয় জিম্বাবুয়ে। অথ্যাৎ আজ আর অলআউট হতে চাইলো না তারা। দিনের খেলা ২.৩ ওভার (আড়াই ওভার) বাকি থাকতেই খেলা শেষ করে দিলো জিম্বাবুইয়ানরা।এর আগে দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ঘণ্টাতেই দুই উইকেট তুলে নিয়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে স্বাগতিকদের হতাশায় ডোবাতে শুরু করেন জিম্বাবুইয়ের দুই ব্যাটসম্যান পিটার মুর এবং ব্রেন্ডন টেলর। এ দুজনই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হলেও এ ম্যাচে খেলছেন পুরো দস্তুর ব্যাটসম্যান হিসেবে।
অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৬০ রান যোগ করে চা পানের বিরতিতে যান মুর ও টেলর। এরপর দু’জন গড়েন ১৩৯ রানের জুটি। শেষ পর্যন্ত ২৭০ রানে ৬ষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে। আউট হন পিটার মুর।তার আগে প্রথম সেশনের মতো দ্বিতীয় সেশনেও দুই উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। পুরো ওয়ানডে সিরিজ ও সিলেট টেস্টে ভোগানো শন উইলিয়ামস এবং সিকান্দার রাজাকে সরাসরি বোল্ড করে ইনিংসে চার উইকেট দখল করেন তাইজুল ইসলাম। উইলিয়ামস আউট হন ১১ রান করে, রাজা ব্যর্থ হন রানের খাতা খুলতে।
সিলেট টেস্টের দুই ইনিংসেই পাঁচ উইকেট নেয়া তাইজুল এ ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে স্পর্শ করলেন অসাধারণ এক মাইলফলক। রেগিস চাকাভাকে আউট করে এনামুল হক জুনিয়র ও সাকিব আল হাসানের পর তৃতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টানা তিন ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব অর্জন করলেন তিনি।তাইজুল ইসলাম ছাড়া ৩ উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ এবং ১ উইকেট নেন আরিফুল হক। অভিষিক্ত খালেদ আহমেদের দুর্ভাগ্য। দুটি ক্যাচ মিস হওয়ার কারণে তিনি কোনো সাফল্য পেলেন না। ১৮ ওভারে ৪৮ রান দিয়েছেন তিনি। মোস্তাফিজুর রহমানও সাফল্য পাননি। ২১ ওভার বল করে তিনি দিয়েছেন ৫৮ রান।
এর আগে রোববার ম্যাচের শুরুতে টস জিতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহীমের হার না মানা ২১৯ রান এবং মুমিনুল হকের ১৬১ রানের বিশাল ইনিংসের ওপর ভর করে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে তোলে ৫২২ রান। ৬৮ রান করে অপরাজিত থাকেন মেহেদী হাসান মিরাজও।