সৌদি আরবের বাদশাহকে ক্ষমতাচ্যুত করার ডাক
অনলাইন ডেস্ক : সৌদি আরবের বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল-সৌদকে ক্ষমতাচ্যুত করে সৌদির মসনদে তার ভাই আহমেদ বিন আব্দুল আজিজ আল-সৌদকে বসানোর ডাক এসেছে।
‘সুশাসনের মিত্র’ হিসেবে পরিচিত দেশটির বিরোধী একটি জোট আগামী এক বছরের জন্য ‘নতুন বাদশাহ’ হিসেবে আহমেদকে ক্ষমতা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে রবিবার।
সৌদির এই বিরোধী জোট প্রথমবারের মতো দেশটির শাসনক্ষমতায় পরিবর্তনের ডাক দিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
আরবি ভাষার দৈনিক আল-খালিজ অনলাইনের হাতে ওই বিবৃতির একটি কপি এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘দেশের শাসনক্ষমতায় কারা থাকবে তা সৌদির জনগণ নির্ধারণ করবে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গত চার বছরে প্রমাণ হয়েছে যে, বাদশাহ সালমান এবং যুবরাজ মোহাম্মদ দেশের শাসনকার্য চালানোর যোগ্য নন। তাদের শাসন ব্যবস্থা দেশ, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জনগণ ও সম্পদকে হুমকির মুখে ফেলেছে।’
দেশকে রক্ষা করতে প্রিন্স আহমেদের আগ্রহের ওপর সৌদির এই বিরোধী জোটের সমর্থন রয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় আসার পর থেকে সৌদি কারাগারে যেসব বন্দীকে রাখা হয়েছে; তাদের সবার মুক্তি ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবিও জানিয়েছে সৌদির এ বিরোধী জোট।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা বলেছেন, তারা স্বশস্ত্র বাহিনী, নিরাপত্তাবাহিনী ও দেশটির ব্যাপকসংখ্যক মানুষের সঙ্গে পরামর্শ ও সমন্বয় করে নতুন বাদশাহ হিসেবে বাদশাহ সালমানের একমাত্র জীবিত ভাই আহমেদকে ক্ষমতা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, ‘যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভুল এবং দায়িত্ব জ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত ও নীতি নৈতিকতা’র কারণে দেশে ঐতিহাসিক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।’
এতে বলা হয়েছে, ‘সাংবাদিক জামাল খাশোগি, তুর্কি আল-জাসের ও সুলেইমান আল-ওয়েসকে মর্মান্তিক গুপ্তহত্যা ও বাড়তে থাকা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সৌদি আরবকে সঙ্কটের মধ্যে ফেলেছে।’
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দায়িত্বহীন নীতিমালা, সংস্কারপন্থীদের দমন, শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের গ্রেফতার, ইয়েমেন যুদ্ধ, কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ ও ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর সমালোচনা করেছে দেশটির এই বিরোধী শিবির। সৌদির এই বিরোধী জোটে ছয়টি বিরোধী রাজনৈতিক ও সাতটি স্বতন্ত্র দল রয়েছে।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড ঘিরে বৈশ্বিক শোরগোলের মাঝে গত ৩০ অক্টোবর সৌদিতে ফেরেন বাদশাহ সালমানের ভাই আহমদ বিন আব্দুল আজিজ। ওইদিন তাকে বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ভাতিজা ও দেশটির বর্তমান যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
সৌদি রাজপরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ প্রিন্স আহমেদ যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই তিনি দেশে ফেরেন।
মিডল ইস্ট আই বলছে, অতীতে বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচনা করায় দেশে ফেরার ব্যাপারে ভীত ছিলেন আহমেদ।
প্রিন্স অাহমেদ সৌদি আরবের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন কয়েক দশক। পরে ২০১২ সালে অল্পদিনের জন্য দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরে অবসরে যান তিনি। অবসর জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি কাটিয়েছেন লন্ডনে।
অনেক বিশ্লেষক বাদশাহর ভাইয়ের সৌদিতে ফেরাকে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।