খালেদা জিয়ার সাজার বিরুদ্ধে আপিল ও জামিনের সিদ্ধান্ত
নিউজ ডেস্ক : জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেয়া সাজার বিরুদ্ধে আপিল ও জামিন চাওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবেলার সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে। আগামী একাদশ নির্বাচনে দলের এ প্রধান যেন অংশ নিতে পারেন সে লক্ষেই এই আইনি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে বিএনপির শীর্ষ নেতা ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বৈঠকে অংশ নেয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র আইনজীবী জানান, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে মোট ১৭ বছরের সাজা দেয় পৃথক আদালত। যার ফলে তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাই সেই সাজার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। বৈঠকে সাজার বিরুদ্ধে আপিল ও জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’
তিনি বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতের দেয়া পাঁচ বছরের সাজা থেকে বাড়িয়ে দশ বছর করেন হাইকোর্ট। এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনো প্রকাশিত হয়নি। অনুলিপি প্রকাশিত হলে আমরা লিভ-টু আপিল (নিয়মিত আপিল) করব।
তিনি জানান, এর আগেই আমরা চেম্বার আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন (সিএমপি) ফাইল করব। পাশাপশি খালেদা জিয়ার জামিনও চাওয়া হবে। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়াকে দেয়া সাত বছরের সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল এবং জামিনও চাওয়া হবে। আগামি দুই-তিন দিনের মধ্যে আশা করছি ওই রায় প্রকাশিত হবে।
আগামি নির্বাচনে খালেদা জিয়া যেন অংশগ্রহণ করতে পারেন সেই লক্ষেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সন্ধা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত স্থায়ী এ বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
আদালতের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা রয়েছে, তার মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগে আছে ৫টি। সেগুলো হলো জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির মামলা। পাঁচটি মামলায়ই সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে (এক-এগারোর সময়) করা। অন্য ৩১টি মামলা ২০১৪ সালের পর বিভিন্ন সময়ে হয়েছে।
মূলত রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালন ও ঋণ খেলাপির অভিযোগে এসব মামলা হয়। পুলিশ, সরকারি দলের নেতা-কর্মী ও আইনজীবীরা এসব মামলা করেছেন। এর মধ্যে ২৬টি মামলা হয়েছে ঢাকায়। কুমিল্লায় তিনটি এবং পঞ্চগড় ও নড়াইলে একটি করে মামলা রয়েছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। এ দিন থেকে তিনি কারাগারে আছেন। সূত্র : যুগান্তর