পূজামণ্ডপে মা-বাবার প্রথম দেখা: রানী মুখার্জি
---
বিনোদন ডেস্ক : শুরু হয়েছে শারদীয়া দুর্গোৎসব। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এ উৎসবে সনাতন ধর্মাবলম্বী তারকারাও শামিল হন। বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রানী মুখার্জিও এর ব্যতিক্রম নন। ছোটবেলায় দুর্গাপূজার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অভিনয় করতেন। কিন্তু পরবর্তী জীবনে অভিনয় নিয়ে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় সেভাবে আর দুর্গোৎসবে শামিল হতে পারেন না।
সম্প্রতি ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে দুর্গাপূজা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন রানী। তিনি বলেন, ‘তিন বছর বয়স থেকে আমার পূজার স্মৃতি রয়েছে। সে সময় পারিবারিকভাবে দুর্গাপূজা করতাম। আমাদের পরিবারের প্রত্যেক শিশুদের মঞ্চে পারফর্ম করতে হতো, এটি বাঙালিদের জন্য অবশ্যই করণীয় একটি ব্যাপার ছিল। সুতরাং তিন বছর বয়স থেকেই আমি পারফর্ম করতাম। আমি একবার প্রজাপতি সেজেছিলাম, প্রভু কৃষ্ণও সেজেছি, পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনেক সংগীতনির্ভর এবং অন্যান্য নাটকে অভিনয় করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আপনি জানেন, বাঙালিরা বিশেষ করে প্রবাসী (যারা পশ্চিমবঙ্গে থাকেন না) বাঙালিরা ছেলেমেয়েদের সংস্কৃতি শেখানোর ব্যাপারে খুবই সচেতন। এজন্য সন্তানদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু না কিছু শিখতে হতো। আমাদের রবীন্দ্রসংগীত শিখতে হয়েছে এবং সবকিছুই দুর্গাপূজার মাধ্যমে। বাঙালিদের কাছে পাঁচ দিনের দুর্গাপূজা হচ্ছে দিওয়ালি, হোলি এবং ঈদের মিশ্রণ (হাসি)।’
‘দুর্ভাগ্যবশত এখন যখন আমি পরিবারিক দুর্গাপূজায় যাই, সেখানে ছোটখাটো ভিড় সৃষ্টি হয়। তবুও আমাকে মায়ের আশীর্বাদ নিতে হয় কারণ এছাড়া আমি এতো ভক্তের ভালোবাসা পেতাম না। মাঝে মাঝে এর বিপরীতও হয়। কারণ মায়ের আশীর্বাদে পূজা মণ্ডপে দুই মিনিট সময় কাটাতে পারি না। এরপরও আমি প্রসাদ পরিবেশনের জন্য একটু সময়ের জন্য হলেও মণ্ডপে যাওয়ার চেষ্টা করি। এটি আমার হৃদয়ের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই এটি করে আসছি এবং ভবিষ্যতে চালিয়ে যেতে চাই। আর সময়ের সাথে সাথে যদি আদিরাকে (মেয়ে) এটি করাতে পারি অনেক দারুণ ব্যাপার হবে। বছরে একবার পরিবারের সব সদস্যরা একই ছাদের নিচে একত্রিত হওয়ার ব্যাপারটি খুবই মজার।’ বলেন এ অভিনেত্রী।
তার মতো আদিরাও একই অভিজ্ঞতা পাবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে রানী মুখার্জি বলেন, ‘আমি জানি না কারণ ওই সময় সবকিছু নির্ভেজাল ছিল। এখন মিডিয়ার প্রচারণার মধ্যে আমাদের দুর্গাপূজা পালন করতে হয়। আমার পূজা পালনের সময়ও একটি ক্যামেরা সবসময় আমাকে অনুসরণ করে। আমার মনে হয় না আদিরা সেই অভিজ্ঞতাগুলো পাবে। কারণ সে যখন প্যান্ডেলে যায় তার দিকে অনেকের নজর থাকে, যেটা ছোটবেলায় আমাদের প্রতি ছিল না। যখন আপনি অনেকের মতোই একজন তখন অভিজ্ঞতাটাও একটু ভিন্ন হবে।’
মুখার্জি পরিবারের জন্যই কী দুর্গাপূজা বিশেষ উৎসব কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, কারণ দুর্গাপূজার উৎসবে আমার মা-বাবার প্রথম দেখা এবং প্রেম হয়। একজন সংগীতশিল্পী না আসায় আমার মা তার পরিবর্তে গান গেয়েছিলেন এবং শুনে বাবা তার প্রেমে পড়ে যান। আমি মনে করি এই উৎসব ঘিরে অনেক স্মৃতি রয়েছে।’
দুর্গাপূজায় খাবার নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘এ উৎসব নিয়ে আমার স্মৃতির মধ্যে রয়েছে, আমি সবাইকে খাবার পরিবেশন করতাম। কারণ এটি রীতি ছিল, যেই মুখার্জি বাড়িতে আসতেন পরিবারের অন্যান্যরা মিলে তাদের ভোগ পরিবেশন করতাম। পাঁচ দিন ধরে চলা পূজাতে অনেক পাগলামি হতো। এর মধ্যে নতুন পোশাক তৈরির বিষয়ও থাকত। দিওয়ালিতে যেমন সবাই নতুন পোশাক তৈরি করে, বাঙালিরা দুর্গাপূজায় পোশাক তৈরি করে। পাঁচ দিন সকাল, দুপুর, সন্ধ্যায় কোন পোশাক পরব তা নিয়ে অনেক ঘটনা ঘটত। সবকিছু মিলে অনেক মজা হতো।’
বর্তমান সময়ের দুর্গাপূজা নিয়ে রানী বলেন, ‘আমি এখন উৎসবের প্রস্তুতি করতে পারি না। কারণ যখন আমি শুটিং শুরু করি, তখন তো আমার প্রযোজককে বলতে পারি না, দয়া করে আমাকে দুর্গাপূজার জন্য পাঁচ দিনের ছুটি দিন। এজন্য বিগত ২০ বছর হয় আমাকে দেশের বাইরে থাকত হচ্ছে। শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। মাঝরাতে একনজর মায়ের প্রতিমা দেখার হয়তো সুযোগ হয়। তবে আমার মা-বাবা দুর্গাপূজার সঙ্গে যুক্ত থাকেন।’