দ্বীনদারদের বিচ্ছেদ নিয়ে কথা বললেন হ্যাপী
---
বিনোদন ডেস্ক : আলোচিত মডেল ও অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপী মিডিয়াজগৎ থেকে বিদায় নিয়েছেন অনেক আগেই। এখন তিনি রাজধানীর একটি কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছেন। মিডিয়াকে বিদায় জানালেও ফেসবুকে সব সময় হ্যাপী স্ট্যাটাস দেন। গতকাল সোমবার দুপুরে স্বামী ও স্ত্রীর বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে হ্যাপী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। মডেল-অভিনেত্রী অর্চিতা স্পর্শীয়ার বিচ্ছেদের খবর প্রচারের পরপরই হ্যাপী নিজের ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দেন। তবে সেখানে স্পর্শীয়ার কথা উল্লেখ করেননি হ্যাপী।
স্ট্যাটাসে হ্যাপী লিখেছেন, ‘দ্বীনদারদের ডিভোর্স হবে না, ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। এ ক্ষেত্রে দ্বীনদার বলে কথা না, বিভিন্ন কারণেই ডিভোর্স হতে পারে। যে কারোরই হতে পারে। হোক দ্বীনদার বা নয়। অনেকে ভাবেন যে, তারা দুজনই তো দ্বীনদার, তাহলে ডিভোর্স হবে কেন? আসলে হতেও পারে। এর মানে সে বা তারা খারাপ না। বাস্তব জীবন স্বপ্নের মতো সুন্দর হয় না। দ্বীনদারদের মধ্যেও ঝগড়াঝাঁটি হয়, অশান্তি হয়। সংসার মানেই এমন।’
‘দুটো মানুষ সম্পূর্ণ দুটি পরিবেশে বেড়ে ওঠে, মানসিকতা আলাদা থাকে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সবকিছু মানিয়ে নিতে পারে। আবার কেউ কেউ পারে না, আবার কারো কারো এত অমিল থাকে যে সেই সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া আজাবের মতো হয়ে যায়। তখন ডিভোর্স একমাত্র উপায় থাকে,’ হ্যাপী যোগ করেন।
স্ট্যাটাসে হ্যাপী বলেন, ‘যেমন এক স্বামী-স্ত্রী দুজনই দ্বীনদার, তারা দুজনেই আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহর হুকুম মানার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে ভালোমতো বুঝে উঠতে পারে না বা কেউ বুঝলেও করে না। যেমন স্বামী তার স্ত্রীকে নিজ থেকে ঘুরতে নিয়ে যায় না। অথচ শরিয়তে বাধাও নেই। তবুও নেয় না। একটা দ্বীনদার মেয়ের বিনোদন তার স্বামীই হয়। সে তো আর অন্য মেয়েদের মতো বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা-মাস্তি নিয়ে পড়ে থাকতে পারে না। সিনেমা-গান নিয়েও পড়ে থাকতে পারে না। তখন স্বামীও যদি তাকে না বোঝে, এই সিচুয়েশনে একটা মানসিক সমস্যা তৈরি হয়ে যায়।’
“স্ত্রী অনেক কাজ করলেও সেই স্বামী কখনো যদি তাকে না বলে, ‘এত কাজ করছ, তোমার তো কষ্ট হচ্ছে’ বা তার কষ্ট হচ্ছে এটা বোঝা, কথাটা অনেক ছোট। কিন্তু এই কথাটা মেয়েরা শুনলে হাজার কষ্টও পানি হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে যদি উল্টো এসব না বুঝে এমন ধারণা করা হয় যে, ‘সংসারে আর কাজ কী!’ তখন বিষয়টা সত্যই কষ্টের।”
‘স্ত্রীর বাবা-মাকে যদি প্রায়ই অসম্মান করে কথা বলা হয়, তখন কিন্তু মেয়েটার প্রচণ্ড কষ্ট হয়। আপনার বাবা-মা আপনার কাছে যেমন, তার কাছেও তেমন। ছোটবেলা থেকে আদরে, আদর্শে, শত কষ্ট সহ্য করেও আপনার স্ত্রীকে বড় করেছে, তাদেরই যদি অপমান করা হয় তখন সে আপনাকে কখনো মন থেকে ভালোবাসতে পারবে না, এটা খুব স্বাভাবিক।’
‘স্বামী যদি অফিস করে এসে মোবাইল নিয়েই সময় ব্যয় করেন, তখন স্ত্রী কী করবে? স্ত্রীর সব অপছন্দনীয় কাজ যদি স্বামী করেন বা স্বামী যদি কুরুচিপূর্ণ কাজ করে, তখন স্ত্রী মোহাব্বতের সাথে বোঝানোর পরও যদি স্বামী উল্টো খারাপ ব্যবহার করে, তখন একটা মেয়ের কেমন লাগে! স্ত্রীর কিছু খেতে ইচ্ছা করছে, ওমনি মুখের ওপর না করে তার মনটাই ভেঙে দেওয়া হলো, তখন তার কেমন লাগবে? এসব যদি চলতেই থাকে, তাহলে কিন্তু সেই সংসার করা আজাবে পরিণত হয়।’
‘অথচ স্বামী পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে নামাজ পড়ে। সুন্নতি লেবাসে চলে। সবাই তো পরিপূর্ণ ভালো হয় না। তো, এসব বিষয়ে সমস্যা হতে থাকলে তখন কিন্তু বিয়েটা জান্নাতের বদলে জাহান্নামে যাওয়ার উসিলা হয়ে যেতে পারে। কারণ এসব পরিস্থিতিতে নানা রকম কথা বলা হয়ে যায়, যা কবিরা গুনাহ হয়ে যায়, কখনো কখনো আরো মারাত্মক অবস্থা তৈরি হয়।’
‘আমরা সবাই বিয়ে করি গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য, সে ক্ষেত্রে বিপরীত কোনো কিছু কাম্য নয়। অনেক সহাবি/সাহাবারও তালাক হয়েছে, তারা আবার বিয়েও করেছে, এমন ঘটনা অনেক আছে। এটা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু আমাদের বর্তমান সমাজে কারো ডিভোর্স হলে আমরা আড়চোখে দেখি। তা একদমই শরিয়তে অপছন্দনীয় কাজ।’
‘হয়তো তারা পরবর্তী জীবনে ভালো থাকে বা একা থাকে। আমাদের উচিত না যাদের ডিভোর্স হয়, তাদের সমালোচনা করা। বনিবনা একান্ত না হলে ডিভোর্সের পথই খোলা থাকে। যদিও এটা শরিয়তে নিকৃষ্টতম জায়েজ। মেয়েদের বুঝ ছেলেদের চেয়ে কম থাকে। সংসারের দায়িত্ব এ জন্য ছেলেদেরই বেশি থাকে। তারা যখন সংসার চালনায় শরিয়তের বিধান মানে না, তখনই সমস্যার সূচনা হয়। যেটা আমাদের সবার জন্য কল্যাণকর, আল্লাহপাক যেন সেটাই করেন। লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!’
গত বছরের অক্টোবরে হঠাৎ করে বিয়ে করেন হ্যাপী। তাঁর স্বামী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। পারিবারিকভাবে তাঁদের বিয়ে হয়। এদিকে হ্যাপীর বদলে যাওয়া জীবন নিয়ে সম্প্রতি একটি বই প্রকাশ করেছে মাকতাবাতুল আযহার প্রকাশনা। বইটির নাম ‘হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ’। সাক্ষাৎকারধর্মী বইটি লিখেছেন সাদিকা সুলতানা সাকী।
২০১৫ সালে দেশের তারকা ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের সঙ্গে হ্যাপীর সম্পর্ক নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক সংবাদ প্রকাশ হয়। উভয়ের সম্পর্কের বিষয়টি শেষে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এ কারণে রুবেলকে স্বল্প সময়ের জন্য কারাগারেও যেতে হয়। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে বিশ্বকাপগামী দলে যোগ দেন রুবেল।