বুধবার, ১২ই জুলাই, ২০১৭ ইং ২৮শে আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

সেশেলস ও মরিশাস দ্বীপ দু’টি কিনেছে ভারত

AmaderBrahmanbaria.COM
জুলাই ১০, ২০১৭

---

জলে এবং স্থলে বেইজিংয়ের উপর পাল্টা চাপ বাড়াতে মরিয়া নরেন্দ্র মোদী সরকার। প্রায় এক মাস ধরে ভুটান সীমান্তের ডোকালা-য় দু’দেশের সেনা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। উত্তেজনার পারদ ক্রমশ বাড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। স্থির হয়েছে, কূটনৈতিক পদ্ধতিতে শান্তিসূত্র খোঁজার চেষ্টার পাশাপাশি চীনের উপরে চাপ বাড়িয়ে যাওয়া হবে। ডোকালা-য় তাঁবু গেড়ে ভারতীয় সেনাকে প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে সেনা আরও বাড়ানো হবে। সীমান্তে মোতায়েন এই বাহিনীর জন্য স্থায়ী ভাবে খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের লাইনও চালু করা হয়েছে। দীর্ঘ সময়ের জন্য এখানে ঘাঁটি স্থাপনের ব্যবস্থা নিচ্ছে ভারতীয় সেনা।

অন্য দিকে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণে নিজেদের কৌশলগত উপস্থিতি আরও বাড়ানোর জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত। মরিশাস এবং সেশেলস-এ আপাত শান্ত দু’টি সবুজ দ্বীপ কিনেছে ভারত। সেখানে বিমানঘাঁটি এবং বন্দর গড়ার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রের খবর, চীন যেভাবে ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ নীতির মাধ্যমে ভারতকে ঘিরে নজরদারি তৈরি করার কৌশল নিয়েছে, তার পাল্টা হিসেবে এই দ্বীপ দু’টিতে ঘাঁটি তৈরি করতে চাইছে ভারত। সেশেলস-এর ‘অ্যাসাম্পশন দ্বীপ’ এবং মরিশাসের ‘অ্যাগালেগা দ্বীপ’-এর অবস্থান এমনই যে সেখান দিয়ে বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ জ্বালানি বহনকারী জাহাজ যাতায়াত করে। দ্রুত আর্থিক বৃদ্ধির পথে ধাবমান চীন যে ভারত মহাসাগরে তার ডানা বিস্তার করতে চাইছে সেটা ভারতের নজরে রয়েছে বেশ কিছু দিন ধরেই। পশ্চিম এশিয়া থেকে আসা তেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’-এর কাছেই এই সেশেলস ও মরিশাসের দ্বীপ দু’টি। বেইজিং এখানেও তার নৌ-বাহিনীর বহর গত কয়েক বছরে অনেকটাই বাড়িয়েছে। মলদ্বীপে ঘাঁটি স্থাপন করেছে।

মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রে ভারতের কাছ গত বছরই খবর এসেছিল যে সেশেলস-সহ ভারত মহাসাগরের বেশ কিছু দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জন্য সক্রিয়তা শুরু করেছে শি জিনপিং সরকার। আমেরিকার কাছেও বিষয়টি উদ্বেগজনক। কারণ, এই অঞ্চলে মরিশাসেরই দিয়েগো গার্সিয়া-তে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। ব্রিটেন এই দ্বীপ বেসরকারি ভাবে নিয়ন্ত্রণ করলেও ওই ঘাঁটিটি মার্কিন সেনারই অধীনে। এই বিষয়ে ব্রিটেন এবং আমেরিকার মধ্যে অলিখিত চুক্তিও রয়েছে। সম্প্রতি সেখানে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে ড্রাগন। একের পর এক পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করছে তারা মরিশাসের সঙ্গে জোরালো দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে।

ভারত ঠিক এখানেই নিজেদের বন্দর গড়ার মোড়কে সামরিক শক্তিকে জোরদার করার কৌশল নিয়েছে। তাতে অবশ্য অদূর ভবিষ্যতেই ভারত মহাসাগর এলাকার পারদ চড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দিল্লির বিশেষজ্ঞ সংস্থা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন-এর একজন প্রতিনিধি দর্শনা বড়ুয়ার কথায়, ‘‘নিরাপত্তা এবং কৌশলগত প্রশ্নে ভারত এবং চীনের মধ্যে আস্থার অভাব ক্রমশ বাড়ছে। চীন চেষ্টা করছে ভারত মহাসাগরে তাদের উপস্থিতি বাড়াতে। ভারত স্বাভাবিক ভাবেই পাল্টা এগোচ্ছে। ’’
ডোকালা-র পরিস্থিতির জেরে ত্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠা ভারত-চীন সম্পর্কের প্রভাব শিগগিরই অন্যত্রও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের।

এ জাতীয় আরও খবর