ঘাটতি মেটাতে আমদানি হচ্ছে আরও আড়াই লাখ টন চাল
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে চালের মজুদ এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে। তাই খাদ্য ঘাটতি মেটাতে আরও দুই লাখ টন চাল আমদানি করছে সরকার। এ সংক্রান্ত দুটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বুধবার বৈঠকে প্রস্তাব দুটি উপস্থাপন করা হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
গত ২৫ মে খাদ্যশস্য পরিস্থিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী চালের মজুদ দুই লাখ ২৪ হাজার টন। চালের এ মজুদকে ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতে কখনো এত সর্বনিম্ন পর্যায়ে চাল মজুদ ছিল না। তাই মজুদ বাড়াতে ৯০৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ভিয়েতনাম থেকে সরকারিভাবে (জিটুজি পদ্ধতি) আরও আড়াই লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আড়াই লাখ টনের মধ্যে ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল। বাকি দুই লাখ টন আতপ চাল আমদানি করা হচ্ছে।
এদিকে আলাদা দুটি আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে এক লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৫০ হাজার টন সাধারণ এবং বাকি ৫০ হাজার টন আতপ চাল। এজন্য মোট ব্যয় হবে ৩৪৬ কোটি ৬২ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এ প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. কায়কোবাদ হোসেন বলেন, প্রথামিকভাবে আড়াই লাখ টন চাল ভিয়েতনাম থেকে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারি ক্রয় কমিটিতে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে আরও এক লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া থাইল্যান্ড থেকেও চার লাখ টন আমদানির প্রক্রিয়া চলছে।
ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানির বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. কায়কোবাদ হোসেন স্বাক্ষরিত প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বিগত কয়েক বছরে ধানের বাম্পার ফলনের কারণে চালের ক্ষেত্রে উদ্ধৃত্ত দেশে পরিণত হয়। কিন্তু এ বছর হাওরে আকস্মিক বন্যায় বোরো জমি তলিয়ে যাওয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলে অতিবৃষ্টি, শিলা বৃষ্টি, ব্লাস্ট রোগ প্রভৃতি কারণে চালের উৎপাদন কমে গেছে। তাই চালের বাজারে অস্থিতিশীল আবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে দেশেরে সর্বত্র বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। এ সময় চালের বাজার স্বাভাবিকভাবে নিম্নমুখী থাকার কথা থাকলেও তা বেশ ঊর্ধ্বমুখী। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বোরো ফসল ঘরে তোলার ক্ষেত্রে আশঙ্কা দেখা দেয়ায় অভ্যন্তরীণ সংগ্রহে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অভ্যন্তরীণ বাজারমূল্য স্থিতিশীল এবং সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন রাখার লক্ষ্যে জরুরিভাবে চাল আমদানির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, সার্বিক বিবেচনায় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের জন্য ৬০:৪০ অনুপাতে প্রতি মে. টন ৪৩০ মার্কিন ডলার দরে দুই লাখ মে. টন আতপ চালের জন্য ৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারে (প্রতি ডলার সম্ভব্য ৮৩ টাকা হিসেবে) বা ৭১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকায় ভিয়েতনাম থেকে চাল ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদনে কমিটির নিকট উপস্থাপন করা হল।
অপর এক প্রস্তাবে প্রতি মে. টন ৪৭০ মার্কিন ডলার দরে ৫০ হাজার মে. টন সিদ্ধ চাল ক্রয়ের জন্য দুই কোটি ৩৫ লাখ ডলার (প্রতি ডলার সম্ভব্য ৮৩ টাকা হিসেবে) বা ১৯৫ কোটি ৫ লাখ টাকায় একই দেশ থেকে সিদ্ধ চাল ক্রয় করার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়।
দুই প্রস্তাবেই বলা হয়েছে, খাদ্যমন্ত্রী প্রস্তাব দুটি দেখেছেন এবং অনুমোদন করেছেন। একই সঙ্গে প্রস্তাব দুটি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সানুগ্রহ অনুমোদনের নিমিত্তে উপস্থাপনের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।