g শিশু ছেলেকে বলাৎকার করায় কলেজছাত্রকে ৬ টুকরো! | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

মঙ্গলবার, ১৮ই জুলাই, ২০১৭ ইং ৩রা শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

শিশু ছেলেকে বলাৎকার করায় কলেজছাত্রকে ৬ টুকরো!

AmaderBrahmanbaria.COM
জুন ৭, ২০১৭
news-image

---

নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদী সরকারি কলেজের ছাত্র মাহফুজ সরকার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে রাবেয়া ইসলাম রাবু নামের এক গৃহবধূ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নরসিংদীর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক ফেরদৌস ওয়াহিদের কাছে তিনি জবানবন্দি দেন।

রাবেয়ার তথ্য মোতাবেক, নরসিংদী থানার পুলিশ মাহফুজকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও তাঁর ব্যবহৃত কাপড়-চোপড় উদ্ধার করে। তবে মাহফুজের খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি।

নিহত মাহফুজ সরকার নরসিংদী শহরের বৌয়াকুর এলাকার আবদুল মান্নান সরকারের ছেলে।

মাহফুজের বড় ভাই অ্যাডভোকেট মোস্তফা সরকার রাসেল জানিয়েছেন, মাহফুজ নরসিংদী সরকারি কলেজের বিএ (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের নিয়মিত ছাত্র ছিলেন। গত ২৬ মে শুক্রবার বিকেলে মাহফুজ প্রতিদিনের মতো বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর মাহফুজ আর বাড়ি ফেরেননি। তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে ২৭ মে নরসিংদী সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

পরদিন মাহফুজের মুঠোফোন থেকে তাঁর বড় ভাই অ্যাডভোকেট রাসেলের মুঠোফোনে একটি কল আসে। রাসেল জানান, ওই ফোন নম্বর থেকে জানানো হয়, মাহফুজ তাদের হেফাজতে রয়েছে। এই নম্বর থেকে এটাই তাদের শেষ কল। পরে অন্য নম্বর থেকে কল দেওয়া হবে। মাহফুজকে ফিরে পেতে হলে তাদের এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে, নতুবা তাঁকে হত্যা করা হবে। এ কথা বলে রাসেলকে চারটি বিকাশ ও তিনটি রকেট নম্বর দেওয়া হয়।

এরপর রাসেল ও তাঁর বাবা আবদুল মান্নান সরকার মাহফুজকে বাঁচানোর জন্য তিনটি রকেট নম্বরে এক লাখ টাকা পরিশোধ করেন। এরপরও তারা মাহফুজকে মুক্তি দেয়নি। পরে তাঁরা নরসিংদী সদর থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন।

যেভাবে ধরা পড়লেন প্রবাসীর স্ত্রী
মাহফুজের পরিবারের সদস্যরা জানান, ২৮ মে নরসিংদী শহরের রাঙামাটিয়া মহল্লার প্রবাসী আল-মামুনের স্ত্রী ইনডেক্স প্লাজার এমডি গার্মেন্টস নামের একটি দোকানের মালিক রাবেয়া ইসলাম রাবু মাহফুজদের বাড়িতে তাঁর নিখোঁজের ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। মাহফুজের বাবা-মা ও ভাই-বোনদের কাছে সহানুভূতি প্রকাশ করে রাবু জানান যে, মাহফুজকে তিনি খুবই আদর-স্নেহ করতেন। মাহফুজ তাঁর কাছ থেকে টাকা ধার নিতেন, আবার দিয়ে দিতেন। তাঁর সঙ্গে খুবই সুসম্পর্ক ছিল। এসব কথা বলে রাবু মাহফুজকে খোঁজাখুঁজি করার জন্য বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন ব্যক্তির নাম-ঠিকানা দেন। জানান যে এসব ব্যক্তিদের সঙ্গে মাহফুজের শত্রুতা ছিল। রাবুর এ ধরনের কথা-বার্তায় মাহফুজের বাবা-মা ও ভাই-বোনদের মনে সন্দেহ হয়। তাঁরা ঘটনাটি অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নরসিংদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নূরে আলমকে জানান।

‘ছোট ভাইয়ের জন্য জীবন গেলেও আপত্তি নাই’
মাহফুজের পরিবার ও নরসিংদী সদর মডেল থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এসআই নূরে আলম ঘটনা বিস্তারিত জেনে রাবেয়া ইসলাম রাবুকে ফোন করে থানায় আসতে বলেন। পুলিশের ফোন পেয়ে রাবু অনেকটা বিচলিত হয়ে পড়েন। পরে তিনি মাহফুজদের বাড়িতে গিয়ে বলেন, ‘আমি আপনাদের সহযোগিতা করলাম। আর আপনারা আমার কথা পুলিশকে বলে দিলেন।’ এই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে আবার বলতে থাকেন, ‘অসুবিধা নেই। মাহফুজ আমার ছোট ভাই। তার জন্য জীবন গেলেও আমার কোনো আপত্তি নেই।’ এই সব কথা বলে রাবু তাঁর আরো দুই বোনকে নিয়ে নরসিংদী সদর মডেল থানায় গিয়ে এসআই নূরে আলমের সঙ্গে দেখা করেন।

কথাবার্তার একপর্যায়ে এসআই নূরে আলম তাঁকে থানায় আটকে রেখে দুই বোনকে বিদায় করে দেন। এরপর এসআই নূরে আলম তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু তিনি কোনো ক্লু দেননি।

নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের জানান, পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহরিয়ার আলম ও তিনি যৌথভাবে রাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এতেও রাবু পুলিশকে কোনো ধরনের ক্লু দেননি। পরে সোমবার রাতে পুলিশ তাঁকে নরসিংদী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে পুলিশ সুপার আমেনা বেগমের সামনে উপস্থাপন করেন। পুলিশ সুপার রাবুর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথাবার্তা বলেন। তাঁর মনে সন্দেহ আরো ঘনীভূত হয়। একপর্যায়ে পুলিশ সুপার রাবুকে গভীরভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি মাহফুজকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরদিন মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ রাবুকে নরসিংদীর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক ফেরদৌস ওয়াহিদের আদালতে হাজির করে। রাবু হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

৬ টুকরা করার পর লাশ মেঘনায়
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাবু স্বীকার করেন- ২৬ মে রাতে তিনি মাহফুজকে তাঁর বাড়িতে ডেকে নেন। ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে পূর্বপরিকল্পিতভাবে রাবু তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় রাবুর ভাগ্নে শাহাদাৎ হোসেন রাজু পেছন দিক থেকে মাহফুজকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। মাহফুজের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি ও রাজু মিলে মৃতদেহ ছয় টুকরো করে ঘরে থাকা ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখেন। পরের দিন শনিবার ফ্রিজ থেকে খণ্ড-বিখণ্ড দেহ একটি ট্রলি ব্যাগে ঢোকান। এরপর নৌকা ঘাটে গিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে ট্রলি ব্যাগভর্তি লাশটি নিয়ে পাশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দী এলাকায় মেঘনা নদীর গভীর পানিতে ফেলে দেন।

সদর মডেল থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, রাবুর স্বীকারোক্তির পর পুলিশ মাহফুজকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও মাহফুজের গায়ে থাকা কাপড়চোপড় উদ্ধার করেছে। তবে মাহফুজের লাশ উদ্ধার অভিযান এখনো শুরু হয়নি। রাবুকে রিমান্ডে এনে ঘটনাস্থল শনাক্ত করার পর ডুবুরি দল নিয়ে তল্লাশি চালানো হবে।

যে কারণে হত্যা
পুলিশ ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাবেয়া আক্তার রাবু জবানবন্দিতে বলেন, তিনি নরসিংদী শহরের রাঙামাটিয়া মহল্লার শাহ আলম মোল্লার মালিকানাধীন বাড়ির পঞ্চম তলায় ভাড়া থাকেন। কলেজছাত্র মাহফুজ তাঁর পূর্বপরিচিত। সে সূত্রে তাঁর বাসায় মাহফুজের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। এ সুযোগে সম্প্রতি মাহফুজ রাবুর ছোট শিশু ছেলেকে বলাৎকার করেন। এই ক্ষোভে তিনি মাহফুজকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।