‘আদালতকে ডিঙিয়ে ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন সম্ভব না’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :আদালত যদি প্রত্যাখ্যান করে তবে কংগ্রেসের মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিতর্কিত মুসলিম নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না বলে মনে করছেন রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল। রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সিএনএন-এর ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ম্যাককনেল এ কথা জানিয়েছেন।
সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের এ নেতা বলেন, ‘আমি মনে করি প্রেসিডেন্ট যে নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন তা বৈধ নাকি বৈধ নয় তা আদালতই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে এবং আমরা আদালতের আদেশ অনুসরণ করব।’
সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ট্রাম্পের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আদালতের স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর এমন মন্তব্য করলেন ম্যাককনেল। শনিবার স্থগিতাদেশ তুলে নিতে ট্রাম্প প্রশাসনের করা আপিলটিও আদালত খারিজ করে দেয়।
আর এর প্রতিক্রিয়ায় বিচারপতিকে ‘তথাকথিত বিচারপতি’ উল্লেখ টুইটারে ক্ষোভ জানান ট্রাম্প। তার দাবি, এ মত হাস্যকর এবং তা পাল্টে যাবে।
তবে ম্যাককনেল মনে করেন, কেবল বিচারকদের এককভাবে সমালোচনা করা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি সমালোচনার জন্য এককভাবে বিচারকদের বেছে না নেওয়াই ভালো। মাঝে মাঝে আমরা সবাই নিরাশ হয়ে পড়ছি।’
নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে ম্যাককনেল বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কারও পূর্ব রেকর্ড যাচাই এবং কাউকে ভ্রমণে বাধা কিংবা ধর্মীয় যাচাই বাছাইয়ের মধ্যে ব্যবধান রয়েছে। আমাদের এ ধরনের কাজ এড়ানো প্রয়োজন।’
তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কণ্ঠে শোনা গেছে ভিন্ন সুর। এবিসি’র ‘দিস উইক’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাইক পেন্স বলেন, ‘খোলাখুলিভাবে বলতে গেলে সংবিধান ও ফেডারেল আইনের আওতায় কোনও প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে, কাকে দেওয়া হবে না তা নির্ধারণের এখতিয়ার প্রেসিডেন্টের আছে। এবং আমরা এর ভিত্তিতে বিচারকের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করতে যাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, গত ২৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) এক নির্বাহী আদেশে তিন মাসের জন্য ৭ মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে স্থগিতাদেশ দেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলা হয়, এ সাত দেশের নাগরিকরা তিন মাস যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশগুলো হল-ইরাক, ইরান, সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া, সুদান, সোমালিয়া। এই আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মুসলিমদের বদলে খ্রিস্টান ও সংখ্যালঘুদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়।
নির্বাহী আদেশের প্রথম দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হয় মুসলমানরা। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। সংস্কৃতি কর্মীরা এর প্রতিবাদ জানান। নোবেল বিজয়ী শিক্ষা অধিকারকর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতিষ্ঠাতা, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ট্রাম্পের এ নিষেধাজ্ঞাকে মুসলিমবিরোধী নিষেধাজ্ঞা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে অস্থায়ী স্থগিতাদেশ দেয় সিয়াটলের আদালত। ট্রাম্পের মুসলিমবিরোধী নিষেধাজ্ঞায় সিয়াটলের সেই আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। শনিবার শেষ রাতের দিকে ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে তা পুনর্বহালের আবেদন জানায়। আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের এই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
খারিজের আদেশে আদালত জানিয়েছে, চূড়ান্ত শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার ওপর স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। হোয়াইট হাউস ও যুক্তরাষ্ট্রকে আরও যুক্তি-প্রমাণ হাজির করার জন্য সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন।