অনলাইন ডেস্ক : বাতাসে ভেসে বেড়ানো ধুলাবালি আর আবর্জনার কারণে অ্যাজমা বাড়ে। অনেকের অ্যাজমা না থাকলেও শ্বাসকষ্ট হয়। শুষ্ক মৌসুমে সাধারণত রোগটির প্রকোপ বাড়ে। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ। লিখেছেন ডা. মিনহাজ উদ্দিন আহমেদ
হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা নামে রোগটি সাধারণের কাছে পরিচিত। এটি আসলে শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক প্রদাহজনিত রোগ। এতে শ্বাসটান (সাঁ সাঁ শব্দে শ্বাস ফেলা), শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ ও কাশি হয়। এসব লক্ষণ সাধারণত রাতে ও সকালে বেশি দেখা যায়।
অ্যাজমা হওয়ার অন্যতম কারণ অ্যালার্জেন বা যা দিয়ে অ্যাজমা হয়। কিছু অ্যালার্জেন আসলে আমাদের আশপাশেই থাকে। ঘরের মধ্যেও এর বসবাস। যেমন—ঘরের কার্পেট, পাপোশের ধুলা, অতি ক্ষুদ্র ময়লা, কুকুর-বিড়ালজাতীয় পোষা প্রাণী, তেলাপোকা, ছত্রাক ইত্যাদি থেকে নিঃসৃত পদার্থ ও মল, যার কারণে শ্বাসনালি সরু হয়ে যায়, প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং শ্বাসকষ্ট হয়। এগুলো ছাড়াও অ্যাসপিরিনজাতীয় ওষুধ এবং অতিরিক্ত ব্যায়ামও অ্যাজমা সৃষ্টি করতে পারে। রোগের গভীরতা ও স্থায়িত্ব যত বাড়ে, শ্বাসতন্ত্রও তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শ্বাসনালির দেয়াল শক্ত হয়ে যায় এবং শ্বাসনালির সংকীর্ণতা স্থায়ী রূপ লাভ করে। ফলে অ্যাজমায় দীর্ঘদিন আক্রান্ত থাকলে শেষ পর্যায়ে ওষুধ আর ভালো কাজ করে না।
উপসর্গ
♦ শ্বাসটান বা শ্বাসে সাঁ সাঁ শব্দ হওয়া
♦ শ্বাসকষ্ট
♦ বুকে চাপ অনুভব
♦ কাশি
সাধারণ সর্দিকাশি থেকে অ্যাজমা আলাদা। ঠাণ্ডা আবহাওয়া, অ্যালার্জি, দূষিত পদার্থ ও ধুলা-ময়লা এবং কিছু ভাইরাস অ্যাজমা বাড়ায়। অ্যাজমার কাশি ও শ্বাসকষ্টের কারণে রোগীর রাতে ঘুমের সমস্যা হয়। একে ‘নকটারনাল অ্যাজমা’ বলে। আবার কখনো কখনো কাশি প্রধান উপসর্গ হয়ে দেখা দেয়। একে ‘কফ ভেরিয়েন্ট অ্যাজমা’ বলে। কিছু ওষুধ, যেমন—বেটা ব্লকার (উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ), ব্যথার ওষুধ, খাওয়ার বড়ি, মদপান, সুপারি সেবন অ্যাজমা বাড়ায়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
উপসর্গ দেখে অ্যাজমা রোগ নিরূপণ করা হয়। এ ছাড়া স্পাইরোমিটার, বুকের এক্স-রে, অ্যালার্জিক স্ট্যাটাসও পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা
অ্যাজমা দীর্ঘমেয়াদি রোগ। তাই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখলেই বেশির ভাগ রোগী ভালো থাকে। রোগের গতি-প্রকৃতি ও নিয়ামক সম্পর্কিত বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবং তা এড়িয়ে চলা এ রোগে ভালো থাকার উপায়। কিছু কিছু পেশা সরাসরি অ্যাজমা রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত; যেমন— ধান-চাল, আটা-ময়দার কারখানা, গাছ বা কাঠ চেরাইয়ের কাজ, গবাদি পশুর কাজ, রুটি-কেক তৈরির শ্রমিক, কেমিক্যাল-রং মিস্ত্রি ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করে কাজ করা বাঞ্ছনীয়। অ্যাজমা রোগে চিকিৎসকরা সালবিউটামল, অ্যামাইনোফাইলিন, স্টেরয়েড, মন্টিলুকাস্ট, নেবুলাইজার, ইনহেলার—এমন অনেক ধরনের ওষুধ রোগীর অবস্থা বুঝে দিয়ে থাকেন।
গর্ভাবস্থায় অ্যাজমা
♦ গর্ভাবস্থায় এক-তৃতীয়াংশ অ্যাজমা রোগীর অ্যাজমা আরো বাড়ে। এক-তৃতীয়াংশ একই রকম থাকে এবং বাকি এক-তৃতীয়াংশ উন্নতি লাভ করে।
♦ প্রসবকালে নব্বই ভাগ রোগীর কোনো অ্যাজমা উপসর্গ থাকে না।
♦ সাধারণ অবস্থায় অ্যাজমা রোগে যেসব ওষুধ ব্যবহৃত হয়, যেমন—সালবিউটামল, স্টেরয়েড, ইনহেলার ও থিওফাইলিন, মুখে খাওয়ার প্রেডনিসোলোন ও ক্রোমোনস ইত্যাদি গর্ভাবস্থায় নিরাপদ।
♦ মন্টিলুকাস্টজাতীয় ওষুধকেও গর্ভাবস্থায় নিরাপদ বলে মেনে নেওয়া হয়।
♦ স্তন্যদায়ী মায়েদের ক্ষেত্রেও এসব ওষুধ নিরাপদ।
♦ তবে গর্ভকালীন অতিরিক্ত বমি, উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-একলাম্পশিয়া, যোনিপথে রক্তক্ষরণ, প্রসব জটিলতা, গর্ভস্থ শিশুর বাধাপ্রাপ্ত বৃদ্ধি, কম ওজনের শিশু, নির্ধারিত সময়ের আগে জন্মানো শিশু ইত্যাদি ক্ষেত্রে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ কষ্টসাধ্য।
অ্যাকিউট সিভিয়ার অ্যাজমা
♦ রোগী যদি মিনিটে ২৫ বারের বেশি শ্বাস নেয়।
♦ নাড়ির গতি যদি মিনিটে ১১০ বারের বেশি হয়।
♦ এক নিঃশ্বাসে রোগী যদি সম্পূর্ণ বাক্যে কথা শেষ করতে না পারে।
হতে পারে প্রাণহানি
♦ রোগী যদি নির্জীব হয়ে পড়ে।
♦ শরীর যদি নীল বর্ণ ধারণ করে।
♦ রোগী শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করেও যদি নিতে না পারে।
♦ নাড়ির গতি যদি একেবারে কমে যায় অথবা অতিরিক্ত বেড়ে যায়।
♦ যদি রক্তচাপ কমে যায়।
♦ রোগী যদি ডাকলেও সাড়া না দেয়।
♦ রোগী যদি কোমায় চলে যায়।
জরুরি মুহূর্তে করণীয়
হঠাৎ অ্যাজমা অ্যাটাক হলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে অক্সিজেন, নেবুলাইজারসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসা দিতে হবে। হাসপাতাল থেকে ছাড় পাওয়ার পরও রোগীকে নিয়মিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত।
ইনহেলার নেওয়ার নিয়ম
♦ প্রথমে ক্যাপ সরিয়ে নিয়ে ইনহেলারটি ভালোভাবে ঝাঁকাতে হবে।
♦ ধীরে ধীরে শ্বাস ছেড়ে মাউথ পিস মুখে লাগাতে হবে।
♦ মাথা পেছনের দিকে কিছুটা বাঁকা করে নেওয়া উচিত।
♦ একই সঙ্গে গভীর শ্বাস নেওয়া এবং ক্যানিস্টারে চাপ দিয়ে শ্বাসের সঙ্গে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
♦ তারপর ১০ সেকেন্ড শ্বাস বন্ধ রাখতে হবে।