নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর গুলিস্তানে অবৈধ দোকান উচ্ছেদের সময় মহানগর ছাত্রলীগের দুই নেতা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ বিষয়ে কোনো মামলা বা জিডিও হয়নি। শুধু হকার উচ্ছেদের বিষয়ে জিডি করেছে পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার যোগাযোগ করা হলে পুলিশ জানায়, ছাত্রলীগের নেতা সাব্বির হোসেন ও আশিকুর রহমান কোথায় ওই অস্ত্র পেয়েছিলেন, তা তদন্ত করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালত এই উচ্ছেদ অভিযান চালান। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা সাব্বির ও আশিকুর পিস্তল ও রিভলবার দিয়ে পুলিশ-র্যাবের সামনেই হকারদের ধাওয়া করেন এবং ফাঁকা গুলি ছোড়েন। সাব্বির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও আশিকুর ওয়ারী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। উচ্ছেদ অভিযানের সময় হকারদের সঙ্গে ডিএসসিসির কর্মচারী ও একদল যুবকের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপকমিশনার তারেক বিন রশিদ বলেন, সাব্বির ও আশিকুরের ব্যাপারে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশের একাধিক দল এই অস্ত্র ব্যবহারের ব্যাপারে অনুসন্ধান করছে। আগ্নেয়াস্ত্র অবৈধ হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর অস্ত্র বৈধ হলেও অবৈধভাবে ব্যবহারের জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারে সাব্বিরের বাসা। তিনি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ধানমন্ডি ক্যাম্পাসের আইন বিভাগের ছাত্র। আর আশিকুর ওয়ারীর র্যাঙ্কিন স্ট্রিটে থাকেন। তিনি ওয়ারীর একটি কলেজ থেকে এবার উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন।
গতকাল সিদ্দিকবাজার ও র্যাঙ্কিন স্ট্রিটে গেলে এলাকাবাসী এবং আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, সাব্বির ও আশিকুরের রিভলবার ও পিস্তলের লাইসেন্স নেই। তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র অবৈধ। ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার পর তাঁদের হাতে এই অবৈধ অস্ত্র এসেছে। তাঁরা প্রকাশ্যে এসব আগ্নেয়াস্ত্র বহন করেন। তাই এলাকাবাসী ভয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেনের ব্যক্তিগত কার্যালয় ১৩১ নম্বর সিদ্দিকবাজারের রোজ মেরিনাস মার্কেটের দ্বিতীয় তলায়। গতকাল দুপুরে ওই কার্যালয়ে গেলে কার্যালয়টি তালাবদ্ধ দেখা যায়। সিদ্দিকবাজারের স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এক-দেড় বছর আগেও সাব্বিরকে তাঁরা চিনতেন না। ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতা হওয়ার পর তিনি সিদ্দিকবাজার এলাকার মার্কেট থেকে চাঁদাবাজি শুরু করেন। এলাকায় প্রায়ই সঙ্গীদের নিয়ে মোটরসাইকেল মহড়া দেন।
আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর সাব্বির একটি দোকান দখল করে কার্যালয় নির্মাণ করেন। এখানেই তিনি কর্মী-বাহিনী নিয়ে নিয়মিত আড্ডা দেন।
অস্ত্রের লাইসেন্স না থাকলেও কোথায় অস্ত্র পেলেন—জানতে গতকাল বিকেলে যোগাযোগ করা হলে সাব্বির হোসেন কোনো মন্তব্য না করে ফোন কেটে দেন। আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সাব্বির বলেছিলেন অস্ত্রের প্রসঙ্গটি এড়ানো যায় কি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকী গতকাল বলেন, সাব্বিরের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই। তাঁর অবৈধ অস্ত্রের খোঁজ পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওয়ারীর স্থানীয় লোকজন জানান, ওয়ারীসংলগ্ন কাপ্তানবাজার এলাকায় আশিকুর তাঁর সহযোগীদের দিয়ে চাঁদাবাজি করান। তবে গতকাল তাঁকে এলাকায় পাওয়া যায়নি। তাঁর বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। বৃহস্পতিবার রাতে ও গতকাল কয়েক দফায় আশিকুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
ওয়ারী থানার ওসির দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম আহমেদ বলেন, আশিকুরের বিরুদ্ধে খোঁজখবর করা শুরু হয়েছে। থানায় তাঁর বিরুদ্ধে কেউ চাঁদাবাজির অভিযোগ করেননি। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে মামলা থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি।
মহানগর ছাত্রলীগের দুই নেতার প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহারের পর কী ব্যবস্থা নিয়েছেন—জানতে যোগাযোগ করা হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্তে দোষী প্রমাণ হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সূত্র: প্রথম আলো