বুধবার, ১৪ই নভেম্বর, ২০১৮ ইং ৩০শে কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

ডেনিমে ডাকসাইটে


শীত কিংবা গ্রীষ্মে তারুণ্যের প্রথম পছন্দ ডেনিমের শার্ট, প্যান্ট, জ্যাকেট, ব্লেজারসহ আরো কত কী। এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের ডেনিম পোশাক।   

মডেল : আফরিনা তৃণ ও আজিম-উদ্দৌলা 

ষোড়শ শতকে জাহাজের খালাসিরা ডেনিমের প্যান্ট পরত। তরুনদের মধ্যে জনপ্রিয়তা বাড়ে পঞ্চাশের দশকে, যখন চিত্রতারকারা ডেনিমের প্যান্ট পরতে শুরু করেন। আর এখন সব বয়সীরাই ডেনিমের পোশাক পরছেন।

সব কিছু ডেনিমে

ডেনিমের পোশাকের সূচনাটা হয়েছিল ছেলেদের প্যান্ট দিয়ে। পরে এলো শার্ট। এখন ছেলে-মেয়ে উভয়ের প্যান্ট-শার্ট তো বটেই, ফুল ও শর্ট স্লিভ জ্যাকেট, ব্লেজার, হুডি, কুর্তি, ফুল স্লিভ স্কার্ট, ফতুয়া থেকে শুরু করে হাল ফ্যাশনের কটি-সবই ডেনিম দিয়ে। একটা সময় ভাবা হতো, ডেনিম পোশাক শুধু তরুণদের। সে ধারণাও বদলেছে। এখন সব বয়সীর জন্যই আছে ডেনিমের পোশাক। সেইলর ব্র্যান্ডের হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার রেজাউল করিম বললেন, 'পরতে আরাম। ক্যাজুয়াল ও ফরমাল দুটো লুকেই এই পোশাক মানিয়ে যায়। এবার শীত ফ্যাশনের ট্রেন্ডটাও ডেনিমকে ঘিরেই।'

রকমসকম

আগে ডেনিম মানে ছিল মোটা আরামদায়ক ফেব্রিকস। কিন্তু এখন পাতলা ডেনিমের চাহিদাই বেশি। ফেব্রিকের ভিন্নতা এমনকি এর ওয়াশিং বা ডাইংয়ের ভিন্নতাও ডেনিমে নিয়ে এসেছে বৈচিত্র্য। যেমন ওয়াশড ডেনিম, অ্যাসিড ওয়াশড ডেনিম, ডারটি ওয়াশড ডেনিম, ভিনটেজ ডেনিম, ডিস্ট্রেসড ডেনিম। এসবের মধ্যে ডিস্ট্রেসড ডেনিম তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়। পছন্দের ডেনিম প্যান্ট বা শার্টের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে বড় ধরনের ছেঁড়া তৈরি করে এই ডিস্ট্রেসড লুক দেওয়া হয়ে থাকে। কখনো কখনো এই ছেঁড়া হতে পারে এক পরত সুতা উঠিয়ে তৈরি, আবার কখনো বা তিন দিক থেকে কেটে একটা পকেটের মতো করে তৈরি করা।

ডেনিমে ডাকসাইটে    1.1_285679_0 (1)

প্যান্ট

বাজার ঘুরে নন-ব্র্যান্ড ও ব্র্যান্ড শপগুলোতে দেখা গেল বিভিন্ন ফিটিং ও সাইজের ডেনিমের বুটকাট, স্ট্রেইটকাট, কমফোর্ট ফিট, স্লিম ফিট প্যান্ট। আবার কোমরের কোন অংশ থেকে পরা হচ্ছে, তার ওপর ভিত্তি করেও রয়েছে ভিন্নতা। এদের মধ্যে রয়েছে লো রাইজ, সুপার লো রাইজ, রেগুলার রাইজ, হাই ওয়েস্ট প্যান্ট ইত্যাদি। আমবার লাইফ স্টাইলের ডেনিম ম্যানেজার আবু সাজ্জাদ মো. সোহেল বললেন, 'বুট কাট, স্লিম ফিট, লো রাইজ প্যান্টই বেশ চলছে। আর মেয়েদের ন্যারো, সেমি-ন্যারো, স্ট্রেটকাট, বুটকাট, স্কিনি প্যান্টের চাহিদা বেশি।'

 

শার্ট, ফতুয়া, কুর্তি, জ্যাকেট, ব্লেজার, হুডি ও কটি

ইয়োলোর ডিজাইনার অর্পিতা সমাদ্দার বললেন, 'পকেট, কলার, প্লেট, কাপড় ইত্যাদির ব্যবহারে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে ডেনিম শার্ট, ফতুয়া ও কুর্তিতে। হাফ হাতা ও ফুল হাতা দুই ধরনের শার্টই চলছে। কিছু শার্টে বুকের দুই পাশে দুটো পকেট তো আছেই, শার্টের নিচের অংশে দুই পাশে আছে আরো দুটো পকেট।'

কোনো শার্টের কেবল নিচের দুই পাশে দুটো পকেট। কোনোটা আবার সাধারণ শার্টের মতো একেবারে পকেটবিহীন। কিছু শার্টে প্লেট ব্যবহার করা হয়েছে, কিছু আছে প্লেটবিহীন।

আবার কিছু ফতুয়া মিলবে, যেগুলোতে হাফ প্লেট ব্যবহার করা হয়েছে। ফতুয়া ও কুর্তিতে শেডের ব্যবহার নজর কাড়বে। আছে বোতামের বৈচিত্র্য। কিছু শার্ট, ফতুয়া ও জ্যাকেট মিলবে, যেগুলোতে বেশ বড় বড় বোতামের ব্যবহার। মেয়েদের স্কার্টে স্ট্রেচ ফেব্রিক ব্যবহার করা হয়েছে।

 

কিছু আছে আবার গতানুগতিক বোতামের। কিছু শার্ট ও জ্যাকেট পাবেন, যেগুলোতে পকেটের ওপরের প্রান্তে দুই-তিন রকমের বোতাম দিয়ে নকশায় বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। কাফ কলারের শার্টের পাশাপাশি দেখা গেল বেন্ড কলারের ব্যবহার। ফুল ডেনিম ও ডেনিমের সঙ্গে আরো কিছু উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি হুডিও পাওয়া যাচ্ছে। আমবার লাইফস্টাইলের ডেনিমের ডিজাইনার শাহরিয়ার শাকিল বলেন, 'আমরা এবার ডেনিম ও ওভেনের ফিউশনে হুডি বানিয়েছি। এসব হুডিতে ছোট ছোট ক্যাঙ্গারু পকেট ব্যবহার করা হয়েছে। ড্রাই প্রসেসে তৈরি ডেনিম ব্লেজার শীতে আপনাকে রাখবে সুরক্ষিত। পার্টি পোশাক হিসেবে কটি আপনাকে নতুন লুক দেবে।' ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য আছে ডেনিমের কটি। এসব কটিতেও শেডের বিচিত্র ব্যবহার দেখা গেছে। কিছু কটি আছে হাতের নিচের অংশের দুই পাশে ভিন্ন রকমের শেড দেওয়া। মেয়েদের কটিতে লেয়ারের ব্যবহার করে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে।'

 

রঙের বাহার

শুরুতে ডেনিমে কেবল নীল রঙের আধিপত্য ছিল। কিন্তু এখন নীলেরও সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পার্পল, কালো, আসমানি, বেগুনিসহ নানা রং। আবার নীলের নানা শেডেরও ব্যবহার দেখা যায়। কোনো কোনো পোশাকে কয়েকটা রঙের সমন্বয় ঘটিয়ে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। কিছু প্যান্ট পুরোটা নীল রঙের, শুধু সামনে বা পায়ের হাঁটুর কাছাকাছি ছোট্ট একটা কালো পট্টি দেওয়া। কোনো শার্টে আবার বডির কাপড় একরকম, তো পকেটে ভিন্ন রঙের কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু শার্টে পকেট ও কাঁধের নিচে সামনের অংশে ভিন্ন রঙের কাপড় জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

ডেনিমে ডাকসাইটে

ডেনিমে আরাম

শীত-গ্রীষ্ম উভয় ঋতুতেই ডেনিমের পোশাক বেশ আরামদায়ক। গ্রীষ্মের খরতাপ থেকে ডেনিম কাপড় যেমন শরীরের ত্বককে রক্ষা করে, তেমনি শীতের দিনেও ডেনিম কাপড় ভেদ করে হাড় কাঁপানো বাতাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। নর্থ সাউথের বিবিএর ছাত্রী ইশরাত জাহান বললেন, 'ডেনিমের প্যান্ট ও ফতুয়া পরে

আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। বলিউড সুপার স্টার সালমান খান যেমন পরেন, তেমনি একজন সাধারণ মানুষও এই পোশাক পরেন। এটা সব সময়ের জন্য ফ্যাশনেবল।' র‌্যাম্প মডেল রাজ আরিয়ান বলেন, 'আগে শীতের সময় লেদারের জ্যাকেট পরতাম। এবার ডেনিমের হুডি জ্যাকেট পরব।' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফখরুল রবিন বললেন, 'ডেনিম কাপড় সহজে ময়লা হয় না। ফলে এটা অনেক দিন পরা যায়।'

 

যেখানে পাবেন

আমবার লাইফস্টাইল, সেইলর, এসটাসি, স্মার্টেক্স, ক্যাটস আই, ওটু, আর্টেস্টি, ওকোড, ইস্টওয়ে, ফ্রিল্যান্ডসহ বিখ্যাত ব্র্যান্ডের শো-রুমে পাবেন পছন্দের ডেনিম পোশাক। এ ছাড়া বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, গুলশান পিংক সিটি, নিউ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, বঙ্গবাজার, মিরপুরে বেশ কিছু দোকানে ব্র্যান্ড ও নন ব্র্যান্ডের ডেনিম পোশাক পাবেন।

দরদাম

ব্র্যান্ডের ডেনিমের প্যান্টের দাম পড়বে ১৮০০ থেকে ৬৫০০ টাকা, জ্যাকেট ২০০০ থেকে ৪০০০, ব্লেজার ২৫০০ থেকে ৪৫০০, শার্ট ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে। কটি পাবেন ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকায়, ফতুয়া ১৮০০ থেকে ২৫০০, আর কুর্তির দাম পড়বে ১৯০০ থেকে ৩২০০ টাকা। নন ব্রান্ডের প্যান্ট পাবেন ৩০০ থেকে ৯০০ টাকায়, শার্টের দাম পড়বে ৩৫০ থেকে ৯৫০ টাকা, জ্যাকেট পাবেন ৪০০ থেকে ১০০০ টাকায়।