সোমবার, ২৯শে অক্টোবর, ২০১৮ ইং ১৪ই কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

পঞ্চগড়ে শীতের আগমন

পঞ্চগড় প্রতিনিধি : প্রকৃতিতে সবে হেমন্ত শুরু। কিন্তু এখনই শীতের বেশ আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এবার একটু আগেই শীতের দেখা মিলছে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। দিনে মেঘলুপ্ত সূর্যের খরতাপ আর রাতে কুয়াশার সাথে সাথে বইছে হিমেল হাওয়া। ঋতু বৈচিত্র্যের এই খেলা উপভোগ করছে এখানকার মানুষ।

ঋতু পরিক্রমায় পৌষ-মাঘে শীতের দেখা মিললেও পঞ্চগড়ে শীতের দেখা পাওয়া যাচ্ছে একটু আগেই। শহরের চেয়ে গ্রাম এলাকায় শীত একটু বেশি অনুভূত হচ্ছে। বেলা ডোবার সাথে সাথে ঠাণ্ডা নেমে আসে। মাঝে মাঝে উত্তুরে হিমালয় থেকে ঠাণ্ডা বাতাস ভেসে আসে। সেই সঙ্গে হালকা কুয়াশায় ঝাপসা হয়ে আসছে চারপাশ।

রাত বাড়ার সাথে সাথে গ্রামের রাস্তা ঘাটে পথচারীদের চলাচলও কমে আসে। টিনের চালায় টুপ টুপ করে অবিরাম পড়ছে কুয়াশার ফোটা। ঠাণ্ডায় কাঁথা কম্বল গায়ে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমাতে হয়। সকালে হালকা কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় পথঘাট। গাছে গাছে লতা পাতা আর ঘাসের ওপর ঝরছে শিশির বিন্দু। বকের সারি নদীর হাঁটুজলে মাছ শিকারে ব্যস্ত। শিশির ভেঙে চাষি ছুটে যান সবুজ ধানের ক্ষেত্রে। রোদের আলোয় ঘাসের ওপর ঝরে পড়া শিশির বিন্দু চকচক করে ওঠে।

শীতের আগমনী বার্তায় প্রস্তুতিও শুরু করেছে এ এলাকার মানুষ। বস্তাবন্দি রাখা গরম কাপড় বের করতে শুরু করেছে। সন্ধ্যায় হাঁটে মাঠে বাটে জমছে চায়ের আড্ডা। শীতের পিঠার পসরাও বসতে শুরু করেছে। শীতের এই সময়টি উপভোগের দারুন সময় বলে মনে করেন অনেকে। তবে দিনের বেলায় শীতের ঠিক উল্টোটাই ঘটছে এ জেলায়। সকালে সূর্যের তাপ কিছুটা কম থাকলেও দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সূর্যের তাপ পৌঁছে যায় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনার সাথে মানিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে স্থানীয়দের। অনেকেই আবার অসুস্থও হয়ে পড়ছেন।

আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাও নিচ্ছেন অনেকে। গত বছর পঞ্চগড়ে গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। এবার শীতের প্রকোপ আরো বাড়তে পাড়ে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

পঞ্চগড় সদর উপজেলা টুনিরহাট এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দিনত অইদত রহা যায় না, আতিত ফের কাঁথা নিবার হছে। শীতকাল কহিবেন না গরমকাল কহিবেন দোনখানে আছে।’

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার স্কুল শিক্ষক লিটন ইসলাম বলেন, ‘এই সময়ে সকালে শীত বেশ উপভোগ করার মতো। কিন্তু দিনে অস্বাভাবিক গরম থাকে। অনেক সময় গায়ে কাপড় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। আবার রাতে কাঁথা কম্বল ছাড়া থাকা যায় না।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে আবহাওয়া সহকারী রহিদুল ইসলাম বলেন, গত দুদিন ধরে পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা কমে যেতে শুরু করেছে। দিনে তাপমাত্রা যা থাকে রাতে তার অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসে। আজ শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পঞ্চগড় পরিবেশ পরিষদের সভাপতি তৌহিদুল বারী বাবু বলেন, ‘পঞ্চগড় হিমালয়ের খুব কাছে। তাই এখানে শীত একটু আগেই দেখা যায় এবং শীতের প্রকোপ একটু বেশি থাকে। তবে দিন দিন জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে প্রকৃতিতেও। তাই ঋতুচক্রও দিন দিন বদলে যাচ্ছে।’