মানব সৃষ্টির রহস্য কী?
আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মালেক: আল্লাহপাক সকল সৃষ্টির স্রষ্টা। তিনি মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত ও দাসত্ব করার জন্য। অন্য কারো ইবাদত ও দাসত্ব করার জন্য আল্লাহপাক মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেননি। সুতরাং মানুষের পক্ষে এটা কখনো বৈধ হবে না যে, সে আল্লাহকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত ও দাসত্ব করবে। পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতে আল্লাহপাক এই বিষয়টিকে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘জিন ও মানুষকে আমি শুধু এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার দাসত্ব করবে’ (সূরা : যারিয়াত, আয়াত : ৫৬)।
এই আয়াত পড়ে একজন সাধারণ পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আল্লাহপাক তো শুধু জিন ও মানুষের স্রষ্টা নন। তিনি সমগ্র বিশ্ব-জাহান ও তার প্রতিটি জিনিসের স্রষ্টা। কিন্তু এখানে শুধু জিন ও মানুষ সম্পর্কে কেন বলা হয়েছে যে, আমি তাদের আমার ছাড়া আর কারো দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করিনি? অথচ পুরো সৃষ্টির প্রতিটি অণু-পরমাণু শুধু আল্লাহর দাসত্বের জন্য। এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে পৃথিবীতে জিন ও মানুষই শুধু সৃষ্টি যাদের স্বাধীনতা আছে। তারা নিজেদের ক্ষমতা ও ইখতিয়ারের গণ্ডির মধ্যে আল্লাহপাকের দাসত্ব করতে চাইলে কিংবা তার দাসত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইলে নিতে পারে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যদের দাসত্ব করতে চাইলেও করতে পারে। জিন ও মানুষ ছাড়া এ পৃথিবীতে আর যত সৃষ্টি আছে তাদের এ ধরনের কোনো স্বাধীনতা নেই। তাদের আদৌ কোনো ক্ষমতা ও ইখতিয়ার নেই যে, তারা আল্লাহর দাসত্ব করবে না অন্য কারো দাসত্ব করতে পারবে। তাই এখানে শুধু জিন ও মানুষ সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা তাদের ক্ষমতা ও ইখতিয়ারের গণ্ডির মধ্যে তাদের নিজ স্রষ্টার আনুগত্য ও দাসত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে এবং স্রষ্টা ছাড়া অন্যদের দাসত্ব করে নিজেরা নিজেদের স্বভাব প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। প্রত্যেক মানুষেরই জানা উচিত যে, তাদের একমাত্র স্রষ্টা ছাড়া আর কারো দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। তাদের সোজা পথ হচ্ছে, যে স্বাধীনতা তাদের দেওয়া হয়েছে তার অন্যায় ব্যবহার করা যাবে না।
আলোচ্য আয়াতে ‘ইবাদত’ শব্দটিকে শুধু নামাজ রোজা এবং এ ধরনের অন্যান্য ইবাদত অর্থে ব্যবহার করা হয়নি। তাই কেউ এর এ অর্থ গ্রহণ করতে পারবেন না যে, জিন ও মানুষকে শুধু নামাজ পড়া, রোজা রাখা এবং তাসবিহ তাহলীল করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। এ অর্থটিও এর মধ্যে শামিল আছে, তবে এটা ইবাদতের পূর্ণাঙ্গ অর্থ নয়। ইবাদতের পূর্ণাঙ্গ অর্থ হচ্ছে, জিন ও মানুষকে আল্লাহ ছাড়া অন্যের পূজা, আনুগত্য, আদেশ পালন ও বিনীত প্রার্থনার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। বরং শুধু এক আল্লাহর আনুগত্য, আদেশ পালনের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।