শুক্রবার, ২৬শে অক্টোবর, ২০১৮ ইং ১১ই কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

‘জোড়া চশমা’ আগেও পরেছে বাংলাদেশ

ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ইনিংসেই শূন্য পেয়েছেন ফজলে মাহমুদ রাব্বি। টেস্ট ক্রিকেটে এক ম্যাচের দুই ইনিংসে শূন্য পেলে মজা করে বলা হয় জোড়া চশমা পেয়েছেন ব্যাটসম্যান। মজার ব্যাপার ক্যারিয়ারের শুরুর এমন চশমা বাংলাদেশ এর আগেও দেখেছেঅভিষেকের আগেই কঠিন দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ফজলে রাব্বির ঘাড়ে। সাকিবের শূন্যতা পূরণের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। কাজটা অসম্ভব বলে নিজেই স্বীকার করেছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। তবু কি চাপ এড়ানো যায়? এ চাপেই হয়তো অভিষেক ইনিংসটা মাত্র ৪ বল স্থায়ী হলো।

মিরপুরে গত রোববার শুরুতেই নেমে পড়তে হয়েছিল রাব্বিকে। তাঁকে করা চাতারার বলটাও বেশ ভালো ছিল। অভিষেকের স্নায়ুচাপের মুহূর্তে অমন ক্যাচ তুলে দেওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। বলটাও ছিল দুর্দান্ত রকমের ভালো। আর অভিষেকে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের শূন্য হাতে ফেরাটা তো খুব একটা বিস্ময়কর কিছু নয়। রাব্বিসহ ১৩জন ব্যাটসম্যান এমন দুর্ভাগা। বাংলাদেশের জার্সিতে ওয়ানডে খেলা খেলোয়াড়দের দশ শতাংশই রাব্বির দলে আছেন।

আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রাব্বি অবশ্য আরেকটু ‘নির্বাচিত’ দলে ঢুকে পড়েছেন। ২৪তম ওভারের শেষ বলে থেমেছে ১৪৮ রানের দুর্দান্ত উদ্বোধনী জুটি। ২৫তম ওভার পুরোটাই খেলেছেন ইমরুল কায়েস। পরের ওভারেই প্রথম ব্যাট করার সুযোগ মিলেছে রাব্বির। সিকান্দার রাজার ওভারের পঞ্চম বলটিতে কী মনে হলো, অনেকটা এগিয়ে এসে মারতে চাইলেন। কিন্তু বলের লাইন মিস করলেন রাব্বি। ব্রেন্ডন টেলর সে বল গ্লাভসে আটকাতে অনেক বেশি সময় নিয়ে ফেলায় একপর্যায়ে মনে হয়েছিল বেঁচে যাচ্ছেন রাব্বি। কিন্তু তা আর হয়নি, কোনোমতে বলটি নিয়ন্ত্রণে রেখেই স্টাম্প ভেঙে দিয়েছেন টেলর। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও শূন্য হাতে ফিরতে হলো রাব্বিকে। এবারের ইনিংসটা স্থায়ী হয়েছে পাঁচ বল। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ইনিংসেই শূন্য, রেকর্ড না হোক ব্যতিক্রমী কিছু তো বটে।

কিন্তু, না! বাংলাদেশের পক্ষে এমন কিছু এর আগেও দেখা গেছে, সেটিও তিনবার। ক্রিকেটে যখন বাংলাদেশের হাঁটি হাঁটি পা পা অবস্থা, তখন বাংলাদেশ দলে অভিষেক হয়েছিল হারুনুর রশিদের। ১৯৮৮ সালে দেশের মাঠের এশিয়া কাপের দুই ম্যাচ খেলেছিলেন এই ওপেনার। দুই ম্যাচ মিলে ১৭ বল খেললেও কোনো রান করা হয়নি তাঁর। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শূন্য গড়, শূন্য স্ট্রাইক রেট ও শূন্য রান নিয়ে শেষ হয়েছে তাঁর।

পেস বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাট হাতেও ভালো—এ তকমা নিয়ে আবির্ভাব হয়েছিল ডলার মাহমুদের। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ জেতানো একটি স্পেলও আছে এই পেসারের। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে যে দুইবার রান নিয়েছেন, দুবারই বলের চেয়ে রান বেশি করেছেন আক্রমণাত্মক সব শট খেলে। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতেই শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন ডলার। ২০০৮ সালে অভিষিক্ত ডলারের ৭ ম্যাচের ক্যারিয়ার স্থায়ী হয়েছে ২০০৯ সাল পর্যন্ত।

পেস বোলিং অলরাউন্ডার খোঁজার পথে সবচেয়ে বড় নাম জিয়াউর রহমান। বোলিংয়ের চেয়ে অবশ্য বড় বড় সব শট খেলার জন্য স্থানীয় ক্রিকেটে বিখ্যাত এই অলরাউন্ডার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এর ছিটেফোঁটা টের পাওয়া গেছে, কালেভদ্রে। জিয়ার ক্যারিয়ারের শুরুটাও ছিল বেশ হতাশার। ২০১৩ সালের শ্রীলঙ্কা সিরিজে প্রথম ম্যাচে গোল্ডেন ডাক পেয়েছিলেন। বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া পরের ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ। তৃতীয় ওয়ানডেতে টান টান উত্তেজনার মুহূর্তে নেমে দুই বলে শূন্য রান করে আরেকবার হতাশ করেছেন জিয়া।

একটি মজার তথ্য দেওয়া যেতে পারে। কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের ওয়ানডে ক্যারিয়ারও শুরু হয়েছিল জোড়া চশমা পড়ে। কিন্তু তিনি তাঁর ক্যারিয়ার কোথায় গিয়ে শেষ করেছেন, সেটি নতুন করে বলা এক ধরনের বাহুল্যই। ফজলে রাব্বি এই তথ্যটা মাথায় রাখতে পারেন। শুরুটা ভালো না হলেও ক্যারিয়ার তরতর করে এগিয়ে নেওয়ার উদাহরণটা তো থাকছেই। ১৪৮ রানের ওপেনিং জুটি উপহার দেন ইমরুল কায়েস এবং লিটন দাস। তবে কেউই সেঞ্চুরি পাননি। লিটন ঝড়ো ৮৩ রান করে আর ইমরুল ৯০ রানে আউট হয়ে যান।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে দলকে ভালো শুরু এনে দেন লিটন দাস এবং ইমরুল কায়েস। মারকুটে মেজাজে খেলা লিটনের বিপরীতে ইমরুল কিছুটা ধীরস্থির শুরু করলেও পরে হাত খোলেন। প্রথম ওভারে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া লিটন ৪৬ বলে ৮ চার ১ ছক্কায় তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি।

লিটনের পর ৫৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন ইমরুল কায়েস। ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল পার্টনারশিপ। জুটিতে ১৪৮ রান আসার পর ছন্দপতন হলো উইকেটের চারদিকে দৃষ্টিনন্দন সব শট খেলতে থাকা লিটন দাসের বিদায়ে। ৭৭ বলে ১২ চার ১ ছক্কায় ৮৩ রান করা লিটন সেঞ্চুরির আক্ষেপ জাগিয়ে সিকান্দার রাজার বলে ত্রিপানোর তালুবন্দি হলেন। তিন নম্বরে নেমে যথারীতি ‘ডাক’ মারলেন ফজলে রাব্বি। রবিবার অভিষেকেও ‘ডাক’ মেরেছিলেন তিনি।

মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে ইনিংস গড়ায় মনযোগ দেন ইমরুল কায়েস। সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে কি একটু চাপে ভুগছিলেন তিনি? নার্ভাস নাইন্টিতে গিয়ে সিকান্দার রাজাকে উড়িয়ে মারতে গেলেন। ব্যাটে-বলে টাইমিং না হওয়ায় ১১১ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৯০ রানের ইনিংসটির ইতি হলো চিগাম্বুরার তালুবন্দি হয়ে। দল তখন জয় থেকে ৩৬ রান দূরে। প্রথম ওয়ানডেতে ১৪৪ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেছিলেন ইমরুল।

বাকী কাজটা শেষ করে দেন মুশফিকুর রহিম এবং মোহাম্মদ মিঠুন। সিফাস জুওয়াওকে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মেরে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন মোহাম্মদ মিঠুন। ৫.৫ ওভার এবং ৭ উইকেট হাতে রেখে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা তৃতীয় সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ।

এর আগে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ২৪৬ রান তুলে সফরকারী জিম্বাবুয়ে। দলীয় ১৮ রানে সাইফউদ্দিনের স্লোয়ার অধিনায়ক মাসাকাদজার (১৪) ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। অধিনায়কের দ্রুত বিদায়ের পর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন অভিজ্ঞ ব্রেন্ডন টেইলর এবং সিফাস জুওয়াও। দুজনে মিলে গড়েন ৫২ রানের জুটি। ঘূর্ণিবলে জুওয়াওকে (২০) ফজলে মাহমুদের তালুবন্দি করে জুটি ভাঙেন মিরাজ।

কিন্তু অভিজ্ঞ ব্রেন্ডন টেইলরকে থামানো যাচ্ছিল না। তৃতীয় উইকেটেও তিনি উইলিয়ামসকে সঙ্গে নিয়ে ৭৭ রানের জুটি গড়েন। অবশেষে মাহমুদ উল্লাহর বলে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে থামে তার ৭৩ বলে ৯ চার ১ ছক্কায় ৭৫ রানের চমৎকার ইনিংস। সাইফউদ্দিনের দ্বিতীয় শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন শন উইলিয়ামস (৪৭)।

তবে হাত চালিয়ে খেলতে থাকেন সিকান্দার রাজা। চতুর্থ এবং পঞ্চম উইকেটে উইলিয়ামস আর মুরকে নিয়ে গড়া তার দুটি জুটিই ছিল ৪১ রানের। রাজাকে ৪৯ রানে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি করেন অধিনায়ক মাশরাফি। মুস্তাফিজ তার প্রথম শিকার ধরেন পিটার মুরকে (১৭) মেহেদি মিরাজের তালুবন্দি করে।এরপর আবারও সাইফউদ্দিন ঝলক। তার একটি শর্ট বলে এলটন চিগাম্বুরা (৩) পয়েন্টে ধরা পড়েন নাজমুল ইসলামের হাতে। শেষ ওভারের তৃতীয় বলে সহজ রান-আউট থেকে বেঁচে যান মাভুতা (৬)। পরের বলেই তাকে মুস্তাফিজের তালুবন্দি করেন সাইফউদ্দিন। কিন্তু রিভিউয়ে সেটা নট-আউট বলে প্রমাণিত হয়।

শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৪৬ রান তুলে সফরকারীরা। সাইফউদ্দিনের ৩ উইকেটের পাশাপাশি ১টি করে উইকেট নেন মাশরাফি, মুস্তাফিজ, মিরাজ এবং মাহমুদ উল্লাহ।