মাত্র ৯ বছর বয়সে স্কুলের প্রধান শিক্ষক! তারপর…
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা গ্রামের ছেলে, পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। নাম বাবর আলি। বয়স ৯ বছর। ছেলেটা রোজ স্কুল থেকে বাড়ি ফিরত। ফেরার সময় অবাক হয়ে দেখত তার সমবয়সী বন্ধুরা কাগজ কুড়িয়ে বেড়াচ্ছে। যে সময় ওই ছেলেটি পাঁচের ঘরের নামতা শিখছে, কিম্বা ছবি আঁকছে ঠিক সে সময়ে তার বন্ধুরা পনেরোটা ভাঙা বোতল দোকানে দিয়ে পাচ্ছে দেড় টাকা। ওদের টিফিন নেই, সহজপাঠ নেই।
কিন্তু তার মতো ওরাও স্কুলে যাবে না কেন? কেন পড়াশোনা করবে না? ও তো পড়ে। ওই বন্ধুরাই তো ওর সঙ্গে একসঙ্গে গাছে ওঠে, পুকুরে ঝাঁপ দেয়, লুকোচুরির সময় বলে ওঠে ‘পঞ্চাশ চোর’! তাহলে তারাই বা ওর সঙ্গে পড়বে না কেন?
পড়াশোনার মাধ্যমে বন্ধুদের আলোর কাছাকাছি নিয়ে আসবে বলে নিজেই ২০০২ সালে শুরু করে দিল একটি স্কুল! নাম- আনন্দ শিক্ষা নিকেতন। আর হয়ে উঠল তার নিজের স্কুলের হেডমাস্টার!
বাবর আলি বলেন, মাত্র আটজন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে শুরু করেছিলাম এই স্কুল। আসলে আমার বয়সী ছেলেমেয়েরা, আমার বন্ধুরাই কাগজ কুড়োবে, বিড়ি বাঁধবে আর আমি স্কুলে যাব, এটা ভাবতে পারিনি ওই বয়স থেকেই। একটা পেয়ারা গাছের তলায় বসে শুরু করেছিলাম স্কুল।
‘জানেন, নিজের স্কুলটা শুরু করার পর, যে স্কুলে আমি পড়তাম, ওখান থেকে চক নিয়ে আসতাম। কারণ, চক ছিল না তো আমাদের কাছে! কিন্তু, চক না থাকলে কি করে স্কুলে পড়াব বলুন? তাই নিয়ে আসতাম। আমার স্কুলের শিক্ষকরা ভাবত, বাবর একজন চক-চোর। পরে পুরো ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেলে তাঁরাই আমার স্কুলের জন্য কয়েক বাক্স চক দিয়ে দিয়েছিলেন, বলতে বলতেই বাবরের ধরে আসে গলা।
এই কাজে তাকে সবচেয়ে বেশি যারা সাহায্য করেছিলেন, তারা হলেন বানুয়ারা বিবি ও মোহম্মদ নাসিরুদ্দিন। বাবরের মা ও বাবা।
গত ষোল বছর ধরে এভাবেই বাবর পড়িয়ে গেছে পাঁচ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে। প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ পরে কোনও স্কুলের শিক্ষক বা শিক্ষিকা হয়ে ফের ফিরে এসেছেন ‘আনন্দ শিক্ষা নিকেতন’-এ।
সেদিনের সেই ৯ বছরের ছেলেটি এখন ভারতের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্য স্নাতক করা যুবক। এখন তার স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা পাঁচশোর কিছু বেশি।
তিনি বলেন, সরকার সব একা করবে তা তো হতে পারে না। এগিয়ে আসতে হবে আমাদের। প্রত্যেকে এভাবে একটু একটু করে এগিয়ে এলেই তো এই পৃথিবীটা আরও অনেকবেশি সুন্দরভাবে বদলে যেতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি