সেই ‘চিংড়ি বর’ কথা রাখেননি
ডেস্ক রিপোর্ট।। আনোয়ারায় বিয়ের আসরে খাবার তালিকায় চিংড়ি না পেয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটানো সেই ‘চিংড়ি বর’ কথা রাখেননি। গত ২৭ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিয়ের প্রীতিভোজে চিংড়ি না দেওয়ায় ভাঙচুর ও আকদ পড়া বউকে না নিয়ে পালিয়ে যায় বর মোহাম্মদ আলমগীর ও তার স্বজনরা। এরপর উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে গত সোমবার (১ অক্টোবর) সালিশি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক বরকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করে এবং সেই টাকা ৪ অক্টোবরের মধ্যে কনের ব্যাংক হিসাব নম্বরে ডিপোজিট করার সিদ্ধান্ত দেয়, যে সিদ্ধান্ত বর-কনের উভয়পক্ষ মেনে নেয়। সালিশী বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত শুক্রবার নববধূকে ঘরে তুলে নেওয়ার কথা থাকলেও শনিবার পর্যন্ত বর পক্ষ কোনো সিদ্ধান্তই কার্যকর করেনি বলে কনে পক্ষ অভিযোগ তুলেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর পক্ষের কথা না রাখা ও নানামুখি সামাজিক চাপে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন কনের পিতা মোহাম্মদ হোসেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
কনের পিতা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘এসব আর ভাল লাগছে না। তারা (বর পক্ষ) আমার মেয়ের জীবন নিয়ে তামাশা করছে। ছেলের বাবা জানিয়েছে সালিশি বৈঠকের সেই সব নিরাপত্তা ডিপোজিট তাদের দেওয়া সম্ভব নয়। এমনিতে মেয়ে তুলে দিলে তারা নেবে, না হয় নেবে না। এখন আমি কী করব বুঝে উঠতে পারেছি না। তারা কথা দিয়ে কথা রাখছে না। এখন মনে হচ্ছে বিয়েটা ভাঙ্গাভাঙ্গি হয়ে গেলেই আমার মেয়ের জন্য মঙ্গল হবে।’
এদিকে চিংড়ি মাছ নিয়ে বরের আচরণে বিয়ের আসর পণ্ড হওয়ার পর গত ১ অক্টোবর স্থানীয় বটতলী রুস্তমহাটে দু’পক্ষের অন্তত ৩০ জন আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতে সালিশি বৈঠক হয়। বৈঠকে স্থানীয় বটতলী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী এবং বরুমছড়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ছাড়াও বরের পিতা আবদুল মোনাফ, চাচা শেয়ার আলী, কনের বাবা মোহাম্মদ হোসেন, নানা আহমদ শফি, আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম, আলমগীর আজাদ, জসিম উদ্দিন, মোহাম্মদ বাবু, বিয়ের মধ্যস্থতাকারী নুরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সালিশী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার বউ ঘরে তুলে নেওয়ার কথা ছিল। তারা সেই সিদ্ধান্ত না মেনে খুব অন্যায় করেছে। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
অপর সালিশকার ও জুইদন্ডি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সালিশি বৈঠকের সিদ্ধান্ত অমান্য করার সুযোগ নেই। তাদের অনুরোধ করেছি অন্তত লাখ দু’য়েক টাকা যোগাড় করে যেন মেয়ের বাবার কাছে যায়। প্রয়োজনে বাকী টাকা পরিশোধের জন্য সময় নিতে পারত। তা না করে তারা আরো একটি অপরাধ করল।’
এ ব্যাপারে বর পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ২৭ সেপ্টেম্বর আনোয়ারা উপজেলার ১১নং জুইদন্ডী ইউনিয়নের ৮নং খুরসকুল গ্রামের হাজী বাড়ির আবদুল মোনাফের ছেলে মোহাম্মদ আলমগীর (৩০) সাথে একই ইউনিয়নের জুঁইদন্ডি গ্রামের মোহাম্মদ হোসেনের মেয়ের বিয়ে পরবর্তী অনুষ্ঠান ছিল। এর ১৮ দিন আগে ইসলামী শরিয়ত মতে তাদের আকদ সম্পন্ন হয়। বটতলী আলভী ম্যারেজ গার্ডেনে প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানে চিংড়ি মাছ না দেওয়ায় বিয়ের আসরে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে উভয় পক্ষের লোকজন। এক পর্যায়ে বর পক্ষ কনেকে না নিয়ে বিয়ের আসর ত্যাগ করে।