আমার যে জান বেরিয়ে যায়, তা কি সে দেখে?
ডায়াবেটিসে ভুগছেন সময়ের অন্যতম আলোচিত-সমালোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। এছাড়া বোনের আপ্যায়নে ওজন বেড়ে যাওয়ায়ও চিন্তিত তিনি।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে তসলিমা নাসরিন নিজের অ্যাকাউন্টে জানিয়েছে এমনটাই। তিনি লিখেছেন, আমার বোন আপ্যায়নের বেলায় একেবারেই প্রাচীনপন্থী। আমার মায়ের মতো। ওর কাছে থাকলে দুই সপ্তাহে ১০ পাউন্ড ওজন বাড়ে আমার। এক মাসে ২০ পাউন্ড।
এককালে মিষ্টি পছন্দ করতেন জানিয়ে তসলিমা বলেন, কোনো এককালে মিষ্টি পছন্দ করতাম বলে আমাকে প্রতিদিন ১০টা করে মিষ্টি খাওয়াবে। কবে একদিন দেখেছে একটি তেলেভাজা পছন্দ করে খেয়েছি। ব্যস, সারা দিন রান্নাঘরে আমার জন্য এটা ভাজছে, ওটা ভাজছে।
তসলিমা লেখেন, একদিন চিপসে একটা কামড় দিয়েছি, অমনি ১০ প্যাকেট চিপস কিনে আমার পাশে সাজিয়ে রেখেছে।
তসলিমা বলেন, কত বলি আমার ডায়বেটিস, কে শোনে কার কথা। আমার মাও নানার ডায়াবেটিস জেনেও নানাকে মিষ্টি খাওয়াত। এই যে আমার বোন প্রতিবারই ১০ পাউন্ড, ২০ পাউন্ড বাড়িয়ে দেয় আমার ওজন, এসব কমাতে আমার যে জান বেরিয়ে যায়, তা কি সে দেখে?
প্রসঙ্গত, তসলিমা নাসরিন একজন সাহিত্যিক ও চিকিৎসক। বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে একজন উদীয়মান কবি হিসেবে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করে তসলিমা এই শতকের শেষের দিকে নারীবাদী ও ধর্মীয় সমালোচনামূলক রচনার কারণে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন। তিনি তাঁর রচনা ও ভাষণের মাধ্যমে লিঙ্গসমতা, মুক্তচিন্তা, ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদ ও মানবাধিকারের প্রচার করায় ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীদের রোষানলে পড়েন ও তাঁদের নিকট হতে হত্যার হুমকি পেতে থাকায় ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ ত্যাগ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করতে বাধ্য হন। তিনি কিছুকাল যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছেন। বর্তমানে তিনি ভারত সরকার কর্তৃক ভারতে অজ্ঞাতবাসে অবস্থানের সুযোগ পেয়েছেন।
১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে তসলিমা ইসলামি ধর্মীয় আইন শরিয়া অবলুপ্তির মাধ্যমে কুরআন সংশোধনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এর ফলে ইসলামি মৌলবাদীরা তাঁর ফাঁসির দাবি জানাতে শুরু করে। তিন লাখ মৌলবাদী একটি জমায়েতে তাঁকে ইসলামের অবমাননাকারী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দালালরূপে অভিহিত করে।
দেশ জুড়ে তাঁর শাস্তির দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে জনগণের ধর্মীয় ভাবনাকে আঘাত করার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয় এবং জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গ্রেফতারি এড়াতে পরবর্তী দুই মাসে লুকিয়ে থাকার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয় এবং তসলিমা বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন।