শুক্রবার, ৫ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২০শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

খেলাধুলার প্রতি উৎসাহ দিয়েছিলেন রাসূল সা.

ইসলাম ডেস্ক।। মানুষের স্বভাবজাত চাহিদাগুলোর অন্যতম হলো খেলাধুলা। এই খেলাধুলাকে ইসলাম নিষেধ করে না। বরং ক্ষেত্র বিশেষ উৎসাহ দেয়। সাহাবি হযরত সালমা ইবনে আকওয়া রা. বলেন, একজন আনসারী সাহাবি দৌড়ে খুবই পারদর্শী ছিলেন। দৌড় প্রতিযোগিতায় কেউ তাকে হারাতে পারতো না। একদা তিনি ঘোষণা করলেন, আমার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে কেউ প্রস্থুত আছে কি? আমি রাসূল সা. এর নিকট এ ব্যাপারে অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দিলেন। এ প্রতিযোগিতায় আমি জয়ী হলাম। (সহীহ মুসলিম সূত্রে মাআরিফুল কুরআন: ৭/৮)

অন্য বর্ণনায় আছে, আবু জাফর ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে রোকানা তার পিতা প্রখ্যাত কুস্তিগীর রোকানা থেকে বর্ণনা করেন, একদা রোকানা মহানবি সা. এর সাথে কুস্তি খেলায় অবতীর্ণ হলে তিনি রোকানাকে পরাভূত করেন। (আবু দাউদ, হাদীস: ৪০৭৮; মাআরিফুল কুরআন: ৭/৮)

এক বর্ণনায় এসেছে, একদা কিছু হাবশি যুবক মদিনা মুনাওয়ারায় সামরিক কলাকৌশল অনুশীলনকল্পে বর্শা ইত্যাদি দিয়ে খেলা করতে ছিলেন। মহানবি সা. আম্মাজান আয়শা রা.কে নিজের পিছনে দাঁড় করিয়ে তাদের এ খেলা উপভোগ করাচ্ছিলেন আর তাদেরকে উৎসাহ দিয়ে বলতেছিলেন, তোমরা খেলাধুলা আব্যাহত রাখ। (বায়হাকী; কানজুল উম্মাল সূত্রে মাআরিফুল কুরআন: ৭/৮) অন্য বর্ণনায় এসেছে, আমি এটা পছন্দ করি না যে, তোমাদের ধর্মে শুষ্কতা ও কঠোরতা পরিলক্ষিত হোক। (প্রাগুপ্ত)

এক হাদীসে আছে- রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, তোমরা মাঝে মধ্যে (বিনোদন, খেলাধুলা কিংবা অন্য কোন বৈধ উপায়ে) হৃদয়কে বিশ্রাম ও আরাম দিবে। (আবু দাউদ সূত্রে মাআরিফুল কুরআন: ৭/৮)

সাহাবি হযরত ইবনে আব্বাসের বাচনিক মহানবি সা. ইরশাদ করেন, মুমিনের শ্রেষ্ঠ ও কল্যাণকর খেলা সাতারকাঁটা আর নারীর শ্রেষ্ঠ ও উপকারি খেলা সুতা কাঁটা। (মাআরিফুল কুরআন: ৭/৭)

বর্ণিত হাদীসগুলোর আলোকে এ কথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়, ইসলামের দৃষ্টিতে খেলাধুলা শুধু জায়েজই নয়; ক্ষেত্রবিশেষে তা প্রশংসিত ও পছন্দনীয় বটে। তবে এর সীমারেখা ও চৌহদ্দি অতিক্রম করা যাবে না এবং এ নিয়ে বাড়াবাড়িও করা যাবে না। কারণ, প্রত্যেক বিষয়ের একটি সীমারেখা আছে। যা লংঘিত হলে সাধারণ মুবাহ ও বৈধ কাজ তো অনেক পরের কথা; নেক আমল ও মুস্তাহাব কাজও জায়েজ থাকে না। বরং তা হয়ে যায় আপত্তি ও প্রতিবাদের উপযুক্ত।

বর্তমান সময়ে এই খেলাধুলার অবস্থা হয়ে গেছে- এখন তা আর শুধু খেলাধুলা নয়; বরং তা জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে পরিণত হয়েছে। এমনকি জীবনের অনেক প্রয়োজন ও বাস্তব সমস্যার চেয়েও তা বহুগুণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেন গোটা জাতির এটিই এখন একমাত্র কাজ! ফলে গোটা জাতি ও দেশ খেলাধুলার উন্মাদনায় বুঁদ হয়ে পড়েছে। অথচ এই সর্বগ্রাসী মত্ততা ও উন্মাদনা যে ব্যক্তিগত, জাতীয় ও পরকালীন জীবনের জন্য কি পরিমাণ ক্ষতিকর, সেটি কেউ তলিয়ে দেখে না।