যত কারণ ব্যাটিং বিপর্যয়ের
স্পোর্টস ডেস্ক।। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, ভুরুঙ্গামারী থেকে কক্সবাজার— স্বপ্নের ফাইনালের আগে সারা বাংলাদেশে একটাই স্লোগান ‘ট্রফি চাই’! ম্যাচের আগের দিন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও বললেন, ‘ট্রফি চাই’। ট্রফি জয়ের চাপে স্বপ্নের ব্যাটিং করেন লিটন দাস। কিন্তু অস্থির, চঞ্চলা হরিণী হয়ে ছন্দহীন হয়ে পড়েন মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, ইমরুল, মিথুনরা। অথচ এশিয়া কাপের গোটা আসরে এই চার ব্যাটসম্যানই ছিলেন ভরসা, আলোকিত। লিটন ছিলেন আঁধারে ঢাকা। কাল পারেননি মুশফিকরা।
তবে আলো ছড়িয়েছেন লিটন। শুধু তাই নয়, যে কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করে ইতিহাসের সোনালি পাতায় নিজের নাম লিখে নেন লিটন দাস ১২১ রানের দৃষ্টিকাড়া ইনিংস খেলে। বয়স ২৪ ছুঁই ছুঁই। দেখতে গাট্টাগোট্ট। মুখে চাপ দাড়ি। যেন বলিউড নায়ক! কাল ‘টিনএজ সেনসেশন’ লিটন ধুন্ধুমার ব্যাটিং করে মন কেড়ে নিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। ব্যাটকে মুগুর বানিয়ে লং অন, লং অফ, ড্রাইভ, পুল, সুইপে চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন উইকেটের চারদিকে। তামিম নেই। উদ্বোধনী জুটিতে রানও নেই। আগের ম্যাচগুলোতে যেখানে সর্বোচ্চ ১৬, সেখানে নতুন কিছুর স্বপ্ন দেখা আকাশ ছোঁয়ার মতোই। কিন্তু সঙ্গীদের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে অধিনায়ক মাশরাফি ব্যাটিং অর্ডার একটু উলট-পালট করে লিটনের সঙ্গী হিসেবে পাঠিয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজকে।
তাতেই বাজিমাত। আফগানিস্তান ম্যাচে রশিদ খানকে আটকাতে দেশ থেকে উড়িয়ে খেলানো হয়েছিল ইমরুল কায়েসকে। ইমরুল দুর্দান্ত ব্যাটিং করে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করেছিলেন শতভাগ। গতকাল ওপেনারদের ব্যর্থতা কাটাতে লিটন-মিরাজকে পাঠিয়েও শতভাগ সফল। দুই তরুন তুর্কি ২০.৫ ওভার ব্যাটিং করে ভারতের বিপক্ষে রেকর্ড গড়েন উদ্বোধনী জুটিতে। দুজনেরই ১২০ রানের জুটি ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৫ সালে মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে তামিম ও সৌম্য ১০২ রানের জুটি গড়েছিলেন মাত্র ১৩.৫ ওভারে। ওই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন দুজনেই। গতকাল সৌম্য খেললেও ইনজুরিতে তামিম এখন দেশে। সৌম্য ব্যাটিং করেন ৮ নম্বরে! লিটন খেলেন ১১৭ বলে ১২১ এবং মিরাজ ৫৯ বলে ৩২।
লিটনের অভিষেক ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে। অভিষেক ইনিংসটি ছিল ৮ রানের। পরের দুটো ইনিংস ছিল ৩৪ ও ৩৬ রানে। ওই দুই ইনিংসই ভবিষ্যৎ তারকার আগাম বার্তা দিয়েছিল। কিন্তু ১৭ ম্যাচে লিটনের ব্যাট থেকে বেরোয়নি কোনো হাফ সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ ৪১ রান। তাও আবার চলতি এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জীবন বাজির ম্যাচে। গতকাল দেখেশুনে পথ চলা শুরু করেন। দ্বিতীয় ওভারে বুমরাহকে বাউন্ডারি মেরে সেই যে শুরু, সেটা ধরে রাখেন আউট হওয়া পর্যন্ত। ইনিংসের অষ্টম ওভারে যুজবেন্দ্র চাহালকে দুই ছক্কা মেরে চমকে দেন ভারতীয় শিবিরকে। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটাতে থাকেন। ১৮ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন ৮৭ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায়।
প্রথম ৫০ রান করেন মাত্র ৩৩ বলে। গরমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেলতে থেকে দলীয় ১৮৮ রানের মাথায় স্ট্যাম্পিং হয়ে সাজঘরে ফিরেন ব্যক্তিগত ১২১ রানে। ১১৭ বলের নয়ন জুড়ানো ইনিংসটিতে ছিল ১২ চার ও দুই ছক্কা।
দুই ওপেনারের রেকর্ড জুটিকে কাজে লাগাতে পারেননি ইমরুল, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, মিথুন। চার ইনফর্ম ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে বেরোয় একত্রে ১৩ রান! ভাবা যায়! টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো ওয়ানডাউনে খেলতে নেমে ইমরুল লেগ বিফোর হয়েছেন ব্যক্তিগত ২ রানে। পাকিস্তানের বিপক্ষে অলিখিত সেমিফাইনালে মুশফিক খেলেছিলেন ৯৯ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। গতকাল কেদার যাদবকে অহেতুক পুল খেলে ডিপ মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দেন মুশফিক। ২০১৬ সালের টি-২০ বিশ্বকাপেও একইভাবে পুল খেলতে যেয়ে আউট হয়েছিলেন সাবেক অধিনায়ক। ‘মি. কনসিসটেন্ট’ খ্যাত মাহমুদুল্লাহও অহেতুক স্লগ শট খেলতে যেয়ে চাপে ফেলে দেন দলকে। রান আউট হন মিথুন। মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় চাপে পড়ে যান লিটন। ইনিংসের ৪১ ওভারের শেষ বলে যাদবের বলে স্ট্যাম্পিং হন লিটন। এরপর নেমে অধিনায়ক মাশরাফি ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই লিটনের পথে হাঁটেন।
রূপকথা লেখার ম্যাচে রূপকথার মতো ব্যাটিং করেছেন লিটন। কিন্তু ছন্দহীন ছিলেন অপরাপর ব্যাটসম্যানরা। তাই যত দূরে যাওয়ার কথা ছিল ইনিংসের, থমকে যায় তার আগেই। উৎস: বিডি-প্রতিদিন।