২৫ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দিলেন শিক্ষক, অতঃপর…
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার তিমিরকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৫ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিভাবকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক জাহেদা ইয়াসমিন।
গত মঙ্গলবারের এ ঘটনায় বুধবার বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার অভিভাবকদের বিদ্যালয়ে ডেকে ক্ষমা চেয়েছেন ওই শিক্ষক।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, গত মঙ্গলবার বিদ্যালয় চলাকালীন সময় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ২৫ শিক্ষার্থীর চুল কাঁচি দিয়ে কেটে দেন সহকারী শিক্ষক জাহেদা ইয়াসমিন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের চুল এমনভাবে কেটে দেয়া হয় যে পুরো মাথা ন্যাড়া করতে হয়েছে। বিষয়টি শিক্ষার্থীরা বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের জানায়। পরের দিন বুধবার অভিভাবকরা গিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাহমিনা বেগমের কাছে অভিযোগ করেন। প্রধান শিক্ষক বৃহস্পতিবার বিষয়টি সমাধানের জন্য বিদ্যালয়ে বৈঠকের আয়োজন করেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের খবর দেয়া হয়। বৈঠক শুরু হলে সেখানে উপস্থিত হন ঝালকাঠির সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম ও দপদপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছোহরাব হোসেন বাবুল মৃধা। চুল কেটে দেয়ার অপরাধে অভিভাবকদের সামনে শিক্ষক জাহেদা ইয়াসমিনকে তিরস্কার করা হয়। এ সময় নিজের ভুল শিকার করে অভিযুক্ত শিক্ষক ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
বৈঠকে শিক্ষক জাহেদা ইয়াসমিন জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাথার চুল অস্বাভাবিক বড় হওয়ায় কয়েক দিন ধরে কেটে আসতে বলা হয়েছিল। সর্বশেষ তাদের সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয় গত মঙ্গলবার। এরপরও শিক্ষার্থীরা চুল কেটে আসেনি। পরে তিনি কাঁচি এনে দুটি ক্লাসের ২৫ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন।
অভিভাবকরা জানান, নিজের সন্তানদের সময়মতো চুল কেটে দেয়া হয়। মাথায় অতিরিক্ত চুল না থাকার পরও শিক্ষক জাহেদা ইয়াসমিন শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দিয়ে মানবাধিকার লংঘন করেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের মনে আঘাত দিয়ে অন্যায় করেছেন। এ ঘটনার বিচার চেয়ে কয়েকজন অভিভাবক ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
তিমিরকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাহমিনা বেগম বলেন, আমার কাছে অভিভাবকরা জানানোর পরে আমি সমঝোতা বৈঠক করেছি। এ বৈঠকে আমাদের জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান ওই শিক্ষককে সবার কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছেন, শিক্ষক নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছেন।
ঝালকাঠি জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেয়ার অধিকার নেই কোনো শিক্ষকের। এটা অবশ্যই অন্যায়। শিক্ষক জাহেদা ইয়াসমিন ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি উপস্থিত অভিভাবকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। আমরা তাকে তিরস্কার করেছি। তারপরও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।