প্রবাসীরা সাবধানঃ বিশ্বাসে সর্বনাশ! দেখুন ভয়াবহ পরিনিতি…
কুমিল্লার নাছির উদ্দিন তিন বছর ধরে সিঙ্গাপুরে আছেন। তিন বছরের মধ্যে তিনি দেশে ফেরার ছুটি পাননি। তিনি সেখানে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। বাড়ির লোকজনের জন্য তার কষ্টার্জিত টাকায় স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোন কিনে রেখেছেন। কিন্তু দেশে পাঠাতে পারছেন না।
সিঙ্গাপুরে তার পরিচিত পারভেজ তাকে জানায়, সে বাংলাদেশে যাবে। ইচ্ছা করলে তার কাছে মালামালগুলো দিতে পারে। আর এজন্য অল্প কিছু খরচ দিলেই হবে। এতে নাছির রাজি হন। গত ২৯ আগস্ট সিঙ্গাপুর চেঙ্গি বিমানবন্দরে পারভেজের সঙ্গে দেখা করে নাছির তাকে ২টি সোনার পায়েল, ২টি সোনার ব্রেসলেট, ১টি সোনার নেকলেস, ৪টি সোনার চেইন, যার মূল্য আনুমানিক ৪ লাখ টাকা এবং ২টি আইফোন ১০ এক্স মোবাইল যার মূল্য ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেন।
এ ছাড়া খরচ বাবদ তাকে ৯ হাজার টাকা দেন। নাছির বাংলাদেশে তার শ্যালক সাগরকে বিষয়টি জানিয়ে রাখেন। ঢাকা বিমানবন্দরে যেন মালামালগুলো বুঝে নেয় পারভেজের কাছ থেকে। পারভেজ ওই দিনই রাত ১০টায় বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পারভেজ তার মোবাইল নম্বর থেকে সাগরকে ফোন করে।
সাগরকে বিমানবন্দর গোলচত্বরে থাকার জন্য বলে সে। সাগর অপেক্ষায় থাকে পারভেজের। রাত পৌনে ১২টায় গোলচত্বরের সামনে রাস্তার ওপর বসে একটি কাগজে মোড়ানো অবস্থায় মালামাল ও স্বর্ণালঙ্কার সাগরের হাতে তুলে দেয়। সাগর প্যাকেট খুলে দেখতে পায়, তার ভগ্নিপতির পাঠানো স্বর্ণালঙ্কারের সঙ্গে মিল নেই।
তখন সাগর পারভেজকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, বিমানবন্দরের ভিতরে কাস্টমস রেখে দিয়েছে। এই বলেই সাগরের হাত থেকে প্যাকেট নিয়ে তার ব্যবহূত প্রাইভেট কারে উঠে তাত্ক্ষণিকভাবে কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে সাগর বুঝতে পারে যে, সে প্রতারিত হয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত শুরু করে।
তারা সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাংলাদেশিদের মূল্যবান সামগ্রী আত্মসাৎকারী ছদ্মবেশী ওই প্রতারক ক্যারিয়ারসহ তার সহযোগী আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার পর পরই পিবিআই ঢাকা মেট্রোর একটি বিশেষ টিম গত ৪ আগস্ট তুরাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পারভেজ (৩২)-কে আটক করে।
আটক আসামির হেফাজত হতে প্রতারণার কাজে ব্যবহূত তার নিজনামীয় ২টি বাংলাদেশি পাসপোর্ট, ১টি সোনার নেকলেস, ৪টি সোনার চেইন, ২টি সোনার নূপুর, ২টি সোনার ব্রেসলেটসহ অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানায়, সিঙ্গাপুর প্রবাসী চাঁদপুর জেলার আসিফ, নওগাঁর আনোয়ার হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার সদরচর সৈয়দপুর এলাকার মো. দিদার, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানাধীন চরখাগরা এলাকার মো. ইমামসহ বিভিন্ন প্রবাসী বিভিন্ন তারিখে পারভেজের মাধ্যমে স্বর্ণালঙ্কার ও মূল্যবান সামগ্রী বাংলাদেশে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পাঠান।
পারভেজের কাছ থেকে প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজন মালামাল রিসিভ করার জন্য বিভিন্ন তারিখে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। বিমানবন্দরে দেখা করে প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজন মালামাল ও স্বর্ণালঙ্কার গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তারা বাসায় গিয়ে মালামালের প্যাকেট খুলে দেখতে পান স্বর্ণালঙ্কারগুলো নকল (এমিটেশনের)।
তারা পারভেজের মোবাইলে ফোন করলে ফোন নম্বরটি বন্ধ পান। পাসপোর্টে যে ঠিকানা উল্লেখ করা আছে সেখানে খোঁজ খবর নিয়ে ঠিকানাটি সঠিক পায় না। পরিবারের লোকজন পারভেজকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে তার কোনো সন্ধান পাননি। পরে তারা বুঝতে পারেন যে, পারভেজ একজন প্রতারক।