স্ত্রীর মান ভাঙাতে হেলিকপ্টার ভাড়া করেছিলেন সালমান শাহ
নব্বই দর্শকে ঢাকাই ছবির শ্রেষ্ঠ নায়ক বলা হয় সালমান শাহকে। সেসময় চিত্রপুরীতে তার আগমন ঘটেছিল ধূমকেতুর মতো। তিনি এসেই সকলের মন জয় করেছিলেন। মাত্র চার বছরে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন সালমান শাহ, যার বেশিরভাগই ছিল সুপারহিট।
ক্যারিয়ারে তুঙ্গে থাকা অবস্থায় সালমান রহস্যজনকভাবে মারা যান ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। তার মৃত্যুতে সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। আজও ভক্তদের মনে অমর হয়ে আছেন সিলেটের সন্তান সালমান শাহ। নায়কের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এই দিনে তাকে স্মরণ করছেন তার ভক্তরা।
সালমানের মৃত্যুর ২১ বছর পর গেল বছর জাগো নিউজের সঙ্গে মুখ খুলেন সামিরা। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন অনেক অজানা কথা। সালমানের মৃত্যু নিয়েও অনেক বিষয় তিনি আলোকপাত করেছিলেন। সেইসঙ্গে সালমানের প্রেম ও বিয়ে নিয়েও বলেছিলেন অনেক কথা। তারই কিছু অংশ নিয়ে এই আয়োজন-
কীভাবে পরিচয় হয়েছিলো সালমান শাহের সঙ্গে? সামিরা বলেন, ‘৯০ সাল। আমি ১৬ বছরের যুবতী। চট্টগ্রামে থাকি। চট্টগ্রাম ক্লাবে একটি ফ্যাশন শোয়ের আয়োজন করা হয়। সেখানে সালমান আমাকে প্রথম দেখে। তারপর মলি খালাকে নিয়ে আমার সঙ্গে পরিচিত হতে আসে। মলি খালাকে আমি চিনতাম। পরিচয়ের প্রথম কথাতেই সালমান আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বলে উঠলো- ‘তুমি তো খুব সুন্দর। আমার বউ তুমি’। এই শুনে আমি লজ্জায় লাল। ভাবলাম পাগল।
মলি খালা আমাকে আশ্বস্ত করলেন যে ‘ভয় পেও না। ও তোমাকে ভড়কে দিয়েছে। খুব দুষ্টু ছেলে।’ আমি পাত্তা না দিয়ে চলে আসি। কিন্তু পরদিন সকালেই সালমান আমাকে রক্ত দিয়ে লিখে একটি চিঠি লেখে। আমি অবাক হয়েছিলাম। বিকেলে আসে ফোন। মলি খালার কাছ থেকে ফোন নাম্বার নিয়েছিলো। আমি কথা বলতে চাইনি। কিন্তু সে কথা বলবেই। এভাবেই কথার শুরু।’
তিনি বলেন, ‘এরপর কেটে যায় মাস চারেক। টুকটাক কথা হতো। ওই বছরের অক্টোবরের ১৭ তারিখে সালমানের সঙ্গে প্রেম করতে রাজি হই আমি। এরপর থেকে সালমান শাহ প্রতি মাসের ১৭ তারিখ আমাকে ফুল দিত। এমন প্রেমিক কোথায় পাবো আমি? তখন সালমান শাহ টুকটাক নাটক করতো। ব্যস্ততা বাড়ছে। তবুও ব্যস্ততার মাঝে ফুল দিতে একটা দিনও ভুল হতো না, দেরি হতো না। আমাকে নিয়ে ওর পাগলামি ছিলো অন্য লেভেলের।’
সালমানের পাগলামি সম্পর্কে সামিরা আরও বলেন, ‘অনেক গল্প মনে পড়ে আমার। সব কিছু ভুলে থাকতে চাইলেও ভুলে থাকা যায় না। ওর মতো অসাধারণ সুন্দর মনের পুরুষ আমি আজও দেখিনি। সবাইকে বশ করে দিতো ও কথায়, হাসিতে। আমি যদি কখনো রাগ করেছি তো কতোভাবে যে মান ভাঙাতো। তার সব আইডিয়া ছিলো ইউনিক। সবখানেই সে ছিলো রুচিশীল আর স্মার্ট একটা মানুষ।
একবার মন খারাপ আমার। মন ভালো করতে বিয়েবার্ষিকীতে সালমান আমার জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া করেছিলো। এই ছিলো পাগলামি। আরেকটা কথা মনে পড়ে। এইসব কথা বলতে গেলে অনেক কথা বেরিয়ে আসে। সালমান শাহের আত্মহত্যার প্রতি ঝোঁক ছিলো। মৃত্যুর আগে সে আরও দুইবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে। এসব কথা কী ওর মা, ভাই, মামারা বলেন? কেন বলেন না? জিজ্ঞেস করুন কেন সালমান আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলো।
যাই হোক, প্রথমবার কেন ও আত্মহত্যা করলো সেটা আমি বলতে চাই না। কিন্তু দ্বিতীয়বার সে বিষ খেলো আমি বিয়েতে রাজি না হওয়ায়। ও চাইছিলো আমাদের বিয়ে হোক। কিন্তু আমার তখন ও লেভেল চলে। বললাম, পরীক্ষাটা শেষ হোক। আমি পালিয়ে বিয়ে করতে পারবো না। ব্যস, কেন পারবো না বললাম সেই রাগে সুইসাইড করতে চাইলো। আমি ওর ছোট ভাই বিল্টুকে ল্যান্ড ফোনে কল দিয়ে বললাম তোমার ভাই পাগলামি করেছে, ওকে দ্রুত হাসপাতোলে নিতে হবে। পরে সে আর তার বন্ধুরা মিলে সালমানকে হলি ফ্যামিলিতে নিয়ে গেল। হাসপাতালে এখনো রেকর্ড পাওয়া যাবে হয়তো।’
প্রথম একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার স্মৃতি নিয়ে সামিরা বলেন, ‘৯০ সালের ৩১ ডিসেম্বর আমরা দুজন একসঙ্গে বেড়াতে বের হই। সালমানের এক বন্ধু ছিলো তাজিব নামের। উনি গ্রীনরোডে থাকতেন। তার গাড়ি নিয়েই আমরা ঘুরতে বের হই। সেই অভিজ্ঞতা ছিলো আনন্দ-বেদনায় মেশানো। কারণ ঘুরতে গিয়ে আমরা বনানী টহল পুলিশের হাতে আটক হই। এতরাতে বিয়ে না করে কেন ঘুরছি সেটাই অভিযোগ। পরে আমার এক মেজর মামা আমাদের ছাড়িয়ে নেন।’
প্রেমের পর্ব চুকিয়ে ৯২ সালে বিয়ে হয় সালমান-সামিরার। সেই বিয়েতে মত ছিলো না সামিরার পরিবারের। প্রেমের টানে পরিবারের অমতেই সালমানের গলাতে বিয়ের মালা পরিয়েছিলেন সামিরা। দুই বছর পর অবশ্য ধুমধাম করেই জামাই বরণ করেছিলেন সামিরার বাবা শফিকুল হক হীরা ও মা লতিফুল হক লুসি।
সামিরা বলেন, ‘আড়ালে থেকে কেবল ২১টি বছর নানা কথা শুনে গেলাম। কী হয়েছে তাতে। সালমান কী ফিরেছে? ফিরেনি। তার মৃত্যু নিয়ে খেলা জমেছে, গুজব ছড়িয়েছে, আবেগের তীর দিয়ে মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে। আমার খুব কষ্ট হয় মরে গিয়েও সালমান সমালোচনা থেকে রেহাই পায়নি। তার জন্য দোয়া করবেন সবাই, সেটাই বেশি কাজে লাগবে।’