তারেক রহমান এগুচ্ছেন দুই কৌশলে!
ডেস্ক রিপোর্ট ।। অাগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুটি কৌশল নিয়ে এগুচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত দুদিনে অামাদের সময় ডটকমের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা বলে এ মনোভাবের কথা জানা গেছে। তবে কারান্তরীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার অাগ্রহে জিয়া পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম অর্থাৎ তারেক ও কোকোর কন্যাদের ধীরলয়ে দেশের রাজনীতির সাথে পরিচিত করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
এখন পর্যন্ত পরিস্থিতির নাটকীয় কোন মোড় না নিলে নির্বাচনে অংশ না নেবার ব্যাপারেই মত বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের। তবে একই সাথে সরকারী দলকে গত নির্বাচনের মতো ফাঁকা মাঠে গোল দেবার সুযোগ দিতেও নারাজ তারা।
বিএনপির থিংক ট্যাংক, দলের শীর্ষ সারির নেতারা অাসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহন করা-না করার ব্যাপারে নিজেদের যুক্তি ও বিশ্লেষন তুলে ধরেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে।
গত দুদিনে লন্ডনে অবস্থানরত ও তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সাথে কথা বলে এমন অাভাস মিলেছে।
তারেক রহমানের ঘনিষ্ট নেতারা বলেছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার সাথে সাথে সংবাদ সন্মেলন করে বিএনপির পক্ষে, অবাধ,সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি, খালেদা জিয়ার মুক্তি সহ কয়েকটি সুস্পষ্ট দাবী দাওয়া তুলে ধরা হবে। এসব যৌক্তিক দাবী দাওয়া পূরন না হলে কৌশলের অংশ হিসেবে একেবারে শেষ মুহুর্তে নির্বাচনে না যাবার ঘোষনা দেবে দলটি।
তবে,অাগামী নির্বাচন নিয়ে দলের মূল ষ্ট্রাটেজি মিডিয়াকে জানিয়ে দিতে নারাজ নেতারা। তারা বলছেন, অাগেভাগে দলের নির্বাচনে অংশ নেবার ব্যাপারে পরিকল্পনা জানিয়ে দিলে সরকার পাল্টা কৌশল নেবার যথেষ্ট সময় পাবে। অন্যদিকে, নির্বাচনে অংশ না নেবার ঘোষনা এখনই দিয়ে দিলে মাঠের নেতাকর্মীরাও চুড়ান্ত হতাশায় পড়বেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সহ-সম্পাদক বলেন,” এ সরকারের অধীনে এখন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহন করা মানে পাচঁ জানুয়ারীর নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া। তাহলে তখন সবচেয়ে ভ্যালিড কোয়েশ্চন দাঁড়াবে, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে কেন দল অংশ নিল না। ঐ নির্বাচনে অংশ নিলে তো অাজ খালেদা জিয়ারও জেলে থাকবার কথা ছিল না। অার এখন পর্যন্ত যে পরিবেশ দেশের, সেখানে নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া, সব দলের প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টির কোন অাবহ বা সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় ২১ অাগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হবে শিগগির। সরকার নির্বাচনের অাগে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে চাইবে না, বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশলের অংশ হিসেবেই। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেবার মানে হবে সরকারের ফাদেঁ পা দেয়া।
ঐ নেতা পাল্টা প্রশ্ন করেন, নির্বাচনে অংশ নিলেই সরকার যে বিএনপিকে অন্তত গুটিকয়েক অাসন নিয়ে বিরোধী দলের অাসনে বসতে দেবে, এতটুকু ফ্রি ফেয়ার পরিবেশের নিশ্চয়তা কোথায়?
লন্ডনে অবস্থানরত অারেক নেতা বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহন প্রশ্নে একটি বড় বিষয় হলো সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনাগ্রহ। বিএনপির মনোনয়নে তিন চারবার সাংসদ মন্ত্রী হয়েছেন, এমন বহু নেতারা এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে অনাগ্রহী। এরকম সিনিওর নেতারা নিজেদের অবস্থান তারেক রহমানের কাছে ব্যাখ্যা করেছেন। নেতাদের অনেকে লন্ডনে এসে তারেক রহমানের সাথে দেখা করে, অনেকে ফোনে দেশ থেকে তারেক রহমানের সাথে যোগাযোগ করছেন। এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অনাগ্রহের কারন হিসেবে তারা বলছেন, সব অাসনে সরকারী দলের নেতারা দুমেয়াদে সরকারে থাকার সুযোগে ব্যাবসা বানিজ্যে বিস্তর সুবিধা নিয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি ওয়ান ইলেভেনের সময় থেকে সরকারের বাইরে থাকায় মাঠের নেতারা মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত। দলের সাবেক সাংসদ থেকে শুরু করে সাবেক মন্ত্রীরাও এ সরকারের অামলে নিজেদের ব্যাবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে তুমুল রোষানলের শিকার হয়েছেন। এমন বাস্তবতায় প্রবল ঝুকিঁ নিয়ে নির্বাচনে গেলেও নির্বাচন সুষ্ঠ হবে এমন নিশ্চয়তা নেই। বরং এখন বাড়ী ঘরে থাকা নেতাকর্মীরাও তখন নতুন নতুন মামলায় এলাকাছাড়া হবেন।
অার অন্য কারনটি হলো, বিএনপি সরকার গঠন করার কোন ধরনের প্রতিযোগীতামূলক পরিবেশের নিশ্চয়তা না থাকলে এসব একাধিকবারের এমপি, মন্ত্রীরা জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে এতটা ঝুকিঁ নিয়ে নির্বাচনে জিতে অাসলেও ‘শুধু একটি বিরোধীদলের’ এমপি হতে চান না। শতাধিক অাসনে বিএনপির জরিপে জনপ্রিয় ও উইনিং ক্যান্ডিডেট এসব জৈষ্ঠ্য
নেতাদের ব্যাক্তিগত মত, এমপি হলেও স্থানীয় প্রশাসন চলবে সরকারী দলের সরকারী দলের নির্দেশনায়। সংসদে যাবার সুযোগ পেলেও এলাকা বা দলের জন্য কাজ করার সুযোগ থাকবে না। বরং তখন তাদের অবস্থা হবে অনেকটা এখন বিএনপির মনোনয়নে জিতে অাসা উপজেলা চেয়ারম্যানদের মতো। সিলেটে গত সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর জিতে অাসা সম্পর্কে তারেক রহমানের ঐ ঘনিষ্টজন বলেন, সদ্য সমাপ্ত সিলেট সিটি নির্বাচনে অাওয়ামীলীগ প্রার্থী হেরে গেলেও সরকার অনেকভাবে জিতেছে। তুলনামুলক সুষ্ঠ নির্বাচনের যেমন মোটামুটি একটি নজির সিলেটে নির্বাচন কমিশন দেখিয়েছে। একই সাথে সিলেটের নির্বাচন নিয়ে সরকার জামায়াত শিবিরের দীর্ঘদিন ধরে ফেরারী নেতাকর্মীদের মাঠে নামার সুযোগ দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত জামায়াত যেমন চট্রগ্রামের পর নিজেদের ঘাঁটি হিসেবে বলে অাসা সিলেটে নিজেদের নাজুক অবস্থানের প্রমান পেয়েছে। তেমনি সিলেট সিটি নির্বাচন নিয়ে সারাদেশে ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কে প্রবল তিক্ততা ও দুরত্বের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন তৎকালীন ও বর্তমান মেয়র অারিফুল হক চৌধুরীকে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিমকে মনোনয়ন দিতে ব্যাক্তিগতভাবে অাগ্রহী ছিলেন, সে প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি, এই অাইনজীবি নেতাসহ তারেক রহমানের ঘনিষ্টজন হিসেবে লন্ডনে পরিচিত কোন নেতাই।
অাগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে দল ভেঙ্গে যাবার কোন সম্ভাবনা অাছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা
বলেন, এত কিছুর পরও বিএনপি এখনো ঐক্যবদ্ধ অাছে। দল ভাঙ্গার তো কম চেষ্টা হয় নি। নির্বাচনকে ঘিরেও হবে। তবে এ ব্যাপারে বিএনপি হাইকমান্ড বা সরাসরি করে বললে তারেক রহমানের কোন দুর্ভাবনা বা টেনশন নেই। কারন, প্রথমত, তিনি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সর্বচ্চো চেষ্টা করছেন। বিএনপি অাগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে উদ্বুত পরিস্থিতিতে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখাই তার নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অতীতে দলের সাথে যারা বেঈমানী করেছেন, তারা কর্মীদের কাছে এখনো অপমানিত হচ্ছেন। ওয়ান ইলেভেনে দলের সিদ্বান্তের বাইরে যাওয়া নেতারা তো নিজেদের পরিনতি দেখেছেন। অার এখন বিএনপির ষ্ট্রাটেজী হল, যাই ঘটুক, যতজনকে নিয়ে হোক দলকে ধরে রাখা। অার টানা তিন মেয়াদে এ সরকার যদি ক্ষমতায় অাগামীতে বসেও অার্ন্তজাতিক ও অাঞ্চলিক বিশ্বরাজনীতির সমীকরনেও তারা বেকায়দায় থাকবে। কারন বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে সরাসরি অাগ্রহী পাশ্ববর্তী শক্তিগুলোও নিজেদের স্বার্থে তখন চাইবে না সরকার ভালো চলুক। অার তখন সময়ের প্রয়োজনে অাওয়ামীলীগও এক ধরনের এক্সিট চাইতে বাধ্য হবে।
তারেক রহমান লন্ডনে বসে দল পরিচালনায় কী করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমানের একজন উপদেষ্টা বলেন, কূটনৈতিক উদ্যোগ তো দৃশ্যমান হয় না। সবকিছু গনমাধ্যমে বলা সম্ভবও না। এ মুহুর্তেও তারেক রহমানের একজন উপদেষ্টা যিনি দলের যুক্তরাজ্য শাখার সাবেক সাধারন সম্পাদক ( ব্যারিষ্টার এম এ সালাম) দলের হয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। প্রখ্যাত অালোকচিত্রী শহিদুল অালমের বিষয়ে নোবেল লরিয়েটরা বিবৃতি দিয়েছেন। সাম্প্রতিক ছাত্র অান্দোলন সহ বিভিন্ন ঘটনা য বিশ্বের বড় গনমাধ্যমগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে। সরকারকে বহিঃবিশ্বে চাপে রাখতে চাইছে বিএনপি, এটা তো সরকার বলছেই। সরকারের অন্যায় কাজগুলোর ব্যাপারে বিএনপি দেশে বিদেশে জনমত গঠনে কাজ করছে।
তিনি অারো বলেন,তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশনায় বিএনপির বেশ কয়েকটি টীম লন্ডন থেকে নীরবে কাজ করছে। তারেক রহমান বেলজিয়াম,মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন। বিশ্বজুড়ে সরকারের নেতিবাচক কর্মকান্ড তুলে ধরার পাশাপাশি নানামুখী কর্মকান্ডের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে রাজনৈতিকভাবে করনীয় সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছেন তারেক রহমান। এর সাথে অারাফাত রহমান কোকোর কন্যা জাহিয়া রহমান সহ জিয়া পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মকে দেশের রাজনীতির সাথে পরিচিত করবার তাদের পারিবারিক প্রচেষ্টাও চলছে।
একই সাথে শেষ মুহুর্তে সরকারী দল যাতে ফাঁকা মাঠে গোল না দিতে পারে সেজন্য পরিস্থিতি বিবেচনায় সুযোগ কাজে লাগাতে এরই মধ্যে তিনশ অাসনে প্রার্থী তালিকা চুড়ান্ত করে রেখেছে দলটি।
যুক্তরাজ্য বিএনপির টানা ১৭ বছরের সভাপতি ছিলেন মাহিদুর রহমান। গত তিন মেয়াদে বিএনপির কেন্দ্রীয় অার্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে অাছেন তিনি। অাগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহনের প্রশ্নে তিনি মঙ্গলবার বলেন, অামি নিজে মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) অাসন থেকে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।বিএনপি নির্বাচনমুখী, ভোটের রাজনীতি করা বৃহত্তর বড় দল। অামরা অবশ্যই নির্বাচনে যেতে চাই। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী দলের প্রধান, বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক রাজনৈতিক মামলা দিয়ে অামাদের নির্বাচনে যাবার পথ বন্ধ করা হচ্ছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। যে নির্বাচনে ফলাফল অাগেই নির্ধারিত এমন কোন পাতানো খেলায় বিএনপি অংশ নেবে কিনা সেটা হাইকমান্ডের চুড়ান্ত সিদ্বান্তের ব্যাপার। গত সিটি নির্বাচনগুলো সহ বিভিন্ন নির্বাচনে বিএনপি দেখেছে সেখানে সচ্ছতা ছিল না।
এ নেতা অারো বলেন, এত বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে জেল জুলুম সহ্য করেও বিএনপির প্রতি মানুষের জনসমর্থন ধরে রাখতে পেরেছে দলটি। অাগামীতেও পারবে। উৎস: আমাদের সময়.কম।