বিমসটেকে মোদি-শেখ হাসিনার বৈঠক হবে, থাকছেন না সুচি
নেপালে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে চাপে থাকা মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি এ সম্মেলনে থাকছেন না।তার পরিবর্তে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট। বৃহস্পতিবার কাঠমান্ডুতে এই সম্মেলনে আঞ্চলিক এই জোটভুক্ত সাত দেশের নেতারাও অংশ নেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর নেপাল সফর সামনে রেখে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বুধবার ঢাকায় এক ব্রিফিংয়ে বলেন, সম্মেলন অংশ নেয়ার পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলাদা বৈঠক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ হবে।বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে রওনা হবেন শেখ হাসিনা।
কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী ঈশ্বর পোখারেল এবং নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশরাফি বিনতে শামস।বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হবে হোটেল সোয়ালটি ক্রাউনি প্লাজায়। এই সফরে প্রধানমন্ত্রী সেখানেই থাকবেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, সম্মেলনের উদ্বোধনে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর স্বাগত বক্তব্যের পরপরই বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এই সম্মেলনে জোটের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিমসটেক গ্রিড যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা এবং ফৌজদারি ও আইনি বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে দুটি সমঝোতা স্মরক সই হতে পারে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট বিমসটেকের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে না, কারণ এই জোটের মূল লক্ষ্য হল অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা।তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, এই সম্মেলন থেকে আমাদের একটি বড় অর্জন হবে গ্রিড কানেকটিভিটি নিয়ে এমওইউ। মিয়ানমারসহ সব সদস্য দেশ ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একমত হয়েছে।
জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জাতিগত নির্মূল অভিযানকে যুদ্ধাপরাধ বলে বিবেচনা করছে। এর পর বড় ধরনের আন্তর্জাতিক চাপে রয়েছে মিয়ানমার।এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছে, শান্তির, সমৃদ্ধির, টেকসই বে অব বেঙ্গলের লক্ষ্যে।
বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন বা বিমসটেক হল বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী সাত দেশের একটি জোট।বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড ১৯৯৭ সালে ব্যাংকক ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ উদ্যোগের সূচনা করে। পরে মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান বিমসটেকে যোগ দেয়।ভৌগলিকভাবে দক্ষিণ এশিয়াকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করেছে বিমসটেক, কাজ করছে সার্ক ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃআঞ্চলিক সহযোগিতার একটি সেতুবন্ধ হিসেবে।
এবারের বিমসটেক সম্মেলনের মূল পর্বে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা খুব বেশি না থাকলেও রিট্রিট সেশনে নেতৃবৃন্দের আলোচনায় বিষয়টি আসতেই পারে।একটি যৌথ ঘোষণার মধ্য দিয়ে সম্মেলনটি শেষ হবে। নেপালের কাছ থেকে বিমসটেক চেয়ারের দায়িত্ব পাবে শ্রীলঙ্কা।বিমসটেকের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বর্তমানে কাঠমান্ডুতে অবস্থান করছেন। আর মঙ্গলবার সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।
শেখ হাসিনা সফরের প্রথম দিনই নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং তার দেয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। রাতে সম্মেলনে আসা নেতাদের সম্মানে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শার্মা ওলির দেয়া নৈশভোজেও তিনি যোগ দেবেন।সফর শেষে শুক্রবার দুপুরে দেশে ফেরার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার।