পানি নিয়ে ওয়াসায় মাসে ৮ শতাধিক অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক: মোহাম্মদপুরের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন সাঈদ আল মামুন। বেশ কিছুদিন থেকে তাঁর বাসায় পানির সংকট। বাড়ির মালিককে একাধিকবার জানিয়েও সমস্যার সমাধান হয়নি। পরে ঢাকা ওয়াসার কল সেন্টারে (১৬১৬২) ফোন করে অভিযোগ করেন। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কোনো প্রতিকার পাননি, তবে দুই দিনের মধ্যেই অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
ঘটনাটি গত জানুয়ারি মাসের। ওয়াসার এই সেবায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সাঈদ বলেন, ‘ওয়াসার কোথায় কার কাছে অভিযোগ করা যায়, এ নিয়ে একটি দ্বিধা ছিল। কল সেন্টার থাকায় অভিযোগ জানানোর বিষয়টি অন্তত সহজ হয়েছে।’
এভাবে কল সেন্টারের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসার কাছে প্রতিমাসে অন্তত ৮০০টি অভিযোগ জমা পড়ছে। ঢাকা ওয়াসার দাবি, এসব অভিযোগের অধিকাংশেরই সমাধান করা হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার সেবার মান বৃদ্ধি ও নগরবাসীর অভিযোগ শুনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্দেশ্যে ২০১২ সালে কল সেন্টারটির উদ্বোধন করা হয়। এটি ওয়াসা লিংক নামেও পরিচিত।
যেকোনো মোবাইল অপারেটর থেকে ফোন করে ঢাকা ওয়াসার প্রতিটি মডস জোনের কার্যক্রম, রাজস্ব জোনের কার্যক্রম ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত তথ্য জানার পাশাপাশি এ-সংক্রান্ত অভিযোগ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন অপারেটর অনুযায়ী নিয়মিত কলচার্জ প্রযোজ্য হবে।
কল সেন্টারে কর্মরত একজন জানিয়েছেন, কল সেন্টারে ফোন করে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সরাসরি কথা বলে তথ্য জানা বা অভিযোগ করা যাবে। অন্য সময় গ্রাহকের অভিযোগ রেকর্ড হয়ে থাকবে। পরদিন সেটি নিয়ে কাজ করা হবে। তিনি বলেন, গ্রাহকদের কোনো অভিযোগ পাওয়ার পর কল সেন্টারে থাকা একটি সফটওয়্যারে অভিযোগের তথ্য নিবন্ধন করে রাখা হয়। এরপর অভিযোগটি ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে অভিযোগের অগ্রগতি জানতে চাইলে গ্রাহককে আবার ফোন করে জানতে হবে।
ঢাকা ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে কল সেন্টারে ৩ হাজার ৩৭৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। সেই হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে ৮৪৪টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৮৭টি অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
ওয়াসার কাছে তথ্য অধিকার আইনে জানতে চাওয়া হয়েছিল কোন ধরনের কতটি অভিযোগ করা হয়েছে? এর সুনির্দিষ্ট তথ্য সংস্থাটির কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। সংস্থাটি পানি না থাকা, পানির পাইপে ফুটো, ময়লা পানি, দুর্গন্ধ, বিল না পাওয়া, অতিরিক্ত বিল আসা, পানিনিষ্কাশনের নালা বন্ধ থাকা, নালা উপচে যাওয়াসহ ১৫ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
তবে ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, যেসব অভিযোগ আসে তার মধ্যে পানি না থাকা এবং পানিতে গন্ধসংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যাই বেশি।
ওয়াসা লিংকের এই সেবা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থাটির পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি, যাতে গ্রাহকেরা উত্তম সেবা পান।’ অভিযোগের সংখ্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, ঢাকায় ওয়াসার ৩ লাখ ৭৮ হাজার পানির সংযোগ রয়েছে। সেই তুলনায় প্রতি মাসে আসা অভিযোগের সংখ্যা ১ শতাংশের কম। তারপরও গ্রাহকের অভিযোগের সংখ্যা যাতে আরও কমে আসে, সে লক্ষ্যেই ওয়াসা কাজ করছে।