শুক্রবার, ৫ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২০শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

মেঘনায় চলছে দখলের মহোৎসব, হুমকিতে ৩ সেতু

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: আশুগঞ্জে মেঘনা নদীতে চলছে দখলের মহোৎসব। নদী তীরের আশুগঞ্জ বন্দরের পাশের সবটুকু এলাকা এখন চলে গেছে প্রভাবশালীদের দখলে। কেউবা অপরিকল্পিতভাবে জেটি নির্মাণ করেছে। আর জেটিগুলো দিয়ে প্রতিদিন জাহাজ থেকে নামানো হচ্ছে সারসহ বিভিন্ন পণ্য। কেউবা আবার সরাসরি বালু ফেলে দখলে নিচ্ছে নদীর তীর এলাকা।

এতে করে নদীর নাব্যতা নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে মেঘনা নদীর উপর তিনটি সেতুর কয়েকটি পিলারের সঙ্গে বলগেটের মালবাহী জাহাজ বাঁধার কারণে হুমকির মুখে রয়েছে তিনটি সেতুর কয়েকটি পিলাল। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

অভিযোগ রয়েছে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব অবৈধ দখলে সহায়তা করছেন বিআইডব্লিউটিএ এর আশুগঞ্জে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মকর্তা। প্রশাসন থেকে বার বার উদ্যোগ নিলেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের মেঘনা নদী এই এলাকার ঐতিহ্যকে লালন করে। স্রোতবাহী নদী হিসেবে এর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। তবে বর্তমানে জেলার আশুগঞ্জ অংশের তীর থেকে শুরু করে নদী পর্যন্ত চলছে দখলের মহোৎসব। প্রতিনিয়ত বন্দর এলাকায় নদীতে চলছে নতুন নতুন বাঁশের জেটি নির্মাণ। পাশাপাশি বালু দিয়েও ভরাট করা হচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকা। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রায় অর্ধশত বাঁশের জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। আর জেটিগুলো দিয়ে প্রতিদিন জাহাজ থেকে নামানো হচ্ছে সারসহ বিভিন্ন পণ্য।

মেঘনা নদীর উপর সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতু, শহীদ হাবিলদার আব্দুল হালিম রেলসেতু ও নবনির্মিত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান রেলসেতুর নিচের পিলারের সঙ্গে এই অবৈধ জেটিগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। আর সবগুলো সেতুর আশুগঞ্জ অংশে পিলারের সঙ্গে বাঁধা হচ্ছে মালবাহী বলগেট জাহাজ। এতে করে হুমকির মুখে রয়েছে পিলারসহ সবগুলো সেতু। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ নদী এলাকার দেখভাল করার কথা থাকলেও তাদের আশুগঞ্জ অফিস থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরেও রয়েছে অবৈধ কয়েকটি জেটি। কথিত রয়েছে এসব কাজে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সহায়তা করছেন বিআইডব্লিউটিএ এর আশুগঞ্জের কর্মরত কিছু অসাধু কর্মকর্তা। অবৈধ বাঁশের জেটিগুলো থেকে নিয়মিত টাকা তুলছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাদের কাছ থেকেই বিআইডব্লিউটিএ এর কর্মকর্তারা নিয়মিত মাসোহারা পান বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে প্রভাবশালীদের ভয়ে এসব বিষয়ে মুখ খুলছে না এলাকাবাসী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অবৈধ জেটির মালিক জানান, এসব জেটি বিআইডব্লিউটিএ এর কর্মকর্তাদের জানিয়েই করা হয়েছে। তারা এখান থেকে নিয়মিত মাসোহারা পান। তাই এগুলো উচ্ছেদ হোক এটা তারা চাননা। কখনোই তারা এ বিষয়ে নজরদারি করতে আসেন না।

আশুগঞ্জ বন্দরের পরিবহন ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রুমেল মুন্সি জানান, বন্দরের মূল জেটিতে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। শুধু অভিযান দিয়েই এ বিষয়টি রোধ করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ এর কর্মকর্তাদেরও এ বিষয়ে আরও নজরদারি বাড়াতে হবে।

বিআইডব্লিউটিএ এর আশুগঞ্জ-ভৈরব নদীবন্দরের উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বন্দরের পল্টুনে মাত্র দুটি জাহাজ ভিড়ে পণ্য খালাশ করতে পারে। তাই ঠিকাদাররা নিজেরাই এই অবৈধ বাঁশের জেটি নির্মাণ করে পণ্য খালাশ করছে। তবে মাটি দিয়ে কেউ যাতে নদী দখল করতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে অবৈধ জেটিগুলোর মালিকদের একটি তালিকা। অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ এর কোনো কর্মকর্তা আর্থিক লেনদেনের সঙ্গেও জড়িত নন বলে জানান তিনি।

আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি বাইন হীরা জানান, আশুগঞ্জে মেঘনা নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনাসহ তিনটি সেতু ঝুঁকিমুক্ত করতে বিআইডব্লিউটিএ এর সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই বিআইডব্লিউটিএ এর সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কেউ যাতে নতুন করে নদী দখল করতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর দখল হওয়া জায়গাগুলোও দখলমুক্ত করতে কাজ করা হচ্ছে।