শুক্রবার, ১৯শে অক্টোবর, ২০১৮ ইং ৪ঠা কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনের আগেই যে সুবিধা পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা

সরকারি চাকরিজীবীরা শিগগিরই বড় দুটি সুবিধা পেতে যাচ্ছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগেই তাদের গৃহ নির্মাণ ঋণ এবং বর্ধিত বেতন দিতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদনের পর এটি কার্যকর করা হবে। অপরদিকে, বেতন বৃদ্ধিসংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদন ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়া হয়েছে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বেতন বাড়ানো হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, বর্ধিত বেতন সমন্বয় করতে বাজেটে অতিরিক্ত পাঁচ হাজার ৩০২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা খাতে মোট ৫৮ হাজার ৫১২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ খাতে গত অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৫৩ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া গৃহ নির্মাণ ঋণ বাস্তবায়নে সুদ পরিশোধ (ভর্তুকি) খাতে ১৯শ’ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রেখেছে সরকার।

চলতি বাজেটে মোট ভর্তুকির অন্যান্য খাতে চার হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কারণ প্রস্তাবিত গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী সুদ হার হবে ১০ শতাংশ। এরমধ্যে ঋণ গ্রহীতার পাঁচ শতাংশ সুদ পরিশোধ করবে সরকার। এই সুদ সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে। অবশিষ্ট পাঁচ শতাংশ সুদ ঋণ গ্রহীতাকে পরিশোধ করতে হবে। এ কারণে এ বছর ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ বেশি রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, সরকারি চাকরিজীবীরা প্রতি বছর সাধারণ নিয়মে পাঁচ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন। এর বাইরে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বেতন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি নিয়ে কাজ চলছে।

তিনি বলেন, চাকরিজীবীদের স্বল্প সুদে গৃহ নির্মাণ ঋণ দেয়ার ঘোষণা বাজেটে দেয়া হয়েছে। এটিও খুব তাড়াতাড়ি পাবেন তারা।

জানা গেছে, চাকরিজীবীদের বেতন বাড়াতে পে-কমিশন গঠন না করে সরকার প্রতি বছর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য সরকার একটি কমিটি গঠন করে দেয়। এই মুহূর্তে বেতন কি পরিমাণ বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে যৌক্তিকতা তুলে ধরে কমিটি ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রীকে প্রতিবেদন দিয়েছে। পাঁচ শতাংশ মূল্যস্ফীতির ভিত্তি ধরে কমিটি হিসাব করেছে।

গড় মূল্যস্ফীতি পাঁচ শতাংশ ছাড়ালে বেতন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে। মূল্যস্ফীতি যদি আরও বাড়ে অর্থাৎ ৬ শতাংশ বা ৭ শতাংশ হয়, তখন কত শতাংশ বেতন বাড়বে তাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে কমিটি। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ হয়েছে। তাই এ প্রতিবেদনে কমিটি বার্ষিক পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সুপারিশ করেছে। প্রতি পাঁচ বছর পর পর পে-কমিশন গঠন না করে এর বিকল্প ভাবার সুপারিশ করেছে কমিটি।

বিকল্প হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি স্থায়ী সেল গঠন করতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বেতন বাড়ানো কমিটির প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। চাকরিজীবীরা যাতে সন্তুষ্ট হন সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ কারণে প্রস্তাবটি যোজন-বিয়োজন করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

গৃহ নির্মাণ ঋণ দেয়ার নীতিমালা তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সম্প্রতি পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালা নীতিগত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু এখন সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের আর প্রয়োজন হবে না।

ঋণ নীতিমালায় যা আছে: গৃহ নির্মাণ ঋণের সিলিং সর্বনিম্ন ২৫ লাখ ও সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ ২০ বছর মেয়াদি এই ঋণে বাড়ি নির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনা যাবে। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে এই ঋণ পাওয়া যাবে। সর্বোচ্চ ৫৮ বছর বয়স পর্যন্ত তা গ্রহণ করা যাবে।

এককভাবে বা গ্রুপভিত্তিক ঋণ নেয়া যাবে। জাতীয় বেতন স্কেলের ১৮ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাবেন। পঞ্চম থেকে প্রথম গ্রেডভুক্ত চাকরিজীবীরা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৭৫ লাখ টাকা এবং জেলা সদরে ৬০ লাখ টাকা এবং অন্যসব এলাকায় ৫০ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা পাবেন।

নবম থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত চাকরিজীবীরা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৬৫ লাখ টাকা, জেলা সদরে ৫৫ লাখ ও অন্যসব এলাকায় ৪৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের চাকরিজীবীরা পাবেন ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৫৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা এবং অন্যসব এলাকায় ৩০ লাখ টাকা। এছাড়া ১৪তম থেকে ১৭তম গ্রেডের চাকরিজীবীরা পাবেন ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৪০ লাখ টাকা, জেলা সদরে ৩০ লাখ টাকা ও অন্যসব এলাকায় ২৫ লাখ টাকা।