g মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ছে | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

সোমবার, ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ইং ২৭শে ভাদ্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ছে

AmaderBrahmanbaria.COM
সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৭

---

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে শুরু করেছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগের চেয়ে কঠোরতর সমালোচনা করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের। পশ্চিমা এবং এশিয়ার প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো রাখাইন রাজ্যের চলমান সংঘাত প্রশ্নে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রবল চাপের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে।

চলতি মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্যসহ একাধিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বক্তব্যে রাখাইনের সংঘাত ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি গুরুত্ব পাবে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়।

তবে মিয়ানমার সরকারের এ যাবৎ অনুসৃত নীতি থেকে সরে আসার লক্ষণ নেই। বরং রাখাইনে রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রচার চালিয়ে তারা আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও মিয়ানমারের এই প্রচার কতটা বিশ্বাসযোগ্যতা পাচ্ছে, তা পরিষ্কার নয়। অন্তত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। মিয়ানমার গণমাধ্যম ও ত্রাণকর্মীদের রাখাইনে ঢুকতে দিচ্ছে না।

জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ :সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্র জানায়, রাখাইনের সংঘাতময় পরিস্থিতির প্রতি নজর রাখতে এই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ মহাসচিবের দপ্তরে বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের ধরন কোনদিকে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিস্থিতি কতটা প্রকট হচ্ছে, সে সম্পর্কে নিয়মিত জাতিসংঘ মহাসচিবকে অবহিত রাখছে এই সেল। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও এই সেলে পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিদিনই হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বর্তমান জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তেনিও গুতেরেস মহাসচিবের দায়িত্বে আসার আগে ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ছিলেন। এই ১০ বছরে তিনি নিজে পাঁচবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেছিলেন। এ ছাড়া তিনি কমপক্ষে তিনবার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ কারণে রাখাইন রাজ্যে সংঘাত বিষয়ে মহাসচিব স্পষ্ট ধারণা রাখেন এবং সংবেদনশীল। নতুন করে সংঘাত সৃষ্টি হওয়ার শুরু থেকেই তিনি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন। তিনি নিজে রাখাইনে সংঘাত ও নির্যাতনের বর্ণনা সবিস্তারে তুলে ধরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলকে চিঠি দিয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দায়ী করা হয়। এ ছাড়া মহাসচিব গত ৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট ভাষায় বলেন_ ‘রাখাইন থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের সংবাদ প্রতি মুহূর্তে আসছে। এ অবস্থার অবসান না ঘটলে সেখানে উগ্রপন্থিরা আরও উস্কানি পাবে।’ তিনি রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘সভ্যতার পরিপন্থী’ হিসেবেও উল্লেখ করেন। তিনি দৃঢ় ভাষায় রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমেই কার্যকরভাবে সংঘাতময় পরিস্থিতির অবসান হতে পারে।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন।

ইইউ’র সমালোচনা :গত ২৪ আগস্ট রাখাইনে নতুন করে সংঘাত শুরুর পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আগের তুলনায় বেশি সমালোচনামুখর। গতকাল বৃহস্পতিবার ইইউ’র উচ্চ প্রতিনিধি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেডেরিকা মঘেরিনি এক বিবৃতিতে বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি এ মুহূর্তে অত্যন্ত ভয়াবহ এবং তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার দাবি রাখে।

তিনি বলেন, রাখাইনের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিরসনে অবশ্যই মিয়ানমার সরকারকে অ্যাডভাইজারি কমিশনের (কফি আনান কমিশন) সুপারিশ বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এ কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই রাখাইনে কার্যকরভাবে সংঘাত নিরসন সম্ভব। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যে চাপ বাংলাদেশকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে, তার প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণ সহানুভূতি রয়েছে এবং এ ব্যাপারে ইইউ যথাসম্ভব সহযোগিতা দেবে।

একই সঙ্গে মঘেরিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেন, রাখাইনে সীমান্ত পুলিশের ওপর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলার ঘটনায় ইইউ কঠোর ভাষায় নিন্দা জানায়। রাখাইন রাজ্যে নিরীহ সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় মিয়ানমার সরকারের গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপের প্রতি ইইউ’র সমর্থন থাকবে।

এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবিক সহায়তা ও সংকট ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিশনার ক্রিস্টোস স্টাইলান্ডিস এক বিবৃতিতে বলেন, রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার কর্মীদের প্রবেশ করতে না দেওয়ার কারণে সেখানে বিপন্ন মানুষের জন্য জরুরি সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ধরনের জরুরি মানবিক পরিস্থিতিতে এই মুহূর্তেই মানবাধিকার কর্মীদের বিপন্ন এলাকায় তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সব বিধিনিষেধ তুলে নিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

তিনি রাখাইন রাজ্যে বিবদমান সব পক্ষকে বেসামরিক নিরীহ মানুষের প্রতি নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে এরই মধ্যে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। বিবৃতিতে তিনি জোর দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।

প্রভাবশালী দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাচ্ছে :নিউইয়র্কের একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, রাখাইন রাজ্য থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ঘটনায় পশ্চিমা এবং এশিয়ার প্রভাবশালী দেশগুলোর মিয়ানমার সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গিতেও অনেকখানি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সূত্র জানায়, সপ্তাহে একদিন জাতিসংঘ নিরপত্তা কাউন্সিলের সাপ্তাহিক পর্যালোচনা বৈঠক হয়। সর্বশেষ বৈঠকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রাখাইন রাজ্যে অভিযান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর আগে এ ধরনের আলোচনায় চীন বরাবরই ভেটো দিয়েছে। তবে এবার চীনের পক্ষ থেকে আলোচনায় কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। এ আলোচনা থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, জার্মানির প্রতিনিধিরা রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। চীনের প্রতিনিধি আলোচনায় অংশ না নিয়ে নীরব ছিলেন।

এর আগে গত ৩০ আগস্ট জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত ম্যাথিউ রাইক্রফট মিয়ানমারের রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক আহ্বানের প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাব এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক বসার সম্ভাবনা নিয়েও ইতিবাচক তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্র জানায়।

অন্যদিকে চলতি মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় মহাসচিবের বক্তৃতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে রাখাইন পরিস্থিতি স্থান পাচ্ছে বলেও সূত্র জানায়। এ ছাড়া প্রভাবশালী একাধিক দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের বক্তব্যেও রাখাইন পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে স্থান পেতে পারে বলে সাধারণ পরিষদের প্রস্তুতির পর্যায় থেকে ধারণা পাওয়ার কথা জানায় সূত্র।

সূত্র জানায়, সার্বিকভাবে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে।

মিয়ানমারের উল্টো সুর :তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ বাড়লেও সুর বদলায়নি মিয়ানমার সরকারের। বরং রাখাইনে রোহিঙ্গাদের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার করছে ‘নিউ লাইট অব মিয়ানমার’সহ মিয়ানমারের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যমগুলো। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ‘বিকৃত প্রচার’-এর অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষের পালিয়ে বাংলাদেশে আসা সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করছেন না।

সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্র জানায়, মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের প্রতি নির্যাতনের বিষয় আড়াল করে বরং নিজেদের অর্থনৈতিক মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নেই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

এ জাতীয় আরও খবর