বুধবার, ১২ই জুলাই, ২০১৭ ইং ২৮শে আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ফেনী ছড়ার ভাঙনে জমি হারাচ্ছে বাংলাদেশ

AmaderBrahmanbaria.COM
জুলাই ১০, ২০১৭

---

নিজস্ব প্রতিবেদক : পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার প্রান্তভাগ ছুঁয়ে বলে চলা ফেনী ছড়ার অব্যাহত ভাঙনে কৃষকরা যেমন একদিকে সর্বাশ্রান্ত হচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশও হারাচ্ছে মূল্যবান জমি হারাচ্ছে। এতে কমে যাচ্ছে বাংলাদেশে ভূখণ্ডের পরিমাণও। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছড়া রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ি জেলার চারটি উপজেলার সাথে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত থাকলেও সবচেয়ে বেশি সীমান্তপথ মাটিরাঙা উপজেলার সাথেই। এই উপজেলার ফেনী ছড়ার মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক সীমান্ত রেখা নির্ধারিত হয়েছে।

দুই দেশের পাহাড় আর সমতল মিলিয়ে দীর্ঘ সীমান্ত পথের ৪০ কিলোমিটারের দায়িত্ব পালন করছে ৪০ বিজিবির পলাশপুর জোন। কিন্তু বছরের পর বছর ফেনী ছড়ার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে মাটিরাঙার বিস্তীর্ণ জনপদ, হারিয়ে যাচ্ছে ফসলী জমি। ফলে কমে যাচ্ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ড।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাটিরাঙা উপজেলার আমতলী, দেওয়ানবাজার ও অযোধ্যা সীমান্ত এলাকায় চলতি বছরের আগাম বর্ষা থেকে ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে। সীমান্তের আমতলী বিওপি (বর্ডার আউট পোস্ট) এলাকায় গত একমাসে ফেনী ছড়ার বাংলাদেশ অংশে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিছু কিছু স্থানে ৫ থেকে ১০ একর পরিমাণ ফসলী জমিই ঢুকে গেছে ভারতের অংশে।

তবে যতদিন পর্যন্ত ক্রস বর্ডার টাস্কফোর্সের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত ছড়াগর্ভে বিলীন হওয়া জমির পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। বিজিবির উদ্যোগে কোথাও কোথাও ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ভাঙনরোধের চেষ্টা করা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না।

মাটিরাঙার কৃষক মো. শাহ এমরান, মো. মনির হোসেন ও শফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙনের ফলে দিনদিন বাংলাদেশের ভূখণ্ড ফেনী ছড়ায় তলিয়ে যাচ্ছে। এতে করে তাদের জমি কমে যাচ্ছে। ছড়ায় বিলীন হচ্ছে তাদের অনেক কষ্টে বোনা ফসল। ফি বছর চোখের পলকে ভাঙন বেড়ে চললেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

আমতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবদুল গণি বলেন, ‘অব্যাহত ভাঙনের বিষয়টি পলাশপুর জোন কমান্ডার ও মাটিরাঙা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি।’ বাংলাদেশের ভূখণ্ড রক্ষায় ছড়ার পাড় এলাকায় ব্লক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

মাটিরাঙা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বি এম মশিউর রহমান বলেন, ‘পলাশপুর বিজিবির মাধ্যমে ভাঙনের খবর পেয়ে আমি ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ছবিসহ জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছি। জেলা প্রশাসক ফেনীছড়া নদীর ভাঙনরোধে প্রকল্প প্রহণের সহায়তা চেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছেন। আশা করছি, খুব শীঘ্রই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’

পলাশপুর বিজিবির জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. খালিদ আহমেদ পিএসসি বলেন, ‘ফেনী ছড়ার ভাঙনের বিষয়টি বিজিবির সেক্টর-রিজিয়ন হয়ে সদর দপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নজরেও বিষয়টি আনা হয়েছে।’

বিজিবির উদ্যোগে দেওয়ানবাজার এলাকায় ভাঙনরোধে ব্লক স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভাঙতে ভাঙতে ছড়াটি বাংলাদেশের অনেক ভেতরে চলে এসেছে। অবিলম্বে ভাঙনরোধ করা না গেলে স্থানীয় কৃষকদের ফসলী জমি ভারতের পেটে চলে যাবে।’

ভাঙন মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সীমান্তের রামগড় অংশে গত কয়েক বছর ধরে কাজ করে এলেও মাটিরাঙা উপজেলার সীমান্তের কোনো পয়েন্টেই এখন পর্যন্ত কাজ করেনি। ফলে বিভিন্ন এলাকায় ফেনী ছড়ার মূল পাড়ের শক্ত মাটি সরে গিয়ে এখন ফসলী জমিতে এসে পড়েছে। ফলে ভাঙন এখন সাধারণ ঘটনা।

এ জাতীয় আরও খবর