গাজীপুরে বাবা-মেয়ের আত্মহত্যা : মূল আসামি গ্রেপ্তার
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় ধর্ষণের বিচার না পাওয়ায় ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে বাবা-মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনায় করা মামলার মূল আসামি ফারুককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আজ শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে র্যাবের পক্ষ থেকে পাঠানো এক খুদে বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
বার্তায় জানানো হয়, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বিকেল ৪টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
এর আগে গত ২৯ এপ্রিল শিশু মেয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পরও বিচার না পাওয়ায় শ্রীপুরে মেয়েকে নিয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন এক বাবা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন হজরত আলী মেয়ে আয়েশাকে নিয়ে শ্রীপুর রেলগেট এলাকার এন এন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পাশে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইনের পাশে পায়চারী করতে থাকেন।
সকাল ৯টার দিকে দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন ওই এলাকায় পৌঁছালে হজরত আলী প্রথমে তাঁর মেয়েকে চলন্ত ট্রেনের নিচে ছুড়ে ফেলে নিজেও ওই ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। এতে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই বাবা-মেয়ের মৃত্যু হয়।
জানা যায়, প্রায় ৩০ বছর আগে দিনমজুর হজরত আলী শ্রীপুর উপজেলার কর্নপুর ছিটপাড়ার হালিমাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর হজরত স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই হিসেবে থাকেন। অভাব-অনটনের সংসারের জোগান দিতে হালিমা ভিক্ষাবৃত্তি ও অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। নিঃসন্তান এ দম্পতি আয়েশাকে দত্তক নিয়ে লালন-পালন করতেন।
পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, ফারুক নামের এক বখাটে যুবক ঘটনার প্রায় দুই মাস আগে আয়েশাকে ধর্ষণ করে। থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ দেওয়া হলে ফারুক ও তার লোকজন হালিমা ও তার স্বামীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেন এ ঘটনার বিচারের দায়িত্ব নেন। কিন্তু কোনো মীমাংসা ছাড়াই তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দেন।
এ ঘটনার পর এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের বিরুদ্ধে শ্রীপুর মডেল থানায় গরু চুরির অভিযোগ করেন হালিমা। এ ঘটনারও মীমাংসা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে দায়িত্ব নেন ওই ইউপি সদস্য আবুল হোসেন। কিন্তু তখনো তিনি কোনো সমাধান করেননি।
হজরত আলী এ ঘটনার বিচারের জন্য তাগাদা দিলে এতে দুর্বৃত্তরা হালিমা ও তাঁর স্বামীর ওপর আরো বেশি ক্ষুব্ধ হয়। একপর্যায়ে তারা মারধর করার জন্য দা-লাঠি নিয়ে ২৮ এপ্রিল শুক্রবার দিনভর হজরত আলীকে খোঁজাখুঁজি করে এবং হুমকি দেয়। এতে তাঁর পরিবার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। শুক্রবার দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তরা হজরত আলীকে তাঁর বাড়িতে মারধর করে।
একপর্যায়ে গরু চুরি ও শিশু মেয়ে ধর্ষণের ঘটনার বিচার না পেয়ে এবং প্রভাবশালীদের নানা হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে আতঙ্কিত হজরত আলী ক্ষোভে ও অভিমানে পরদিন শিশু মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।