বঙ্গোপসাগরের গভীরে নতুন দ্বীপের সন্ধান, ‘বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড’
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে একটি নতুন দ্বীপের সন্ধান মিলেছে। অপার সম্ভাবনা নিয়ে সমুদ্রবুকে জেগে উঠেছে চর বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড। সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট, দুবলারচর ও লোনা পানির মাছের খনি সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের মাঝামাঝি বঙ্গোপসাগরের গভীরে জেগে ওঠা বিশাল ভুখণ্ডই বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড।
৭.৮৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট নতুন এই দ্বীপটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু দ্বীপের গবেষক অধ্যাপক মো. শহীদুল ইসলাম এ কথা বলেন।
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘দ্বীপটি প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৯২ সালে। মৎস্য শিকারি মালেক ফরাজীসহ দুইজন জেলে প্রথম এই দ্বীপে অবতরণ করেন। বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ ভক্ত হওয়ায় তিনি সেই সময়ই বঙ্গবন্ধু দ্বীপ নামে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। এরপর আর কোনো খবর ছিল না।’
শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট দেখে দ্বীপটি গবেষণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দুইজন সহকর্মীসহ ২৯ সদস্যের একটি দল নিয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি দ্বীপের উদ্দেশে আমরা রওনা হই। দ্বীপটি মংলা বন্দর থেকে অনেকটাই দূরে হওয়ার কারণে সেখানে আমাদের পৌঁছাতে তিন দিন সময় লাগে। দ্বীপটি নিয়ে ১৬ দিন গবেষণা করার পর আমরা ঢাকায় ফিরে আসি।’
গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে এই গবেষক জানান, ‘গত ২৫ বছরে দ্বীপের পরিধি অনেকটাই বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমানে দ্বীপের আয়তন ৭.৮৪ কিলোমিটার, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুই মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এই দ্বীপে সর্বমোট নয় কিলোমিটার লম্বা সাগর সৈকত রয়েছে। দ্বীপটিতে আমরা চোরাবালির চিহ্ন পাইনি। অন্যান্য সাগর সৈকতের তুলনায় এই সৈকতের পানি এতটাই স্বচ্ছ যে এখানে সহজেই ভয়হীনভাবে সাঁতার কাটা যায়।’
বঙ্গবন্ধু দ্বীপের এই গবেষক বলেন, ‘এই দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ লাল কাঁকড়া। দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন লাল রংয়ের সৈকত। এই সৈকতে আমরা বিশাল জঙ্গলের সন্ধান পেয়েছি। সেখানে আমরা গবেষণা করে কোনো সরীসৃপ পায়নি। সরীসৃপ বাদে আমরা সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি জীববৈচিত্রের সন্ধান পেয়েছি। তবে আমাদের গবেষণা স্বল্প পরিসর হওয়ায় পুরো জঙ্গলে পুঙ্খানুপুঙ্খানুভাবে গবেষণা করা যায়নি। আমরা যতটুকু অনুসন্ধান করেছি তাতে বাঘের কোনো চিহ্ন না পেলেও হরিণের চিহ্ন পেয়েছি।’
শহীদুল ইসলাম আরও জানান, ‘দ্বীপের গবেষণা বিষয়ে সব কাগজপত্র আমরা সরকারের কাছে দাখিল করবো। কারণ আমরা মনে করি অন্যান্য সাগর সৈকতের তুলনায় এই সৈকতের সৌন্দর্য কোনো অংশে কম নয়। এছাড়াও এই দ্বীপের আশপাশে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত কোনো মানববসতি নেই। যার কারণে এই দ্বীপটি অনেকটাই সুনসান। এজন্য সরকারি পর্যায়ে এই দ্বীপের আন্তর্জাতিক প্রচারণা প্রয়োজন। এমনকী দেশের মানুষও জানে না যে এই দেশে এত সুন্দর দ্বীপ রয়েছে।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘দেশের মধ্যে এত সুন্দর দ্বীপ আছে, তা আমার কাছেও অজানা ছিল। বেশ কয়েকদিন আগে গবেষকদের সঙ্গে বৈঠকে আমি এই দ্বীপের কথা জানতে পারি। এই দ্বীপে পর্যটক বাড়াতে হলে সরকারি পর্যায়ে প্রচার প্রচারণা প্রয়োজন। তবেই সেখানে পর্যটক আসবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাবির প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নিয়ামুল ইসলাম, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।