রবিবার, ৮ই জানুয়ারি, ২০১৭ ইং ২৫শে পৌষ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

ভারত, বাংলাদেশ ও চীনের বৈঠকে বসা উচিত : গ্লোবাল টাইমস

AmaderBrahmanbaria.COM
ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬

ইয়ারলুং জাঙবু (ব্রহ্মপুত্র) নদে চীনের ড্যাম নির্মাণ নিয়ে ভারতের নজরদারি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি এই নদের পানি ব্যবহারের চীনের উচ্চাকাঙ্খা কম নয়। এর ফলে ভাটিতে থাকা দেশ বাংলাদেশের উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এ নদের পানি সম্পদ ব্যবহার নিয়ে তিনটি দেশেরই উচিত একটি সহযোগিতামুলক একটি ফ্রেমওয়ার্ক গঠন করা এবং এ নিয়ে ভারত, বাংলাদেশ চীনের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠকের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
যার ফলে, এ নদে ড্যাম নির্মাণ ইস্যুতে ও পানিবিজ্ঞান বিষয়ক তথ্য ভাগাভাগি নিয়ে চীনের সঙ্গে যে চুক্তিটি চাইতে পারে ভারত। তার সাথে বাংলাদেশের উচিত হবে, ভারতের কাছ থেকে নিজের স্বার্থ রক্ষার একই রকম অধিকার রাখা।
২৬শে ডিসেম্বর চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র হিসেবে পরিচিত দ্য গ্লোবাল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এ রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পরই ভারতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। একই দিনে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নিয়ে সমঝোতায় ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে চায় চীন। উপরন্তু চীন তার ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড অথবা সিল্ক রোড কর্মসূচির দিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে পারে ব্রহ্মপুত্র ইস্যুকে। চীনের এই কর্মসূচির প্রধান সফলতা হলো বর্তমানে চলমান ‘চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর’।
উল্লেখ্য, তিব্বতে জন্ম নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদটি উত্তর-পূর্ব ভারতের ভিতর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারত এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায় নি। সাম্প্রতিক সময়ে নেপালে ব্যবসায়িক সুবিধা সৃষ্টি করতে সেখানকার রাজনৈতিক নেতাদের মাঝে সফলতার সঙ্গে প্রবেশ করেছে চীন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এতে ভারত সরকারের মাঝে পর্যাপ্ত সতর্কতা আসে নি। এখন তারা ব্রহ্মপুত্র নদ ইস্যুতে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে চাইছে। ওদিকে চীনের গ্লোবাল টাইমস-এর প্রতিবেদন বা মন্তব্য কলামকে আমলে নেয় কমিউনিস্ট পার্টি। সরকারের আইডিয়া ও আন্তর্জাতিক, বিশেষ করে এশিয়া অঞ্চলের কূটনীতি নিয়ে সংশয়সহ বিভিন্ন বিষয় এ পত্রিকার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
২৬শে ডিসেম্বর প্রকাশিত পত্রিকাটির রিপোর্টে বলা হয়, উজানে ইয়ারলুং জাঙবু নদ (ব্রহ্মপুত্র) কিভাবে চীন ব্যবহার করছে তা নিয়ে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আন্তঃদেশীয় নদ-নদীর নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় ল্যানকাং-মেকং কো-অপারেশন (এলএমসি) চুক্তি রয়েছে। ইয়ারলুং নিয়ে সমস্যা সমাধানে এলএমসি কৌশল সম্পর্কে ধারণা নিতে গবেষণা করতে পারেন কর্মকর্তা ও অভিজ্ঞজনরা।
গত শুক্রবারে কম্বোডিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে এলএমসিভুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বিতীয় বৈঠক। এর আওতায় রয়েছে ৬টি সদস্য দেশ। তারা হলো চীন, মিয়ানমার, লাওস, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম। ওই বৈঠক থেকে সব সদস্য দেশই সুফল পেয়েছে। আন্তঃদেশীয় বেশ কিছু নদ-নদীর প্রবাহিত হয়েছে চীন থেকে। তাই এ নদ-নদীগুলোর উজানে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে চীনের।
এমন নদী হলো ল্যানকাং-মেকং নদী। এখানে চীন নির্মাণ করছে পানিবিদ্যুত উৎপাদনের জন্য ড্যাম। এ নিয়ে চীনের সঙ্গে অন্য পাঁচটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এই বিরোধ থেকেই এলএমসি গড়ে উঠেছে। এই কৌশল সৃষ্টি করার পর শুধু যে মেকং নদীর পানি ব্যবহারে সমস্যার একটি টেকসই সমাধান হয়েছে তা-ই নয়, একই সঙ্গে এতে আঞ্চলকি অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা গতি পেয়েছে। ইয়ারলুং জাংবু নদের মতো আন্তঃদেশীয় নদ-নদী নিয়ে বিরোধ নিস্পত্তিতে এলএমসি হতে পারে একটি মডেল। এলএমসির ওপর ভিত্তি করে চীন তার ভাটিতে থাকা দেশগুলোর সঙ্গে বিরোধ মিটাতে বহুজাতিক সহযোগিতামুলক ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে তুলতে চায়। এ উদ্যোগে নুজিয়াং নদীর ওপর ড্যাম নির্মাণ নিয়ে জীববৈচিত্র নষ্ট হওয়ার বড় ধরনের যে উদ্বেগ আছে তার সমাধান হতে পারে। নুজিয়াং নদীটি তিব্বতের ভিতর দিয়ে প্রথমে মিয়ানমার, পরে থাইল্যান্ডের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

গ্লোবাল টাইমস থেকে নেয়া